গৌতম মণ্ডল, সম্পাদক#
@@ |
লিটল ম্যাগাজিন বা ছোটো পত্রিকার গড়ে ওঠার কথা, ১৬ ডিসেম্বর রবীন্দনগর (মহেশতলা) বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন বিষয়ক ওয়র্কশপে সম্পাদকরা যেমন জানিয়েছিলেন। |
আমাদের পত্রিকাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোচারণ স্টেশনের কাছাকাছি রাজগড়া গ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়। অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া একটা অঞ্চল। গোচারণ নামটা শুনলেই আপনাদের চোলাই মদের কথা মনে পড়ে। সেখান থেকেই আমার পত্রিকাটা প্রকাশিত হয়। যখন শুরু হয়েছিল, আমি সাহিত্যের মানুষ ছিলাম না। আমি মূলত নিজে এটা শেখার জন্যই শুরু করেছিলাম। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে একটা সংগঠন করেছিলাম, তাদের স্বাস্থ্যচর্চা-শরীরচর্চার জন্য। প্যারেড, পিটি, ক্লাবব্যান্ড এইসমস্ত করা হত। তার মধ্যে থেকে একটা ছেলে হঠাৎ একটা কবিতা লিখে এনে আমাকে দেখায়। সেটাই সূত্রপাত। মনে হয়েছিল, এই বিষয়টাকেও তো আমাদের কাজে যুক্ত করা যেতে পারে। সেইভাবে একটা দেওয়াল পত্রিকা শুরু করি। সেই দেওয়াল পত্রিকার সূত্রেই লেখালেখির জগতে আসা। যদিও আমাদের লেখালেখির একটা যোগাযোগ অন্যভাবে ছিল। আমার দাদা নাটক করতেন এবং নাটক লিখতেন। আমার ঠাকুর্দা একজন পদকর্তা ছিলেন। তিনি হরিনাম ইত্যাদি লিখতেন। মূলত ওই বাচ্চাগুলোকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পত্রিকা শুরু হল। সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে করতে এগিয়ে গেছি। একসময় দেওয়াল পত্রিকা চালাতে পারছি না। ঠিক মতো লেখা জোগাড় করতে পারছি না। তখন মনে হয়েছিল, যদি ছাপার অক্ষরে বেরোয় তাহলে হয়তো অনেকের উৎসাহ পাব। আমি মূলত আমার গ্রামের ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে এবং আমার নিজের কথা ভেবেই পত্রিকাটি শুরু করেছি। আমার অঞ্চল ছাড়িয়ে দূরে দূরে বিভিন্ন অঞ্চলে গেছি। আমার একটা সংগঠন আছে। যদিও সেটা খুবই নড়বড়ে। তার সঙ্গে সাহিত্যের মানুষের থেকেও বেশি বিভিন্ন ধরনের মানুষ — কেউ শিল্পী, কেউ গল্পকার — এমনকী ব্যবসা জগতের সঙ্গেও আমার যোগ রয়েছে।
আমি নিজে আর্থিকভাবে খুব দুর্বল। আমার সংগঠনও সেদিক থেকে দুর্বল। আমি এমন ঘটনাও দেখেছি, যাঁরা আর্থিক দুর্বলতা নিয়ে পত্রিকা করেছেন, পরবর্তীকালে চাকরি পেয়ে যখন তাঁরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হলেন, তখন আর তাঁরা এই জগতে থাকলেন না। আর্থিক দুর্বলতা থেকে গেছে বলেই হয়তো আমি এই জগতে রয়ে গেছি। যে কারণে বলছি, অর্থ শেষ কথা নয়। আঞ্চলিকভাবে কাজ করতে গিয়ে আমি সকলের কাছে যেতে পারছি এবং সকলে আমাকে সহযোগিতা করছেন। পারিবারিক ক্ষেত্রে, সম্পাদকদের একটু বুদ্ধি করে চলতে হয় এবং কূটনীতির আশ্রয় নিতে হয়। যেহেতু আমি আর্থিকভাবে দুর্বল, বাড়িতেও আমি একটা কূটনীতির আশ্রয় নিয়েছি। আমি আমার পেশাটাকেও এই পত্রপত্রিকার জগতের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছি। সেই কারণে আমার সুবিধা হচ্ছে। আমি কম্পোজ করছি, ডিটিপি করছি। এভাবে আমি বাড়িতেও বোঝাতে পারছি, আমি শুধু এসব করে সময় নষ্ট করছি না, আমি তোমাদের জন্য আর্থিকভাবেও কিছু করছি। আমি সাইকেলে করে, পায়ে হেঁটে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করি। লেখা সংগ্রহ, বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, পত্রিকা বিপননের কাজ যতটা সম্ভব খরচ বাঁচিয়ে করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বছরে আমার দুটো সংখ্যা বেরোয়। একটা শারদীয় সংখ্যা, বিষয়ভিত্তিক করি। একটা নববর্ষ সংখ্যা, সাধারণ লেখকদের জন্য রাখি। সে কারণে আমি সকলকে নিয়ে চলতে পারছি। প্রতি মাসের শেষ শনিবার আমরা একটা আড্ডার ব্যবস্থা করি। সেখানে সকলে আসেন, তাঁদের লেখা পাঠ করেন। তার মধ্যে দিয়ে আমার অনেক লেখা বাছাইও হয়ে যায়। আমি বেশি কিছু আশা করি না। আমার পত্রিকাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। এটাই আমার শক্তি।
Leave a Reply