সোমা সরকার, কোচবিহার, ২৫ এপ্রিল#
কোচবিহার শহরের দেবীবাড়ির যমুনা দিঘির পশ্চিম পাড়ে একটা বাড়িতে ভাড়া থাকি। ভূমিকম্পের সময় বাড়িতে শুধু আমি আর আমার চারমাসের মেয়ে ছিলাম। তখন প্রায় ১১টা বেজে চল্লিশ মিনিট। আমি বিছানায় বসে মেয়েকে খাওয়াচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি, আমার মাথার ওপর খেলনা দোলানো দড়িটা দুলছে। আমার গা শিউড়ে উঠল। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর দেখি বিছানা কাঁপছে। আমি ভাবলাম, ভূমিকম্প হচ্ছে না তো? মনে হলো আগে চাবি দিয়ে গ্রিলটা খুলি, কারণ পরে যদি গেট খুলতে না পারি?
তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে মেয়েকে কোলে নিয়ে গেট খুলতেই দেখি একজন দুজন লোক বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে চিৎকার করছে, ভূমিকম্প, ভূমিকম্প। আমার খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পাশের হাইড্রেনের জল দেখি খুব জোরে জোরে ধাক্কা খাচ্ছে। রাস্তার কয়েকজন ছেলেকে চিৎকার করে ডাকলাম, কেউ কিছু শুনতে পেল না। পাশের বাড়ির একজন দিদিকে বললাম, ‘আমার বাচ্চাটাকে একটু ধরো না।’ সেও কোনো সাড়া দিল না। তারপর আমি খালি পায়ে সামনের দেবীবাড়ির মাঠের দিকে তাড়াতাড়ি হেঁটে গেলাম। হাটতে গিয়ে আমার পা কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। মাঠে গিয়ে একটা দেওয়াল ধরে দাঁড়ালাম। সম্বিত ফিরতে দেখি, প্রবল হাওয়া বইছে। আমার চারমাসের কন্যা ঠাণ্ডায় কাঁপছে। ওকে কিছু দিয়ে ভালো করে না জড়িয়েই বেরিয়ে পড়েছি। সারাদিন মেয়ের অস্বাভাবিক কান্না চলল। সেটা অন্য দিন দেখতে পাই না।
Leave a Reply