সম্প্রতি সংবাদ সংগ্রহের কারণে যেতে হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর অঞ্চলের কিছু গ্রামে। উড়িষ্যা সংলগ্ন এই গ্রামগুলিতে কুর্মী আর আদিবাসীরাই মূলত গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে। আর গ্রামের গা ঘেঁষে রয়েছে শাল মহুলের জঙ্গল। গ্রামীন অর্থনীতি সাপ্তাহিক হাট নির্ভর। জঙ্গলের সম্পদ ও গরু-মুরগী-ছাগল প্রতিপালন বাদ দিলে চাষ বলতে বছরে একবার ধান আর বাবুই ঘাস। ফলে বেশিরভাগ জমিই ফাঁকা পড়ে থাকে সারা বছর।
পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় উপত্যকার সার-বিষ নির্ভর চাষের তুলনায় এখানে গোবর সারের প্রচলন বেশি। গরুর গাড়িতে করে গোবর সার নিয়ে এখন জমিতে ফেলা হচ্ছে। এর পরেও কিছু ইউরিয়া প্রভৃতি দিতে হবে বর্ষার ধান চাষে। বছর কুড়ি আগে এখানে ঢোকে সরকারি হাইব্রিড স্বর্ণ আর ললাট ধানবীজ আর সরকারি রাসায়নিক সার। তার আগে দেশি ধানেই চাষ হতো, ছিল জঙ্গলের পচা পাতা আর গোবর সার। কিন্তু ফলন ছিল অত্যন্ত কম। এখন আবার হাইব্রিড ধান চাষে সার লাগে গাদা গাদা। ফলে এখন ফলন বেড়েছে, খরচও বেড়েছে অনেক।
সবচেয়ে নজর কাড়ে এই গ্রামগুলোর ভোগ্যবস্তুর সামান্যতা। শহর, মফস্বল, আর চাষোন্নত গ্রামগুলিতে পাল্লা দিয়ে যখন ভোগের সামগ্রী বেড়ে চলেছে, তখন এই গ্রামগুলো দিব্বি রয়েছে খাওয়া থেকে পরা, সবকিছুতেই সামান্য কিছু সম্বল করে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য গ্রামের মারাত্মক প্লাস্টিক দুষণ বা টিভি দেখার দূষণও এখানে চোখে পড়ল না।
সব মিলিয়ে আমাদের ছোটোবেলার নদীয়া জেলার সহজ, অনাড়ম্বর, সামান্য সম্বল গ্রামগুলোর কথা মনে পড়ে গেল, যা এখন ওইসব এলাকায় অমিল।
Leave a Reply