যতীন বাগচী, বেহালা, ২৮ জুন#
শ্রমজীবী সন্তান, সাব জুনিয়র জাতীয় হকি খেলোয়াড় আশিস নস্কর ২০১৪-র উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আশিসের শিশুবয়সে তার বাবা নিখোঁজ হয়ে যান। মা নিজের শ্রমের বিনিময়ে তিনটে সন্তানকে প্রতিপালন করতে শুরু করেন। ওর এক দিদি ও দাদা আছে। তারাও ছাত্র। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় আশিস হকির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর প্রধান কারণ ময়দানের বিখ্যাত মানুষ, হকি প্রশিক্ষক বিজয় গোপাল অধিকারী ওকে ঘষে মেজে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছেন। আশিস যাতে খেলতে পারে, তার জন্য ওর দাদা নিজে খেলাধুলা করতে পারেনি। কারণ সকালবেলা ওকে ফুল বিক্রি করতে হয়।
এর মধ্যে নতুন বিপদের শুরু। আশিসের দাদা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বেহালা কলেজে ভর্তি হয় এবং আশিস মাধ্যমিক পাশ করার পরে বেহালা পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দিরে ভর্তি হয়। ওদের মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন দুই ভাই ঠিক করে মাকে আর কাজ করতে দেবে না। সেই মতো দুজনেই ফুল নিয়ে বসে। যার জন্য আশিস নিয়মিত সকালবেলা অনুশীলন করতে পারছে না। কিন্তু ওরা পড়াশোনা ঠিকমতো চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ফলশ্রুতিতে আশিস উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এত কষ্টের পরেও আশিস ময়দানে একজন অপরিহার্য খেলোয়াড়। এর মধ্যেও ন্যাশনাল স্কুলে ২০০৯ ও ২০১০-এ প্রতিনিধিত্ব করেছে। ২০১৩ জওহরলাল নেহেরু স্কুল টুর্নামেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছে। সাবজুনিয়রে ২০১১ ও ২০১৩-তে প্রতিনিধিত্ব করেছে। জুনিয়র ন্যাশনালে ২০১৩-তে হকি টুর্নামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করেছে।
আজ ও যে ক্লাবের (বেহালা স্পোর্ট কর্ণার) প্রতিনিধিত্ব করছে, ওকে ছাড়া টিম গঠন করা ভাবা যায় না।
এতদসত্ত্বেও আশিস তার মায়ের প্রতি দায়িত্ব থেকে একচুল নড়েনি। কামনা করি, দাদা ও ভাইয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক।
Leave a Reply