আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সর্বোচ্চ প্রক্রিয়াটি শুরু হতে চলেছে, আর পনেরো দিনও বাকি নেই। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আগামী পাঁচ বছর দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জনগণের প্রায় কোনো ভূমিকা থাকবে না। তাদের হয়ে সূচ থেকে স্যাটেলাইট, সুরক্ষা থেকে গ্যাস — সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেবে জনপ্রতিনিধিরাই। টিভি মিডিয়ায় টক শো-তে কোনো কোনো জনপ্রতিনিধির মিডিয়া-অ্যাঙ্করের হাতে নাস্তানাবুদ হতে দেখে হাততালি দেওয়ার সুযোগ অবশ্য থাকবে জনগণের একটা অংশের, যারা টিভি দেখে।
কিন্তু এই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেই বা জনগণের ভূমিকা কতটা? এর মধ্যেই মিডিয়ার ওপিনিয়ন পোল, পার্টিগুলোর লক্ষ-কোটি টাকার মিডিয়া-বিজ্ঞাপন, লক্ষ লক্ষ টাকার দেওয়াল লিখন-পোস্টার-ফ্লেক্স সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে, কাদের মধ্যে থেকে ফার্স্ট-সেকেন্ড-থার্ড হবে। একটা নির্বাচনে একটা কেন্দ্রে গড়ে আট-নয় জন প্রার্থী দাঁড়ায়। বাকিদের কথা ক’জন জানতেই বা পারছে? নির্বাচনের আগেই তো নিয়মিত ফল ঘোষণা করে চলেছে বিভিন্ন মিডিয়া! নির্বাচন কমিশনও তো নিষিদ্ধ করতে চাইছে না মিডিয়ার এই ওস্তাদি। এটা কি নির্বাচনের আগেই ফল জানিয়ে দিয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা নয়? পয়সা থাকলেই কি যা খুশি করা যায় না কি?
এ বছরে ভোটে পয়সার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রার্থী সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবে, জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই পরিমাণ টাকা খরচ করতে পারে কে? খুব স্বাভাবিক, যে পারবে, সে প্রতিটি ভোটারের মাথায় প্রচারযন্ত্রের কল্যাণে রোজ একবার করে নিজের নামটি গেঁথে দিতে পারবে। ‘পয়সা যার ভোট তার’ — এই নীতি কি আমাদের সংবিধানসম্মত?
তথাপি, ‘জনগণ’-এর কিছুটা ভূমিকা হয়ত থেকেই যাবে নির্বাচনে, কিন্তু সাধারণ একজন নাগরিকের ভূমিকা থাকবে কতটুকু? একটা কেন্দ্রে কয়েক লক্ষ ভোটার, সেখানে একজন নাগরিকের একটা ভোট, তার মূল্য কি? নির্বাচন কমিশন থেকে পার্টি বা সেলিব্রিটি — সবাই মিডিয়াতে বলছে, একটা ভোটের অসীম মূল্য। আমাদের কাগজের এই সংখ্যায় একটি প্রতিবেদনে এক গৃহবধূ বলেছেন, একটা ভোটে কী যায় আসে!
Leave a Reply