মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন, বহরমপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি#
মায়ানমারের জাতিদাঙ্গায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে এসেছিল আশ্রয়ের খোঁজে। জুটেছিল জেলের সাজা। জেলের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তবু তারা আজও বহরমপুর জেলে বন্দি।
২০১১ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি মায়ানমারের ১৫ জনকে মালদা স্টেশন চত্বর থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে তবু মুক্তি মেলেনি। ধৃতদের মধ্যে ৬ জন পুরুষ, ৪ জন মহিলা এবং ৫ জন শিশু। পুরুষ ৬ জন, মহিলা ৪ জন ও ২ জন শিশু বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে আছে। ২ জন শিশুকে বহরমপুরের হোমে ও ১ জনকে মালদার হোমে রয়েছে। মায়ের থেকে তাদের আলাদা রাখা হয়েছে।
প্রাণ বাঁচাতে রিফিউজি হিসাবে এদেশে প্রবেশ করে দিল্লিতে ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজির দফতরের দারস্থ হওয়া। ওখানে ওদের আত্মীয়স্বজনরা রয়েছে। আদালতে মামলা চলাকালীন বিচারককে সে কথা তারা জানায়। বিচারকের রায়ে তাদের রিফিউজি দফতরে পাঠানো যেতে পারে।
ধৃতদের আদালতে চার্জশিট দেওয়ার সময় ইংলিশবাজার থানা তাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে উল্লেখ করে। ধৃতদের কাছে কোনো কাগজপত্র না থাকায় ভারতীয় বিদেশি আইনের ১৪ এ(বি) মামলা দায়ের করা হয়। মালদায় ষষ্ঠ ফার্স্ট ট্রাক কোর্টের বিচারক প্রবীরকুমার মিশ্রের এজলাসে — ২২শে ডিসেম্বর ২০১১ মামলায় নিস্পত্তি হয়। আইনজীবি সুদীপ্ত গাঙ্গুলি ও সৈয়দ আনিস আমাদের প্রতিনিধিকে নানান সাক্ষীদের মধ্যে অভিযুক্ত মাহমুদা-র (৭০) মেয়ে নাসিমা খাতুন ও জামাই নাজিক আহমেদ ছিলেন। তাঁরা বর্তমানে দিল্লিতে ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর রিফিউজি-র (ইউ.এন.এইচ.আর.) আশ্রিত। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ওই ধৃতদের মায়ানমারের নাগিরকত্ব সক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র তুলে ধরেন। এরপর বিচারক ধৃতদের দুবছরের কারাবাস ও প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দেড়বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
অভিযুক্ত ফয়েজ, নরুলকবির, সৈয়দ আলম, শাহয়ালম, শামশুল আলম উবাক্কার সিদ্দিকি, বিবি আখতার, রোকেয়া বিবি, মাহমুদা বেওয়া, ফতেমা বিবি বর্তমানে বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে রয়েছেন। এদের সঙ্গে রয়েছে দুটি শিশু। আদালতের রায়ে প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার করে মোট ১ লক্ষ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
১৯ ফেব্রুয়ারি গৌড়বঙ্গ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ারনেস সেন্টারের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাস, এপিডিআর-এর কেন্দ্রীয় সদস্য স্বপন সান্যাল, আইনজীবী এম.এস.খান (সুপ্রীম কোর্ট), বন্দিমুক্তি কমিটির প্রতিনিধি তাতেদুল ইসলাম, মহম্মদ হেলালউদ্দিন ও শাহের আলম সেলিম বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপার রবীন চক্রবর্তী ও ধৃতদের সঙ্গে সেন্ট্রাল জেলে দেখা করেন। রবীন চক্রবর্তী জানান আমার কাছে যে কনভিকশন ওয়ারেন্ট এসে পৌঁছেছে সেখানে তাদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করতে হবে।
জেলের সুপার রবীন চক্রবর্তীকে প্রতিনিধিদল যেসব নথিপত্র তুলে দেন, তাতে প্রমাণ হয়, তারা মায়ানমারের মানুষ, তাদের জরিমানার টাকাও জমা হয়েছে। তারা মুক্ত এবং তাদের ইউ.এন.এইচ.সি.আর. (ত্রাণ শিবিরে) নিতে চাইছে। তিনি প্রতিনিধিদলকে জানান, দু-তিন দিনের মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা করে মুক্তি দেওয়া হবে। প্রতিনিধিদলটি বলেন, আমরা তাদের পৌঁছে দিতে চাই দিল্লির শরণার্থী শিবিরে। তারা নিজেও চায়। রবীনবাবু বলেন, আপনাদের সহৃদয় প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ। প্রতিনিধিদলের কাছে বন্দিরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
Leave a Reply