প্রশান্ত রায়, কোচবিহার, ১ অক্টোবর#
২৬ সেপ্টেম্বর কোচবিহার জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল সুকারুকুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বসকোটাল গ্রামে সর্বহারা শিক্ষা নিকেতনের পক্ষ থেকে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। পূজা ও ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বর্মণ। এছাড়াও তাঁর সতীর্থদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রভাস বর্মণ, বিনোদবিহারী রায়, মন্টূ বর্মণ প্রমুখ।
কিন্তু কী এই সর্বহারা শিক্ষা নিকেতন? সর্বহারা শিক্ষা নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ বর্মণ শৈশবেই বাবা-মা কে হারিয়েছেন। মানুষ হয়েছেন বিশিষ্ট সমাজসেবক দেবী নিয়োগীর কাছে। পড়াশুনায় সহযোগিতা করেছেন উমাচরণ নিয়োগী। স্নাতক হন ১৯৮৫ তে। সে বছরই যোগ দেন নৌবাহিনীতে। বদলি হয়েছেন নানা জায়গায় — বোম্বে, চিল্কা, কোচিন, বিশাখাপত্তনম, মাদ্রাজ চাকরি সূত্রে গিয়েছেন সোমালিয়া, কেনিয়া, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা। এর জন্য পেয়েছেন বিদেশ সেবা মেডেল। তখন থেকেই দুস্থ মেধাবী ছাত্রী-ছাত্রদের জন্য অর্থসাহায্য পাঠাতেন। নিজের সংসার পাতেননি। বলেন, সংসার তো আমার জগৎময়। নৌবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে। সেই সময় দুস্থ ছাত্রীছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই খাতা ও পোশাক দিয়ে বেড়াতেন। কিন্তু পুলিশি চাকরির জটিলতার কারণে সে কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তাই চাকরি ছেড়ে দেন। এবং দিনহাটার প্রান্তিক বাজারে তিন কাঠা জমির ওপর গড়ে তোলেন সর্বহারা শিক্ষা নিকেতন। তখন ২০০৫। এখানে দুস্থ মেধাবী ছাত্রীছাত্রদের বিনামূল্যে টিউশন, পুস্তক, পাঠ সরঞ্জাম, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসা, ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকেন। এরমধ্যেই যোগ দেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত পারিশ্রমিক ও পেনশনের টাকা ব্যয় করেন দুস্থ মেধাবী ছাত্রীছাত্রদের পেছনে। নিজের বলতে আছে এক সেট জামা প্যান্ট ও দু-চাকার সেকেন্ড হ্যান্ড একটি বাইসাইকেল। আর আছে সর্বহারা শিক্ষা নিকেতন। এই নিয়ে তাঁর সংসার চলছে। একটি কথা তাঁর মুখে সবসময় শুনতে পাই –‘এসেছি ভবে যেতেই হবে, অমর কে কোথা কবে। এক মুঠো কেউ দিলে খাই, না দিলে নাই। একটু জুটলে ভালো, না জুটলে আরও ভালো।’
Leave a Reply