৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ দিল্লিতে দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা মিলিত হয়ে স্থির করেছেন পরের বছর ২০১৩ সালের ২০-২১ ফেব্রুয়ারি তাঁরা সারা দেশে ধর্মঘট পালন করবেন। পাঁচ-ছয় মাস আগে আন্দোলনের দিন ধার্য করার এই রীতি-রেওয়াজকে সকলের নিন্দা করা উচিত। সত্যিকারের যদি কোনো সমস্যা শ্রমিক অথবা খেটে খাওয়া মানুষের থাকে, যদি সত্যিই তার জন্য কিছু করণীয় থাকে, তবে কোন যুক্তিতে ছ-মাস বাদে দিন স্থির হয়?
যেসব দাবি এই ধর্মঘটে তুলে ধরা হচ্ছে — মূল্যবৃদ্ধি দূর করা, বেকারত্ব ঘোচানো, নিম্নতম মজুরি স্থির করা, সম কাজে সম বেতন আদায়, সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি — কোনো দাবিই ছ-মাসের জন্য ফেলে রাখার মতো নয়। আসলে সংগঠিত আন্দোলনের নামে এ এক অদ্ভুত সংস্কৃতি তথা অভ্যাস তৈরি করেছে বাম-ডান নির্বিশেষে শ্রমিকনেতারা। যদি সমস্যা আজকের হয়, কেন আমরা আজই তার মোকাবিলা করব না? কেন আজই পথে নামব না? কেন ডিসেম্বর মাসে ‘জেল ভরো’ হবে জেলায় জেলায়? কেন পরের বছর জানুয়ারি মাসে শহিদ মিনারে সমাবেশ হবে? এটা কি এমন কোনো অনুষ্ঠান যার জন্য তিথি-নক্ষত্র-পঞ্জিকা দেখে শুভদিন স্থির করতে হয়?
আসুন, অন্যকে কিছু বলার আগে আমরা প্রত্যেকে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করি। আমরা সাধারণ মানুষ কি মূল্যবৃদ্ধির গতিকে থামানোর জন্য কিছু করার কথা ভাবছি? আমরা কি মনে করি কোনো দল আমাদের ‘প্রতিনিধি’ হিসেবে এ নিয়ে কিছু লড়াই করতে পারে? প্রায় কেউই এমন মনে করে না।
কিন্তু গাছ যেমন জল ছাড়া বাঁচে না, দল লড়াই ছাড়া বাঁচে না। দলের নেতারা মনে করে, ‘লড়াই’ না থাকলে তো দল তুলে দিতে হয়। অতএব যেনতেনপ্রকারেন ‘লড়াই’ চাই। তাই দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াইয়ের কর্মসূচি নিতে হয় দল এবং দলীয় ট্রেড ইউনিয়নকে। ফি-বছর গতানুগতিকভাবে এইভাবেই ধর্মঘট ডাকা হয়ে চলেছে। এইভাবে ‘ধর্মঘট’ নামক লড়াইয়ের পন্থাটাকেই গুরুত্বহীন ও হাস্যকর করে তোলা হচ্ছে।
Leave a Reply