সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৮ ফেব্রুয়ারি#
সরকারের অন্তত দু-জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, পরিবহণমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকার কলকাতার রাস্তায় সাইকেল, রিক্সা প্রভৃতি চলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার পক্ষপাতী নয়। হাইকোর্টে এই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলা প্রধান বিচারপতির এজলাসে এখন বিচারাধীন। তবু সেসবের তোয়াক্কা না করে সাইকেল, ভ্যান প্রভৃতি ধীরগতির যান’-এর বিরুদ্ধে ফের একদফা নিষেধাজ্ঞা জারি করল কলকাতা পুলিশ। এই নয়া নিষেধাজ্ঞার তারিখ লেখা আছে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
এটি কি আদৌ আইনসম্মত
তবে আগের ২৯ মে ২০১৩-র নিষেধাজ্ঞার তুলনায় এটি কিছুটা আলাদা। এই নিষেধাজ্ঞাটি জারি করা হয়েছে ১৯৮৯ সালের রাজ্য মোটর ভেহিকলস রুল মোতাবেক। উল্লেখ্য আগের নিষেধাজ্ঞাটি দেওয়া হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আইনে। এবারের নিষেধাজ্ঞাটি মোটর ভেহিকলস রুল ২৯১ নং ধারার ২ নং উপধারাকে উল্লেখ করে করা হয়েছে। এছাড়া, এবারে নিষেধাজ্ঞাটিতে সাইকেলের জন্য আলাদা ও বাকি অযন্ত্রচালিত যান যথা, রিক্সা, ভ্যান, ঠ্যালা প্রভৃতির জন্য আলাদা বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সাইকেল বাদে বাকি যানগুলির জন্য আগের ১৭৪টি রাস্তার নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। সাইকেলের জন্য ৬২টি রাস্তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার মধ্যে ২১টি রাস্তায় ২৪ ঘন্টার জন্য (এর মধ্যে পড়ছে পার্ক স্ট্রীট, থিয়েটার রোড, রেড রোড, ক্যামাক স্ট্রীট এবং ফ্লাইওভারগুলি), ৩৫টি রাস্তায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত (এর মধ্যে পড়ছে বি বি গাঙ্গুলী স্ট্রীট, মহাত্মা গান্ধী রোড, আশুতোষ চৌধুরী অ্যাভেনিউ, বালিগঞ্জ সারকুলার রোড, এজেসি বোস রোড, গড়িয়াহাট রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, রানী রাসমোনি অ্যাভেনিউ, গভর্নমেন্ট প্লেস ইস্ট, এসপ্ল্যানেড রো ইস্ট, অকল্যান্ড রোড, ইন্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্লেস, কিরণ শঙ্কর রায় রোড, হেয়ার স্ট্রীট, কয়লাঘাট স্ট্রীট, ক্লাইভ ঘাট স্ট্রীট, ব্রেবোর্ণ রোডের বিবিদি বাগ সংলগ্ন অংশ, মিশন রো, চার্চ লেন, ব্যাঙ্কশাল স্ট্রীট, ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রীট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস রোড, বাবুরাম ঘোষ রোড, বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি কানেক্টর, প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টর, সুকান্ত সেতু, রাসবিহারী কানেক্টর, বণ্ডেল গেট ফ্লাইওভার, রাজা এস সি মল্লিক রোড, মেয়ো রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, চৌরঙ্গী রোড, হরিদেবপুরে মহাত্মা গান্ধী রোড, ব্রেবোর্ণ রোড ফ্লাইওভার)। এছাড়াও বাকি রাস্তাগুলোতে দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়টাই সাইকেল নিষিদ্ধ (এর মধ্যে পড়ছে জেমস লঙ সরণী, ডায়মণ্ড হারবার রোড, মুর অ্যাভেনিউ, এন এন দত্ত রোড, কালিতলা ব্রিজ)। আগের নিষেধাজ্ঞায় বলা ছিল, ক্রসিং-গুলিতে সাইকেল নিয়ে চলা যাবে। কিন্তু এবারের নোটিফিকেশনে সে কথাটা অনুপস্থিত। সোজা কথায়, কলকাতার বড়ো রাস্তাগুলি থেকে সাইকেল চালানো ফের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে গত বছর ডিসেম্বর মাসে পুরনো নোটিফিকেশনটি বাতিল হয়ে গেছিল। ফলে কলকাতার কোনও রাস্তাতেই সাইকেল নিষিদ্ধ ছিল না। নয়া নোটিফিকেশনে রিক্সার ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়নি।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞাটি দেওয়া হয়েছে মোটর ভেহিকলস রুল, ১৯৮৯-এর যে ধারার ওপর ভিত্তি করে, সেই ২৯১ নং ধারার শিরোনামটি হল ফুটপাথ, সাইকেল ট্র্যাক, ট্রাফিক পৃথকীকরণ’। এর ১ নং উপধারায় বলা আছে, ফুটপাথ বা সাইকেল লেন-এ মোটরগাড়ি ঢোকানো যাবে না। আর ২ নং উপধারায় বলা আছে, কলকাতার ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনার এবং জেলায় জেলাশাসক নিজের তরফে ঘোষণা করতে পারে, জনপরিসর, স্টেট হাইওয়ে সহ রাস্তা বা সরণীর কিছু অংশ কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোটরযান বা কয়েকটি ধরনের মোটরযানের জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট এবং ওই সময়ে ওই স্থানে সাইকেল, রিক্সা প্রভৃতি অন্য ধরনের ট্রাফিক চলতে পারবে না। এই নির্দেশ জারির পর সাইকেল, রিক্সা বা অন্যান্য ধরনের মোটরযানগুলিকে সেই বারণ মানতে হবে।’
অথচ কলকাতা পুলিশের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, … যানবাহনের নিরাপদ এবং বাধাহীন গতির জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে যানগুলি (যেমন, সাইকেল ভ্যান, হ্যান্ড কার্ট, পুল কার্ট, বাইসাইকেল) কলকাতা শহরে কলকাতা পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকতে বা চলতে পারবে না নিম্নে লিখিত এলাকায় ও সময়ে … ‘
কিন্তু রুল অনুযায়ী ওই সময়ে ওই রাস্তায় কি কি যান চলতে পারবে সেকথা বলার কথা, তারপর কি কি যান চলতে পারবে না — সেকথা বলার কথা। নোটিফিকেশনটি নিয়ে তাই প্রশ্ন তোলাই যায়, এটি কি আদৌ আইনসম্মত?
তীব্র নিন্দা
সাইকেল সহ ভ্যান, হাতে টানা কার্ট প্রভৃতি নিষেধের এই নয়া ফরমানের তীব্র নিন্দা করেছে ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’। এর পক্ষে রঘু জানা বলেছেন, ‘সরকারেরই একটি অংশ কলকাতা পুলিশের হস্তক্ষেপে কলকাতায় সাইকেল সহ অন্যান্য অযন্ত্রচালিত যানের ওপর নয়া নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটা একই সাথে আদালত ও সরকারকে অবমাননার সামিল।’
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক :
Leave a Reply