শৈলেন মিশ্র, এপিডিআর, বোলপুর শাখা, ১৫ নভেম্বর#
৮/১১/১২ তারিখে সকাল ৮টার সময় লোবা গ্রামে গিয়ে আমরা দেখি ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র সদস্যরা একটি ছাউনি করে অবস্থান করছেন। ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র সদস্য এবং গ্রামবাসীদের সাথে আমরা আলোচনা করে জানতে পারি যে লোবা অঞ্চলের অন্তর্গত ৩টি মৌজার ১২টি গ্রামের ৫৫০০ জন মানুষ উচ্ছেদের মুখে।
প্রকল্পটি করার জন্য কোম্পানির ৩৫৫৩ একর জমি দরকার। তার মধ্যে ৭০০ একর জমি কোম্পানি ক্রয় করেছেন। যাদের জমি গেল তার মধ্যে যেমন ২০ একর জমির মালিক আছে, তেমন ৫ কাঠা জমির পাট্টা হোল্ডারও আছে। তাছাড়া আছে বর্গাদার এবং এই জমির ওপর নির্ভরশীল খেতমজুর এবং অন্যান্যরা। বাকি জমি ক্রয় না করেই কোম্পানির লোকজন ১৮ ডিসেম্বর ২০১১-তে মাটি কাটার গাড়ি নিয়ে গ্রামে ঢোকে। গাড়িটি ঢোকামাত্র ৪-৫ হাজার মানুষ গাড়িটি আটকে দেয়। এই দেখে বাকি ভারী গাড়িগুলি নিয়ে কোম্পানি ফিরে যায়। গাড়িটি সেদিন থেকেই গ্রামবাসীরা পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। কমিটির লোকজন এই ঘটনার কথা পুলিশকেও জানিয়েছে। তারা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার দাবি করে। সেইমতো রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রীর সাথে আলোচনা ব্যর্থ হলে তারা মাটি কাটার যন্ত্রটি আটকে রাখে।
৬/১১/১২ তারিখে ভোরের অন্ধকারে প্রায় ৪০০-৫০০ জন পুলিসের দল কমিটির ছাউনি আক্রমণ করে। মঞ্চে ঘুমিয়ে থাকা ২০-২৫ জনের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। আহতরা জখম অবস্থায় ছুটে এসে গ্রামে ঢোকে এবং পুলিশি আক্রমণের কথা বলে। গ্রামের মানুষ আগে সিপিএমের সময় তৎকালীন জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ সাধন ঘোষ, সিপিএম নেতা শিশির রাণা (মৃত) এদের দেখেছে দালালি করতে। এখন তারা দেখছে পরিবর্তনের জমানায় কেষ্ট (অনুব্রত) মণ্ডল (বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি, নীলকান্ত মণ্ডল (তৃণমূল নেতা), উজ্জ্বল ঘোষ (তৃণমুলের তরুলিয়া এলাকার সভাপতি), কাসেম-উল-হক, নুরুল আজিম (পঞ্চায়েত সদস্য) এদের এমটার হয়ে দালালি করতে।
আশঙ্কা ছিল আক্রমণ হতে পারে। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষ জড়ো হয়ে যায় এবং আবালবৃদ্ধ সকলে লাঠি, তীর, ধনুক, পাথর নিয়ে জড়ো হয়। পুলিশ প্রথমে জনতার দিকে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে এবং গুলি চালায়। জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তীর, ধনুক ব্যবহার শুরু করে। বেশ কিছু মানুষ জখম হয়। পাঁচজন গুরুতর জখম অবস্থায় সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশের গুলিতেই তারা জখম হয়েছে।
Leave a Reply