ষোলোবিঘা বস্তির আগুনে ছোট্ট ইমরাজ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেল। ওর মৃতদেহ প্রথম থেকেই ছিল প্রশাসনের কব্জায়। এদিকে বস্তির সামনে চলছিল মেরাপ খাটিয়ে মাইক বাজিয়ে দল ও নেতাদের নিয়মমাফিক তরজা। প্রশাসনের হাত থেকে ওর বাবা-মা যখন দেহটা পেলেন, বস্তিতে তা আনতে দেওয়া হল না। কেন? আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হবে! যে মাটিতে ইমরাজ চলে-ফিরে-খেলে বেড়াত, সেই পরিজন-প্রতিবেশীদের মাঝে ওকে নিয়ে এলে প্রশাসনের অসুবিধা!
আসলে ক্ষমতাধর শাসক, বিরোধী দল অথবা প্রশাসন কেউই চায় না ষোলোবিঘার বাসিন্দারা মিলেমিশে বাস করুক। ওরা এসেছে নানান গ্রাম থেকে, নানান প্রান্ত থেকে। কিন্তু এখানে ওদের একটা একক সমাজ গড়ে উঠুক, এটা প্রশাসন চায় না। যারা ভোট আর নানা ধান্দায় ওদের কাজে লাগায়, তারাও চায় না ওদের বস্তিগত একতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া আর শান্তি। সেই ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ ওরা কবে কোন যুগে ফেলে এসেছে ওদের দেশগ্রামে।
তাই ইমরাজের পুড়ে যাওয়া দেহটাকে নিয়ে যাওয়া হল আবুল ও সাবিনা গায়েনের দেশের ভিটেয়। বাসন্তী থানার খড়িমাচান গ্রামে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ওকে মাটি দেওয়া হল।
এখানে এই পোড়া বস্তিতে যদি ইমরাজকে নিয়ে আসা হত, এমনও তো হতে পারত এক মুহূর্তের জন্য দু-তিনশো বিঘা জুড়ে এই বিশাল বস্তির হাজার হাজার মানুষ এক হয়ে শামিল হত ওর শেষযাত্রায়। ষোলোবিঘা এক মুহূর্তের জন্য হয়তো দেখে নিতে পারত নিজের একতাবদ্ধ চেহারাটাকে। এই চেহারাটা প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কায় ওরা বাচ্চার লাশটাকে টেনে নিয়ে গেছে সুদূর বাসন্তীতে। সমাজের সংঘবদ্ধ রূপকে ভয় পায় ক্ষমতাধরেরা। ওরা চায় ভাঙাচোরা দুর্বল কৌমসমাজকে।
Leave a Reply