শ্রীমান চক্রবর্তী, বিদ্যাধরপুর, ২৯ অক্টোবর#
গত সপ্তমীর দুপুরে বিদ্যাধরপুর স্টেশন সংলগ্ন একটি নির্মীয়মান বাড়ির দোতালায় ‘বিদ্যাধরী’ পত্রিকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। সভার শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন মৃন্ময় চক্রবর্তী। ‘বিদ্যাধরী’ পত্রিকার এই সংখ্যার সম্পাদক শ্রী শম্ভুনাথ মণ্ডল বলেন, আজকের দিনে আমরা প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছি তার উৎসমুখ থেকে আমাদের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দিতে এক নগ্ন সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার সরাসরি বিরোধিতা করা আজকের দিনে ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের চেষ্টা নিজেদের সংস্কৃতির চর্চার নানা দিকগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিই তার প্রতিস্পর্ধী হয়ে উঠতে পারে। এই প্রস্তুতি সংখ্যাটি প্রকাশে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ছোটো পত্রিকার সম্পাদকগণ সহযোগীতা করেছেন। আপাতত সংখ্যাটি ত্রিমাসিক করার কথা ভাবা হয়েছে।
স্বাগত ভাষণের পর ছোট্ট মেয়ে পায়েল নস্কর ‘আমার আনন্দিনী উমা যে আসেনি তার মায়ের কাছে’ গান গেয়ে অনুষ্ঠানে এক নতুন মাত্রা যোগ করল। এর পর পত্রিকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সুন্দরবন অঞ্চলের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক-নৃতাত্ত্বিক গবেষক শ্রী সঞ্জয় ঘোষ মহাশয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও সমালোচক শ্রী সুখেন্দু মাইতি। তাঁর কথায় গ্রামীণ লোকায়ত সংস্কৃতির নামে পত্রিকার বিভিন্ন বিভাগের নামকরণ অবশ্যই ইতিবাচক ভাবনা। ছোটোদের লেখা, আঁকা, গল্প, কবিতা, নাটক, যাত্রাপালাসহ বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ হয়েছে পত্রিকাটি। পাশাপাশি তিনি লেখা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্পাদককে সতর্ক করেছেন। শ্রী অর্ধেন্দু বসু ছোটোদের সৃজনী শক্তির বৃদ্ধির জন্য এধরনের পত্রিকার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন। শ্রী মৃন্ময় চক্রবর্তী বলেন পত্রিকাটি লেখক-শিল্পী ও সম্পাদকদের মধ্যে যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে। শ্রী শাজাহান গাজী বলেন কবি, সাহিত্যিকরা সমাজের গভীরে পৌঁছে যেতে পারেন এবং সেখান থেকেই তাঁরা আলোর সন্ধান দেন। শাসকের দল আত্মগর্বে যে সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে ছোটো পত্রিকা তার বিরুদ্ধেই গর্জে ওঠে। আত্ম-অহঙ্কার, সংকীর্ণতা যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে সেই জন্যই ছোটো পত্রিকার প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে স্বরচিত দুটি কবিতা পাঠ করেন বিপদতারণ নস্কর। তিনি ‘বিদ্যাধরী’ নামের তাৎপর্য জানতে চান। এবং সাথে সাথে এই অঞ্চলে মজে যাওয়া বিদ্যাধরী নদীর গতিপথ ও তার ওপর বসবাস করতে থাকা মানুষরূপী জমিরাক্ষসদের সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুচেতনা, রূপান্তর, আলোর প্রদীপ পত্রিকার সম্পাদকগণও। শ্রী কুমারেশ নস্কর দেশজ লোকসংস্কৃতির উপর গুরুত্ব আরোপের কথা বলেন। সপ্তমীর দুপুরে ছোটো বড়ো মিলিয়ে প্রায় ২৬ জন উৎসাহী সাহিত্যপ্রেমী মানুষের উপস্থিতি এক অন্য বার্তা বহন করে।
Leave a Reply