পশ্চিমবঙ্গে যে কটি সতীপীঠ আছে তার মধ্যে একটি অট্টহাস। কলকাতা থেকে ১৭০ কিমি দূরত্বে বর্ধমান জেলায় অবস্থিত নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। হাওড়া-কাটোয়া অথবা শিয়ালদহ-শিবলুন হল্ট, জঙ্গীপুর প্যাসেঞ্জারে সকাল ৫-৩৫ মিনিটে ছেড়ে ১০-১৫মিনিটে পৌছানো যাবে। সেখান থেকে বাঁদিকে সাইকেল ভ্যানে (বাঁশের ছাউনিযুক্ত) চেপে ভীরকুল মোড়। ভাড়া ১৫ টাকা। সেখান থেকে বাসে নিরোল মোড়, ভাড়া ৫ টাকা। ২৫ মিনিট লাগে অট্টহাস পৌঁছতে।
অট্টহাস তেমন প্রচার পায়নি মূলত দুর্গম অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য। এটি একটি গহন অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত। চারিদিকে ঘন বনাঞ্চল। গা ছমছম করা পরিবেশ। একেবারে নিরিবিলি ঘন গাছপালা বিশাল দিঘি সন্নিহিত পরিবেশ। চারিদিকে শুকনো ঝরা পাতা আছে। সেই পাতা আদিবাসী নিরন্ন মহিলারা কুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে নিয়ে যাচ্ছে পেটের টানে। এক মহিলা কুড়াতে কুড়াতে বললেন, বাবু কলকাতা থেকে এসেছো? আমি বললাম, হ্যাঁ কলকাতা থেকে এসেছি এই মন্দির দেখতে। মহিলা বললেন, দোলের দিন আসবে। তখন বিশাল মেলা বসে। মন্দিরের পাশে কয়েকটা পিকনিক স্পট আছে। এই মন্দিরে সতীর ঠোঁটের অংশ পড়েছিল বলে কতত আছে।
সাইকেল ভ্যান থেকে নেমে উঁচু-নিচু জঙ্গল পরিবেষ্টিত একটা লম্বা সরু রাস্তা ধরে মন্দিরে ঢুকলাম। একজন দাড়িওয়ালা পুরোহিত আমার নাম, কোথা থেকে এসেছি জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর মন্দিরের পিছনে জঙ্গলে ঢুকে অনেকটা পথ হেঁটে দেখলাম। চারিদিকে পাখির অদ্ভুত কিচিরমিচির ডাক। পাশে একটা গভীর জলাশয়। মাটি কাটার কাজ চলছে। বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না কারণ অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা। সাইকেল ভ্যানই ভরসা। বেরিয়ে এসে দেখলাম একটা ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। চালককে ডেকে উঠে বসলাম। ২০-২৫ মিনিটে নিরোল মোড় পৌঁছলাম। একটা কাটোয়াগামী বাস অল্পের জন্য মিস্ করলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর পাচুন্দীগামী বাসে উঠলাম। খুব কষ্টকর যাত্রা। মধ্যে মধ্যে বাস লাফাচ্ছিল রাস্তা খারাপের জন্য। দুই বছরের একটি শিশুর হাত ধরলাম ব্যালেন্স রাখার জন্য। পাচুন্দী থেকে কাটোয়ার বাসে উঠলাম। কাটোয়া স্টেশনের কাছে নেমে দৌড়ে ওভারব্রিজ পার হয়ে ওপারে টিকিট কেটে ২নং প্ল্যাটফর্মে এসে ২-১০মিঃ কাটোয়া-হাওড়া লোকালে উঠে বসলাম। এই ট্রেনটা না পেলে আবার দেড় ঘন্টা পরে ট্রেন। হাওড়ায় পৌছলাম ৬-৩০ মিঃ। সেখান থেকে বাড়িতে ৭-৩০ মিঃ।
গ্রামের মধ্যে যাওয়ার আগে দুদিকেই ধান খেত। উঁচু-নীচু রাস্তা। প্রকৃতি এখানে উন্মুক্ত বাঁধন হারা। পৌরাণিক গাঁথার সঙ্গে ইতিহাসের সহাবস্থান চাক্ষুষ করা গেল এই অট্টহাসে এসে। বেঁচে থাকার আনন্দ আর জীবনীশক্তি অর্জনের সন্ধানে বেড়াতে হবে বাংলার আনাচে কানাচে, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি একাকার হয়ে গেছে।
দীপংকর সরকার, হালতু, ৩০ জুন
Leave a Reply