সৌম্য বসু, ২৯ এপ্রিল, তথ্যসূত্র বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা#
গত ৪ এপ্রিল গুজরাতের রাজকোটে এক নেপালি পরিবারের ৫ সদস্য রাজকোট পুরসভার সামনে নিজেদের গায় আগুন দেয়। পরিবারের তিনজন গিরীশ (২৮), আশা (৩৫) এবং ভারত সরকারি হাসপাতালে মারা যায় ঘটনার দিনই। আর দু-জন বসুমতী এবং রেখা মারা যায় দু-দিন পরে। রাজকোট পুরসভা মৃতদের এক আত্মীয়কে মৃত প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করে। তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু গিরীশ মরবার আগে রাজাভা জালা এবং কমলেশ মিরানি নামে দুই শাসক দল বিজেপির কাউন্সিলর-এর নাম করে যান, যারা তাদের ভয় দেখিয়ে উৎখাত করার পাণ্ডা, তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর শহর জুরে কিছু অশান্তির সৃষ্টি হয়, একটি সরকারি বাস পোরানোর খবর পাওয়া গেছে। কংগ্রেস এই ঘটনার নিন্দা করে শহর জুরে বন্ধের ডাক দিয়েছে।
ওই নেপালি পরিবারটি ছট্টুনগর হাউসিং সোসাটির জমিতে গত ৩৫ বছর ধরে বেআইনি ভাবে বসবাস করছিল, এমনকি তারা সেই জমিতে পাকা বাড়ি গড়ে তুলেছিল। পুরসভার নজর অনেকদিন ধরে ওই পরিবারটির উপর ছিল। জানা গেছে ওই হাউসিং সোসাইটি রাজকোট পুরসভার কাছে তাদের জমি ফেরতের জন্য আবেদন করাতে পুরসভা ওই নেপালি পরিবারকে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠায়। কিন্তু ওই নেপালি পরিবার বাসস্থান ছাড়তে নারাজ হয় এবং তাদের ঘর বাঁচাতে তারা কোর্টে আবেদন জানায় কিন্তু রায় বেরোয় তাদের বিপক্ষে।
ঘটনার দিন কিছু বস্তিবাসি রাজকোট পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন রায়া ধার এলাকার কিছু বস্তি উচ্ছেদর বিরুদ্ধে। সেই সময় ওই নেপালি পরিবারের পাঁচ সদস্য সেইখানে যান এবং ভিড়ের মধ্যে কেরোসিন ঢেলে নিজেদের গায় আগুন লাগান। পুরসভার কমিশনার অজয় ভাদু বলেছেন যে ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা দেখে তাদের বলা হয়েছিল তারা যেন তাদের বাড়ি ভেঙে ফেলে। তিনি এও বলেছেন যে ওই পরিবার যদি তাদের দ্বারস্থ হতেন তাহলে হয়তো এই মর্মান্তিক ঘটনা এরানো যেত। কিন্তু জানা গেছে যে ওই পরিবারটি একাধিক বার পুরসভার দ্বারস্থ হওয়া সত্তেও কোন ফল হয়নি।
এই ঘটনার কিছুদিন পর ২২ এপ্রিল হরিশ রামানি (৬২) নামে এক ব্যক্তি একই ভাবে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন কিন্তু যথা সময় চিকিৎসা হওয়াতে প্রাণে বেঁচে যান। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে যে, ৫ বছর আগে হরিশ রামানির তিনখানা দোকান রাজকোট পুরসভা ভেঙে দেয় কোন অনুদান ছাড়াই, সেই কথা সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন হরিশ।
১৮ এপ্রিল জামনগর পুরসভার এক সাসপেন্ড হওয়া সাফাইকর্মী সঞ্জয় বাঘেলা (৩০) একইভাবে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়।
উন্নয়নের নামে গরিবদের বাসস্থান থেকে কোন রকম কোন অনুদান ছাড়াই উচ্ছেদ চলছে গুজরাটে। মোদির ভারত সফর নিয়ে হাজার হাজার টিভি ফুটেজ আর সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা খরচ হলেও, নেপালি পরিবারের পাঁচ সদস্যের আগুনে পুড়ে আত্মঘাতী হওয়ার খবর ‘ব্রেকিং নিউজ’ হয়নি কোনও জাতীয় মিডিয়ায়।
Leave a Reply