সংলাপ ১
রাসবিহারী মোড়ে উত্তরগামী ২১/১ বাসের ভিতর, রাত ৯টা সাদাচুল : আপনি যে সিনিয়র সিটিজেনের সিটে বসে আছেন, কার্ড আছে? এই দেখুন আমার কার্ড। টেকোমাথা : না নেই। আনিনি। সাদাচুল : তাহলে উঠুন, আমায় বসতে দিন। টেকোমাথা : আজ আপনাকে ছেড়ে দিলাম। সঙ্গে আমার কার্ডটা নেই, তাই। সাদাচুল : এরপর থেকে সঙ্গে রাখবেন। সংলাপ ২ ধর্মতলার মোড়ে দক্ষিণগামী ৪৭/১ বাসের ভিতর, রাত ৮-৩০টা কন্ডাকটার : ওদের জিভের তলায় ব্লেড রাখা থাকে। যাত্রী : কতজন ছিল ওরা? কন্ডাকটার : তিনজন, সব মানিকতলা থেকে উঠেছিল। যাত্রী : কেউ কিছু বলল না। কন্ডাকটার : আমরা কী বলব। আমরা ওদের চিনি। ওরাও চেনে। ইশারায় সাবধান করলাম, দাদা ভেতরে যান বলে। শুনল না। পাবলিক কী করবে? সব চুপচাপ। শুধু আলাদা করে একজনকে ধরতে পারলে তখন দশ-পনেরোজনের ভিড়ে মিশে দু-একবার হাত-পা চালাবে — এই তো সব পাবলিক। |
সংলাপ ৩
গড়িয়া মেট্রোস্টেশনের দক্ষিণ দিকে মাসির চায়ের দোকান, সকাল ৮টা মাসি : কত তো পুজো দিচ্ছি গো ঠাকুরকে কিছু তো হচ্ছে না। প্রৌঢ়া খরিদ্দার : সবসময় হয় না। আমিও তো কত দিচ্ছি। তবে হবে। মাসি : কই হচ্ছে না তো। ওদিকে মন্দিরে ভিড় দেখো। প্রৌঢ়া খরিদ্দার : তাই তো বলছি। ভিড় কি অমনি হয়? নিশ্চয়ই কারো না কারো কিছু হচ্চে। বাবা তো ভোলানাথ। সবসময় মনে থাকে না তাই। হবে, তোরও হবে।সংলাপ ৪ ৪৫বি বাস, কালীবাড়ি স্টপ, সকাল ১০-৩০টা মন্থন রিপোর্টার : ছেলেটা ড্রাইভারকে মারল? আমি : হ্যাঁ মন্থন রিপোর্টার : আর আপনি বসে দেখলেন? আমি : না মানে, আপনি কি ওখানে ছিলেন? যা জানেন না … মন্থন রিপোর্টার : আচ্ছা বলুন আমি : আমি তো একদম শেষের সিটে বসেছিলাম। বাসটা একটু জোরে যাচ্ছিল। ফাঁকা বাস, ডিপোর কাছে এসে গেছে। রাস্তায় অফিসটাইমের ভিড়। বাইকটা ফাঁক দিয়ে ঢুকতে গেছে তাড়াহুড়ো করে। ধাক্কা লাগেনি। লাগতে পারত আর কি। কী হয়েছে দেখতেও পাইনি। বাস ব্রেক কষার পর ছেলেটা তড়পাতে তড়পাতে বাসে উঠে এল। কন্ডাক্টর দুজন ড্রাইভারের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। সামনের গেটের পাশে এক বয়স্কা ভদ্রমহিলা কী যেন বললেন, |
শুনতে পেলাম না। ছেলেটা মহিলাকে বলল, ‘একদম চুপ করুন, ধাক্কা মারলে তো আমিই মরতাম’। তারপর সে যে হাত চালাবে আমি বুঝতেই পারিনি। কন্ডাক্টর দুজন দাঁড়িয়ে দেখল। আমি সিট ছেড়ে এগোনোর চেষ্টা করতে করতেই ছেলেটা বাস থেকে নেমে গেছে। ড্রাইভার চেঁচাচ্ছে, আমি কোনো দোষ করিনি তবু আপনি গায়ে হাত তুললেন। ছেলেটা বলছে, তুই কেন গাড়ি বাড়াবি? আরেকজন মাঝবয়সি মহিলা হঠাৎ রুখে উঠলেন, ‘তাই বলে গায়ে হাত দেবে? কেউ কিছু বলছে না। বাসে এতগুলো বেটাছেলে আছে। এরা পুরুষ?’ আমার সামনের সিটে বসা পিঠে ব্যাগ এক যুবক কানের থেকে গানের প্লাগ খুলে নিল। তার সামনের সিটে বসা একজন খেটে খাওয়া পোশাক ও চেহারার, তিনি বললেন, ‘কে কী বলবে? ওই তো বয়স্ক মহিলা বললেন কোনো লাভ হল? এরা সব পাড়ার দাদা। কিছু বললে বলবে পার্টি করি। আরও ঝামেলা বাড়বে’।
মন্থন রিপোর্টার : আপনার বোধহয় পৌরুষে ততটা লাগেনি। অনেক চুল দাড়ি পেকে গেছে তো? তা যে ছেলেটা মারল তার চেহারা স্বাস্থ্য কেমন? আমি : বেশ ভালো, বড়োসড়ো … মন্থন রিপোর্টার : সেটাও কি অন্যদের ভূমিকার নির্ধারক হতে পারে? আমি : জানি না। বেশি পাকা (স্বগত এবং রাগত) অমিতাভ সেন, কলকাতা, ২৮ মে
|
Leave a Reply