তমাল ভৌমিক, ২৫ আগস্ট#
সংবাদমন্থনের ষান্মাসিক পর্যালোচনা সভা হ’ল ১৮ আগস্ট ২০১৩, কলেজ স্ট্রীটের ঘোষকেবিনের দোতলার ঘরে। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই সভায় ২৫ জন উপস্থিত ছিল। সভায় প্রধান প্রধান যে কথাগুলো উঠে আসে, সেগুলো নিচে দেওয়া হল।
যে খবরগুলো পাঠকদের ভালো লেগেছে, তার মধ্যে আছে, আফ্রিকার উপজাতিদের বিচার ব্যবস্থা, কোচবিহার থেকে দক্ষিণ ভারতে শ্রমিকদের যাত্রা, সেবির কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির তালিকা, পজিটিভ খবর — যেমন, বসুন্ধরা পরিবার নামক চিটফান্ডের খবর, কুডানকুলাম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তোতাকাহিনী, নুপুর ও পলাশের মৃত্যু, রেশন ব্যবস্থা নিয়ে খবর, চলতে চলতে …।
পছন্দ না হওয়া খবরগুলোর মধ্যে আছে, গ্রামের সাংস্কৃতিক উৎসব নিয়ে রিপোর্ট, যার মধ্যে কুসংস্কারের কথা আছে। এই প্রসঙ্গে একটি মত ছিল, ওইসব খবরের সঙ্গে সম্পাদকীয় টীকা দেওয়া যেতে পারে। অন্য একটি মত ছিল, সম্পাদকীয় টীকা দিতে গেলে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে দেওয়া দরকার, কারণ প্রতিবেদক সবচেয়ে ভালো জানেন বাস্তবটা, যা সম্পাদকীয় বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সম্পাদকীয় টীকা দিতে গেলে সংবাদের জায়গা কি কম হয়ে যাবে না? শেষে ঠিক হয়, সম্পাদকীয় টীকার বদলে বিভিন্ন পাঠকের মতামত প্রকাশ করা হবে। এই ব্যাপারে একটি নিয়মিত কলাম হবে। এটির দায়িত্ব নেন বঙ্কিম।
অপছন্দের তালিকায় থাকা খবরের মধ্যে রয়েছে মার্কিন নজরদারির খবর, কিছু ভ্রমণকাহিনী, মিশর নিয়ে খবর। মিশরের খবর বিষয়ে সম্পাদক জানান, ‘আরব বসন্ত’-এর অন্যতম দেশ মিশরের খবর ফলো করার কারণ রাজনৈতিক। ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর মিলিটারির ভয়াবহ গণহত্যার আগে মিলিটারি প্রধানের ডাকে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ লোক রাস্তায় নেমেছিল ব্রাদারহুড নিধনে সম্মতি জানাতে। এ এক ক্লাসিকাল ফ্যাসিবাদ। সম্পাদক আরও জানান, দেশের ক্ষেত্রেও এমন হয়। যেমন গোর্খাল্যান্ড নিয়ে খবর। আজ এই আন্দোলন নিয়ে কোনও খবর না ছাপানোটা পত্রিকার পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। অথচ, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন একটি রাষ্ট্রীয় আন্দোলন, প্রান্তিক মানুষের খবর নয়। রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর এবং প্রান্তিক মানুষের খবর-এর মধ্যে জায়গা ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব কাজ করে। এই ব্যাপারে পাঠকরা ভাবতে সাহায্য করলে ভালো হয়।
পত্রিকার ভাষা ও বানান নিয়েও বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হয়। শেষ তিনটে সংখ্যায় ভুলের পরিমাণ বেশি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাক্য গঠনেও ভুল থেকে গেছে। এর জন্য সাময়িক সাংগঠনিক সমস্যা কিছুটা দায়ী। এই বিষয়ে জিতেন নন্দী বিস্তারিতভাবে জানান, কী পদ্ধতিতে পত্রিকা কম্পোজ, প্রুফ দেখা ও ছাপানো হয়। তিনি একটাই বানান বিধি সকল কম্পোজারকে অনুসরণ করতে বলেন। কিছু উদাহরণও দেন। তাছাড়া একই লেখায় একই শব্দের দু-রকম বানান — এই ধরনের নানারকম ভুলেরও উল্লেখ করেন।
পত্রিকায় কী ধরনের খবর থাকা উচিত তা নিয়ে নানা মতামত উঠে আসে। যেমন, গ্রামীন অর্থনীতির খারাপ অবস্থার খবর, স্ব-স্বাস্থ্য, বিকল্প চিকিৎসা, ওষুধের ন্যায্য মূল্যের দোকান, জেনেরিক ওষুধ, জেলার হাসপাতালের অব্যবস্থা, সুন্দরবনের পরিবেশে ক্রাশার, পরিবেশ ধ্বংস করার বিরুদ্ধে লোকায়ত স্তরে বহুদিন ধরে চলে আসা বিধিনিষেধের খবর, শিক্ষিত বেকারদের কেরিয়ার চিন্তা ও তাদের জন্য পাতা ফাঁদ, ফুটপাথবাসীদের অবস্থা (আমাদের ঘরের বাইরে যে শিশু ক্ষুধা মেটাচ্ছে নেশা করে, তার খবর উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় — একজনের মত) — এসব নিয়ে খবর প্রকাশ করা দরকার। পত্রিকায় প্রান্তিক মানুষদের খবর কম আসার বা তাদের ভাষায় খবর কম আসার একটা সমালোচনা আসে।
স্থানীয় খবর হিসেবে মেটিয়াবুরুজের খবর বেশি আসার পক্ষে ও বিপক্ষে কথা হয়। যেখানকার খবর, সেখানে ছাপানো কাগজটা পৌঁছনোর গুরুত্বের কথা উঠে আসে। এভাবেই মেটিয়াবুরুজের খবর বেড়েছে।
বিভিন্ন জায়গা থেকে স্থানীয় কাগজ এসে জড়ো হয় জিতেন নন্দীর ঠিকানায়। পাঁচটা ছোটো কাগজ নিয়েও একটা সংসার হতে পারে। ওই কাগজগুলো থেকে ধারাবাহিক একটি কলম থাকা দরকার। দায়িত্ব নেন গৌতম গাঙ্গুলী।
পাঠক সভা বা পর্যালোচনা সভা ঘুরে ঘুরে হওয়ার ব্যাপারে একমত হন সবাই।
সংবাদমন্থন ওয়েবসাইটে নিয়মিত (প্রতিদিন) খবর পোস্ট করা হয়। এই নিবিড় কাজটি পাঁচ হাতে করলে ভালো হয়, তাই সংবাদমন্থনের নিয়মিত পাঠক ও সংবাদ প্রেরকদের মধ্যে থেকে ওয়েবসাইটের জন্য একটি সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয় সম্পাদকের তরফে। ওই সম্পাদকরা স্বাধীনভাবে নিয়মিত ওয়েবসাইটে খবর পোস্ট করবেন। জিতেন নন্দী জানান, প্রথম থেকেই কাগজের বাস্তব সম্পাদনার কাজটি করছে শমীক সরকার। সম্পাদকীয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লেখার পথটি খোলাই রয়েছে। জিতেন বা শমীক বেশিরভাগ সম্পাদকীয় লিখলেও হেলালউদ্দীন এবং বঙ্কিম ও তমাল একটি করে সম্পাদকীয় লিখেছেন। তবে কাগজ বা ওয়েবসাইটের সামগ্রিক সম্পাদনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কলেজ স্ট্রীটের সাপ্তাহিক বৈঠক। প্রতি মঙ্গলবার বেলা ২-৬টা কলেজ স্ট্রীটে বাকচর্চার ঘরে বসে সমস্ত খবরাখবর বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ, মতামত, ভুল-ঠিকের আলোচনা হবে।
সভায় সম্পাদক ২০১২ সালের হিসেব দেন : জমা ১৮৪১৮ টাকা (পোস্টাল গ্রাহক — ৬১৪৪ টাকা, ডিস্ট্রিবিউটর — ১১১৯৪ টাকা, বকেয়া — ১০৮০ টাকা)। খরচ ২০১৯৫ টাকা (কাগজ – ৯১২৫ টাকা, প্রিন্ট — ৬৭২০ টাকা, ট্রেসিং পেপার — ৫৪০ টাকা, স্ট্যাম্প — ১৬৫০ টাকা, ক্যুরিয়ার — ২৮৮০ টাকা)। গত বছরে কাগজের গড় বিক্রি ৬৫০।
Leave a Reply