• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

সংগ্রামপুর থেকে ভবানীপুরে এসে প্লাস্টিকের জিনিস সারিয়ে দিয়ে যান কুদ্দুস

December 11, 2012 admin Leave a Comment

তমাল ভৌমিক, ভবানীপুর, ১১ ডিসেম্বর#

কুদ্দুসের স্কেচ লেখকের করা

কুদ্দুস হালদার। লম্বা সাদা দাড়ি গোঁফ। মাথার চুলও সব সাদা — মাঝখানটায় তালুর ওপর টাক পড়ে গেছে। পরণে নীল চেক লুঙি, রঙচটা সাদা কালো ডোরাকাটা হাফশার্ট আর প্লাস্টিকের চটি। বয়স কত জিজ্ঞেস করলে বলেন, ষাট-পঁয়ষট্টি হবে না? আমি বলি, হ্যাঁ সেরকমই তো মনে হয়। আমাদের বাড়িতে এসছিলেন প্লাস্টিকের বালতি সারাতে।
রোজ রাত আড়াইটার সময়ে উঠে সংগ্রামপুরের কাছে তার ঘর থেকে  বেড়িয়ে পড়েন। দু’হাতে দ্যটো ব্যাগ — একটা চড়ের একটা প্লাস্টিকের। ব্যাগের মধ্যে নানারকম ভাঙা প্লাস্টিকের টুকরো, কাপড়ে জড়ানো কয়েকটা কাঠের হ্যান্ডেলওয়ালা লোহার তাতাল আর একটা কেরোসিনের পাম্প-স্টোভ, ছোটো বোতলে কেরোসিন। ওই দুটো ব্যাগ নিয়ে ঘন্টাখানেকের বেশি হেঁটে এসে ডায়মন্ডহারবার থেকে ফার্স্ট লোকাল ধরেন। তারপর ঢাকুরিয়া নেমে বাসে চেপে ভবনীপুর তেলিপাড়া-কাঁসারিপাড়া-শাঁখারিপাড়ায় কাজের খোঁজে ঘোরেন।
আমি একটা ফাটা বালতি ১৫ টাকা দিয়ে সারালাম। সারাতে সারাতে গল্প করছিলাম। কুদ্দুসদা বলছিলেন, যবে থেকে প্লাস্টিক তবে থেকে এই কাজ করছি। কবে থেকে প্লাস্টিক এসেছে বলুন তো? আমি আন্দাজে বললাম, ৪০-৪৫ বছর হবে, আপনার তখন বয়স কত? উনি বললেন, আমি তখন জোয়ান। বললাম, কত, বছর কুড়ি হবে? কুদ্দুসদা বললেন, ওইরকমই। পার্ক সার্কাসে আমার এক ভাই ফিরি করত। আমি ওর সঙ্গে এসেছিলাম। ফিরির কাজ আমি করিনি। প্রথম থেকেই এই প্লাস্টিকের জিনিস সারানোর কাজ করছি। আমি বললাম, শিখলেন কার কাছে? বললেন, নিজেই শিখেছি। নিজেদের প্লাস্টিকের বালতি সারাতে সারাতে অভিজ্ঞতা হয়েছে। বললে ভাববেন গল্প করছি, প্রথমদিকে বালিগঞ্জের দিকে কাজ করতাম। ওখানে অনেক ভদ্রলোক বাঙালি আছে। লেখাপড়া জানা শিক্ষিত। তারা প্রথমে বিশ্বাস করত না। আমি কাজ করতে বসলে চারিদিকে গোল হয়ে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যেত। ওই সাপুড়েরা খেলা দেখালে যেমন হয় তেমনই। তারা বলতেন, তোমার এই সারানো জিনিস টিঁকবে? আমি বলতাম, আপনাদের পয়সা দিতে হবে না; এক সপ্তাহ ব্যবহার করুন। তারপরে পয়সা নিয়ে যাব।
এখন সবাই জানে আমি কেমন কাজ করি। নাম জানে না অনেকে, কিন্তু মুখ চেনে। ফাঁকি আমি দিই না। ফাঁকি দিয়ে কী হবে বলুন, পরে মনে শান্তি পাবো? ফাঁকি দিলে আমাকেও ফাঁকিতে পড়তে হবে, তাই না? বলে, কুদ্দুসদা কাজ থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সম্মতি চান। আমি ঘাড় নেড়ে বলি, তা আপনার আয় কত হয়, সংসার চলে? কুদ্দুসদা বলতে থাকেন, নাঃ সত্যি কথা বলতে কি সংসার চলে না। রোজ আসি না। সপ্তায় ৪/৫ দিন; দিনে ১০০/১৫০ বা খুব বেশি হলে ২০০ টাকা হয়। এই যে দেখুন ব্যাগের মধ্যে ফ্রিজের প্লাস্টিকের ট্রের টুকরো আর গাড়ির ব্যাকলাইটের টুকরো আছে; এসব কাজও আমি করি —- যারা জানে আমাকে ডেকে নিয়ে যায় — এরকম একটা কাজ করলে ১০০/১৫০ টাকা হয়। সে তো রোজ হয় না। চাষের কাজ করি। ভিটে টুকু ছাড়া নিজের কোনও জমি নেই। অন্যের জমি চাষ করি।
আমি বলি, বাড়িতে কে কে আছে? কুদ্দুসদা বলেন, আমার বউ, দুই ছেলে, দুই মেয়ে। এক ছেলে অন্ধ্রপ্রদেশে কাজ করে, তার বউ বাচ্চা আমার কাছে থাকে আরেক ছেলে শ্বশুরবাড়ি থাকে, মেয়েগুলোর ভালো বিয়ে দিতে পারিনি, গরীব মানুষ — ভালো বিয়ে দেবো কোত্থেকে। জামাইরা ভালো না — মেয়েগুলো বছরের ৩/৪ মাস আমার ঘরে এসেই থাকে সব। তবে সবচেয়ে খারাপ — আমার বউ ভালো না। মাথা খারাপ। পনেরো বছর ধরে ভুগছে। নীলরতন সরকার হাসপাতাল আছে না — ওখান থেকে মুঠো মুঠো ওষুধ আনে আর খায়। আপনি বলুন, অতো ওষুধ খেলে মাথার ঠিক থাকে? আমি ছেলে মেয়ে ছেলের বউদের বোঝাই, ওরে তোরা মার কথায় কান দিস না। ওতো পাগলের থেকেও খারাপ, পাগলেরও একটু মাথা ঠিক থাকে।
বলতে বলতে উঠে দাঁড়ান কুদ্দুস হালদার। কাজ তখন শেষ হয়ে গেছে। বললেন, যাই দাদা, আপনার সঙ্গে অনেক গল্প করলাম। যেতেও অনেকটা সময় লাগবে, নামাজের সময় পার হয়ে যাবে। আমি দেখলাম, ঘড়িতে ১১টা বাজে। বললাম, রোজ এই সময়ে চলে যান? বললেন, হ্যাঁ, ভোর ছ’টা থেকে কাজ করি। আর এই সময়ে চলে যাই। বলে হাসলেন। দুটো দাঁতের পাল্লা খোলা। ফোকলা সেই মুখের হাসি তাঁর চুল-দাড়ির মতোই সাদা। কোথাও গরীবীর মলিনতা নেই।

শিল্প ও বাণিজ্য অভিবাসী শ্রমিক, শ্রমজীবী, সুন্দরবন

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in