গ্রাম থেকে এসে কলকাতায় বস্তি বানিয়ে থাকা গরিব মানুষকে কীভাবে রাখা হবে তা নিয়ে সেই বিধান রায় থেকে শুরু করে পরপর সব সরকারেরই মাথাব্যথা ছিল। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নোনাডাঙায় ধান চাষের জমি অধিগ্রহণ করে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাতে তুলে দেয়। এই জমি তখন ছিল খালা (নিচু জমি)। তার ওপর মাটি কেটে ফেলে ফেলে উঁচু করে এই রুবি প্রভৃতি নগর তৈরি হয়েছে। এই মাটি কাটার ফলে এখানে তৈরি হয়ে গেল ১৪৮টা ভেড়ি (মাছ চাষের জলা জায়গা), আর রুবির আশেপাশের বড়ো বড়ো লেক। এগুলি ছিল নোনাডাঙা মৌজা, তার পর মাদুরদহ মৌজা। এই নোনাডাঙার যে মাঠগুলি এখনও ফাঁকা রয়েছে, তার মাপ একুশ বিঘের একটু বেশি। প্রথমে এটাকে সব চোদ্দ ছটাক করে প্লট করা হয়েছিল। তার জন্য জলের ট্যাঙ্ক বসেছিল, রাস্তা করা হয়েছিল, লাইটপোস্ট বসেছিল। এখনও ওই মাঠের মধ্যে দিয়ে পিচরাস্তা দেখা যায়। পরে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
শহরে বাবুদের জন্য কাজের লোক দরকার, সকাল থেকে রাত। এইসব কাজের লোককে শহরের মধ্যেও রাখা যায় না, অনেক দূরেও রাখা যায় না! তাই শহরের কাছাকাছি বস্তি পুনর্বাসন শাসক বাবুদেরও চিরকালের মাথাব্যথা।
আর গরিব মানুষ আজ প্রলোভন পেয়েছে ফ্ল্যাটের। চাটাই ঘরে থাকতে থাকতে কোঠাবাড়ির স্বপ্ন, সে লোভ সাংঘাতিক। তার জন্য সে চারটে ভাইকেও খুন করে দিতে পারে।
যেটুকু জায়গায় লোক বসেছে মাঠে, সেটুকু দুই বিঘা মতো হবে। নোনাডাঙার পুনর্বাসনের ফ্ল্যাটের মাপ দুই কাঠা। অর্থাৎ ওই ২ বিঘা বা ৪০ কাঠা জায়গায় ২০টা এরকম বিল্ডিং হতে পারে। একেকটা বিল্ডিঙের বত্রিশটা করে ফ্ল্যাট হতে পারে ছোটোলোকেদের জন্য। অর্থাৎ মোট ৬৪০টা পরিবার থাকতে পারে ওই দুই বিঘা জায়গায়। এবার সরকার যদি কোনো কোম্পানিকে এই জমি বেচতে চায়, তাহলে ওই দুই বিঘার দাম পাবে এখন ৪ কোটি টাকা। কম করে। সেটা কি ছোটোলোকদের দিয়ে দিতে পারে সরকার?
আমার মনে হয়, শুধু ওই জায়গা নয়, এই ফ্ল্যাটগুলিও ফাঁকা করবে আস্তে আস্তে। জায়গা বেচে দেবে বড়ো কোম্পানিদের। নোনাডাঙার ফ্ল্যাটবাসীও নিরাপদ নয়।
বাপি মণ্ডল, নোনাডাঙা, ১৪ এপ্রিল
Leave a Reply