পার্থ কয়াল, ষোলোবিঘা, ২৩ ডিসেম্বর#
ষোলোবিঘায় আগুন লাগার পর ষোলোবিঘা পুরাতন বস্তিতে ২৩ ডিসেম্বর অভিনীত হলো ‘ঈদের চাঁদ’ নাটকটি। বস্তির এক বাসিন্দার কাছে যেখানে আগুন লেগেছিল সেখানে নাটকটা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। নাটকটার বিষয়বস্তুর সাথে এই খানের বাসিন্দাদের অনেক মিল আছে। প্রথমে যার সুত্র ধরে এখানে যাওয়া, তিনি বলেছিলেন, এসব গাঁ গেরামের জিনিস, এখানে লোকের এসব দেখার সময় নেই। পরে বিষয়বস্তু শুনে প্রস্তাব দিলেন, ওখানে নাটকটা হোক।
নাটকটা করার জন্য বাজারপাড়ার দিক দিয়ে পাড়ায় ঢোকার মুখে দুটি ছেলে (সিক্স-সেভেনে পড়ে) দাঁড়িয়ে ছিল পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। ওদের কেউ বলেনি এখানে দাঁড়াতে। নাটক হবে এটা কোন ভাবে জানতে পেরেই ওরা এসেছে। বলল, চলো এগোও আমাদের হাতে তোমাদের ব্যাগগুলো দাও, আমরা বইছি। রাস্তায় যেতে লোকজনের প্রশ্ন, কি নাটক, কোথায় ইত্যাদি। তার পর জায়গা বাছা হলো। একখণ্ড জায়গা। কাঠা দুয়েকের একটু বেশি। এক পাশে পেচ্ছাবের গন্ধ, আর সব দিকেই বাড়ি ঘেরা, ওর মধ্যেই আলুর দম, পাকা আমড়া বিক্রি হচ্ছে, বাসন মাজাও চলছে। যার জায়গা তার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আসা হোলো। দু-একজন বলল, আরও ভালো জায়গা আছে।
নির্ধারিত জায়গাটায় দর্জির কাজের কাপড় কাটা, প্ল্যাস্টিকের কুচি পড়ে আছে। তার এক পাশে দুটো খুটি পোঁতার ব্যবস্থা হোলো। খুটি পোঁতার গর্ত করতে গিয়ে বেরোল পুরোনো বাতিল হাওয়াই, দর্জির কাজের ছাঁট কাপড় কুচি, প্লাস্টিক। এবরো খেবরো জায়গা যতটুকু পারা যায় ঝাঁটিয়ে পরিষ্কার করা হলো। হাত থেকে ঝাঁটা কেড়ে নিয়ে ঝাঁট দিলো বাবুসোনা, আর বারবার বলল, সেও নাটক করতে চায়। কী করলে এই নাটক দলের সাথে ভিড়তে পারবে এ নিয়ে অসীম কৌতুহল। নাটক দেখল অনেক দর্শক। নানা মন্তব্য আর হই হট্টগোল সাথে চলছিল, কোন মা তার ছোট্ট মেয়ে খুঁজতে খুঁজতে প্রায় দর্শক ঠেলে ঢুকে পরলেন মাঝখানে, দর্শকরাই আবার তাকে চুপ করালো।
অনেকেই মোবাইলে ছবি তুলতে গুঁতোগুঁতি করে দাঁড়াল, দর্শকরা প্রায় অভিনেতাদের ঘাড়ের উপর পড়ল আর মহিরামপুর শিশুকাননের ছেলেরা এক অসম্ভব দক্ষতায় অভিনয় করল এসব তুচ্ছ জিনিস পাশ কাটিয়ে। একপাশে খুঁটিতে দড়ি টাঙিয়ে পুড়ে যাওয়া বস্তির কিছু ছবি দেখানোর ব্যবস্থা ছিল। অভিনয় শেষে বাসিন্দারা কোলে কাঁখে ছেলে পিলে নিয়ে একে তাকে ধাক্কা ধুক্কি মেরে অবাক হয়ে ওই টাঙানো ছবি দেখল।
ওরা আমন্ত্রণ জানাল আবার আসার জন্য, আর এই মুহুর্তে লুচি তরকারি খাবার জন্য। যার বাড়িতে বসে খাওয়া হলো, তিনিও আগে ওই পুড়ে যাওয়া বস্তিতে থাকতেন। ওদিকে সারা দিন নানা চব্য-চামারি হয় বলে এখানে উঠে এসেছেন। এবার ঘরে ফেরার পালা, মহিরামপুরের অভিনেতাদের (এরা ক্লাস সিক্স থেকে নাইন) এগিয়ে দিতে এলো আরো কিছু বাচ্চা — সন্তোষপুর ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত।
Leave a Reply