১২ জানুয়ারি, জিতেন নন্দী#
কেনা, সামাদ আর মেহরাজ — তিন বন্ধুর মধ্যে সামাদের চেহারাটাই রুক্ষ, এই শীতের সন্ধ্যায় গায়ে তেমন গরম জামা নেই, পরনের মলিন লুঙ্গিটা পায়ে লুটোচ্ছে। ওর বয়স এগারো বছর। কেনা ওর চেয়ে দু-বছরের বড়ো। কিন্তু মাথায় সামাদ কেনার চেয়ে লম্বা। কেনা কথা বলে স্পষ্টভাবে চেয়ে, সামাদ কথা বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে। আমি বললাম, ‘সামাদ তুই একদিন আমাদের বাড়িতে আয়’। ওর হয়ে কেনা জবাব দেয়, ‘কী করে হবে? ও তো ডেলি ওস্তাগরের ঘরে কাজ করে।’ — তাহলে বুধবার আয়। এবার সামাদ জবাব দেয় — ‘বুধবার সকালে ঘুড়ি ওড়াই। টাইম নেই।’ বলে আবার অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করি, ‘সামাদ, তোর বাবা কী করে?’
— আমার আব্বা নেই। মরে গেছে।
— সে কী! কবে মারা গেল?
— বত্রিশ বছর বয়সে। মা ঘর মুছেছিল। পানি পড়েছিল। ঘরের মধ্যে স্লিপ খেয়ে পড়ে গিয়ে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল, হার্ট অ্যাটাক করে মরে গেছে। আমার ওপরে দুই ভাই। ওরা আলাদা আলাদা ওস্তাগরের কাছে কাজ করে। আমি কাজ করি আমরিতলা বাজারে নাজবুল ওস্তাগরের বাড়িতে। তিন বছর আগে আমার মা ওই কাজটা ধরে দিয়েছিল। ওদের বোতাম টাঁকা আর কাজ-সেলাইয়ের মেশিন (বোতামঘর তৈরির মেশিন) আছে। প্রথমে হাত-জোগাড় দিতাম। করতে করতে বোতাম টাঁকার মেশিনের কাজ ধরে নিলাম। হপ্তায় পঞ্চাশ ডজন পিসে (জামায়) বোতাম লাগাই। এক-একটা জামায় পাঁচটা করে বোতাম লাগে। আড়াইশো টাকা হপ্তা। মায়ের হাতে দুশো টাকা দিই আর আমি পঞ্চাশ টাকা রাখি। ওই টাকা দিয়ে ফিস্টি করি, পার্টি করি।
— তোর বোন ক-টা?
— তিনটে বোন, ওরা পড়ে না।
সামাদ রাতে বাড়ি ফেরে না। ওস্তাগরের বাড়িতেই থাকে। কোনো দরকার পড়লে অথবা বইখাতা নিতে ঘরে আসে। সামাদের হাসিতে মিশে থাকে একটা চাপা বিষাদ। ও এবার স্কুলে ফেল করেছে। সেটা ওর বন্ধু কেনা আমাকে বলেছে।
Leave a Reply