মুহাম্মদ সালমান হেলাল, কান্দুরী, মুর্শিদাবাদ#
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে কুরবানির পরের দিন থেকে আমার জ্বর ও পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়। ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এলাকার প্রাথমিক হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করি। কিন্তু জ্বর আসাও থামল না, রক্ত পরীক্ষায় কিছু ধরাও পড়ল না। তাই ১৪ নভেম্বর সুচিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসি এবং রক্ত পরীক্ষা করাই। কিন্তু ফলাফল একই।
১৫ নভেম্বর কলকাতায় ফের জ্বর শুরু হয়। ওই দিন এন আর এস-এ চিকিৎসা করিয়ে কিছু দিন সুস্থ থাকি। কিন্তু ন-দিনের মাথায় রাতে পেটে ব্যথা ও বমি হতে থাকায় গভীর রাতে কলকাতা মেডিক্যাল হাসপাতালে যাই, সেখানে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠি। পরে ইউএসজি-তে দেখা যায়, পিত্তথলিতে পাথর আছে। মেডিক্যালে ডাক্তার ইকবাল হোসেন দেখে বলেন, অপারেশন ছাড়া বিকল্প নেই। আমার আব্বা অপারেশনের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন।
অপারেশন করাব কোথায়? সরকারি হাসপাতালে তারিখ পেতে দেরি। দুটি বেসরকারি নার্সিং হোমে খোঁজ নিয়েছিলাম, একটি বলে পঁচিশ হাজার টাকা লাগবে, অন্যটি বলে উনিশ হাজার টাকা নেবো, আর তিন হাজার টাকার ওষুধ কিনে দিতে হবে। তখন আব্বার আরেক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের কথা। হাসপাতালে প্রবেশ করে দেখি প্রত্যেক ডাক্তারদের সময়সূচি ও নামের তালিকা দেওয়া আছে। আমাকে সার্জেনকে দেখাতে হবে। সেদিন সার্জেন ড. শঙ্কর দাস বসবেন বেলা একটায়।
আব্বার পরিচিত বসির ভাইয়ের মাধ্যমে আলাপ হয় হাসপাতালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত প্রাণ সুব্রতবাবুর সঙ্গে। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত সুব্রতবাবু কিছুক্ষণের আলাপে আমাদের আপন করে নেন। এখানে মাত্র এগারো টাকায় যে কোনো ডাক্তারকে দেখানো যায়। পাঁচ টাকার বিনিময়ে শ্রমজীবী হাসপাতালের পত্রিকাটি পেয়ে সেখান থেকে হাসপাতালের অনেক অজানা তথ্য পেয়ে যাই।
ডা. শঙ্কর দাস দেখে বললেন, অপারেশন করতে হবে। মেডিক্যাল চেক আপ হয়, ১৫ ডিসেম্বর ভর্তি হই, পরদিন অপারেশন হওয়ার কথা। কিন্তু পরদিন ডাক্তারবাবু না আসায় ১৭ তারিখ অপারেশনের জন্য ঠিক হয়। নির্ধারিত সময়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পরেও আরও কিছু শারীরিক ত্রুটির কারণে তা আটকে যায়। আমি বেশ ভেঙে পড়ি। আরও তিনদিন চিকিৎসার পর ডাক্তারবাবু আমায় ছুটি দিয়ে দেন। বাড়ি যাওয়ার সময় বললেন, আজ হয়নি আগামীতে হবে।
এক মাস পর ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো বাড়িতে বিশ্রাম ও চিকিৎসা চলতে থাকে। এক মাস পর পুনরায় ভর্তি হই ও অপারেশন হয়। শ্রমজীবী হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্স এবং কর্মীদের অমায়িক ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করে। এদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত সুন্দর, এদের চিকিৎসাতেই আমি সুস্থ হয়ে উঠি। মাত্র আট হাজার টাকায় সমস্ত কিছু হয়ে যায়।
শ্রমজীবী হাসপাতালের লক্ষ্য হল মানুষের সেবা করা। বিশেষ করে চিকিৎসা পরিষেবার মানবিক এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে। আজকের দিনে চিকিৎসা যখন ব্যয়বহুল এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, তখন গরিব শ্রমজীবী মানুষেরা চিকিৎসা পান না। তাই শ্রমজীবী হাসপাতালের জন্ম। এখানে সব চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় কম খরচে। শুধু আর্থিক সাশ্রয় নয়, এখানে পাবেন মানবিক পরিতৃপ্তি।
Leave a Reply