• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

শ্রমজীবীর পাঠশালার খবর — নতুন পড়া নতুন ধাঁচে

May 28, 2013 admin Leave a Comment

সুমিতা সরকার, শেওড়াফুলি শ্রমজীবী হাসপাতাল, ২৭ মে#

গত তিন মাস ধরে এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে শেওড়াফুলি শ্রমজীবী হাসপাতালের দুটি ঘরের বেশ কয়েকটি কচি কচি মনের মধ্যে। হুগলী বাঁকুড়া বীরভূম মেদিনীপুর পুরুলিয়ার গ্রামগ্রামাঞ্চলের এগারো বারো তেরো বছরের চব্বিশটি কিশোর-কিশোরী জানছে যে পড়াশোনার সঙ্গে আনন্দেরও যোগ আছে; হাসতে হাসতেও পড়াশোনা করা যায়; ক্লাসে কথা বললে কেউ ধমকে চুপ করিয়ে দেয় না, বরং প্রশ্ন করতে উৎসাহ দেন মাস্টারমশাই দিদিমনিরা। লেকচার দিয়ে পড়ানো নয়, বরং বিষয়কে ঘিরে একটা সমস্যার অবতারণা করে পড়ুয়া-গুরুমশাই সবাই মিলে সেই সমস্যার উত্তর খুঁজে বের করা –- এটাই এই ক্লাসের মূল লক্ষ্য। উত্তর খুঁজে বের করতে করতে পড়ুয়ারা শিখবে কী করে ভাবতে হয়। এই পাঠশালার গুরুমশাইদের মূল কাজ তাই পড়ুয়াদের চিন্তা করতে শেখানো, সব কিছুকে প্রশ্ন করতে শেখানো, কোনও কিছুকেই যেন তারা স্বতঃসিদ্ধ বলে মেনে না নেয়, সবকিছুকেই যেন যুক্তি-বুদ্ধি-হৃদয় দিয়ে বিচার করে নেয় –- এটাই এই পাঠশালার প্রধান পাঠক্রম। একজন শিক্ষাব্রতী হিসাবে এখানে আমার অভিজ্ঞতা জানাই। আমি প্রথমে ওদের সঙ্গে জানাশোনা শুরু করি গান শেখানোর মাধ্যমে, ফলে আমাদের পরিচয়টা খুব সহজ ও নিঃসংকোচ হয়। ওরা সহজেই আমাকে গানের দিদি হিসেবে কাছে টেনে নেয়। ফলে তার পরের সপ্তাহে যখন আমি ওদের বাংলা পড়াতে শুরু করি তাতে প্রথমে ওদের একটু আপত্তিই ছিল। ক্ষতিপূরণস্বরূপ এখন আমাকে বাংলা এবং গান দুটি ক্লাসই নিতে হয়। বর্তমানে যে ক্লাসটি হচ্ছে তার পাঠশব্দ হল ‘বারুদ’। বারুদ-সম্পর্কিত তিনটি ছবি প্রথমে দিলাম ওদের। বললাম কী আছে বল তো প্রথম ছবিটায়? প্রথমে বলল রুদ্র, তারপর দীপা — একটা বড় খোল, তার মধ্যে থেকে যে ছোটো ছোটো জিনিষগুলো বেরোচ্ছে, ওগুলো ‘গুলি’। ওখান থেকে শব্দ এলো ‘বুলেট’। অন্যরা নানামত দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত ঠিক হল গুলির মধ্যে থেকে বারুদ বেরোচ্ছে। রুদ্র আর শান্তি বুলেটের ছবি এঁকে দেখালো। মাঝের ছবিটা থেকে ‘কামান’ এলো সহজেই। সেখান থেকে ‘গোলা’। কী করে গোলা ছোঁড়ে সেই নিয়ে খানিক আলোচনা হল। ‘যুদ্ধ’ এল। যুদ্ধের সিনেমা এল। বুদ্ধদেব একটা সিনেমার গল্প বলছিল যেখানে হিরো প্রচুর কামানের গোলার মধ্যেও কিছুতেই মরলো না। অপর্ণা ছিল বিষ্ণুপুরের মেয়ে, ও দলমাদল কামানের কথা বলল। আমি ওদের দলমাদল কামানের গালগল্প এবং তার সম্ভাব্য যুক্তিগ্রাহ্য কাহিনীটা বললাম। এরপর তৃতীয় ছবিটায় শব্দ এল ‘তুবড়ি’, হেমন্ত তার সাঁওতাল ভাষার প্রতিশব্দ বলল ‘ছ্যারছ্যারে’। এর থেকে এল ‘বাজি’। ‘পটকা’। ‘পটাকা’, হিন্দি শব্দ। শেষমেশ এল ‘বিস্ফোরণ’। এই শব্দটার বানান আমি ওদের বলে দিইনি, বলেছি তোদের খুঁজে বার করতে হবে। ওরা অনেক চেষ্টা করেছে, এটা ওদের বাড়ির কাজ দিলাম। বারুদ নিয়ে সাধারণ আলোচনার পর আমরা গেলাম যুদ্ধে। সেখান থেকে যুদ্ধ ভালো না খারাপ। শান্তি আর সুদীপের মতে স্বাধীনতার যুদ্ধ অবশ্য ভালো। তারপর যখন যুদ্ধর সোশ্যাল আস্পেকটটা একটু বলার চেষ্টা করলাম, আসলে যুদ্ধে কার লাভ হচ্ছে? বলল, এক রাজা আরেক রাজ্য দখল করছে। তাতে কার লাভ হচ্ছে? কেন, ওই রাজ্যের লোকের? ভারত আর পাকিস্তানের যুদ্ধে ভারত যে জিতল, তাতে ভারতের সাধারণ মানুষের কী লাভ হল? নীরবতা। একটা দেশ আর একটা দেশ দখল করলে সেই দেশের না খেতে পাওয়া লোকগুলো কি খেতে পায়? দুই দেশের যে সৈন্যরা মরে তাদের বাবামাদের কাছে কি যুদ্ধ ভালো? সবাই খুব চিন্তায় পড়ে গেল। তাহলে যুদ্ধে কার লাভ হয়? অনেক গুলি বন্দুক বিক্রি হয়। কামান। যুদ্ধজাহাজ। যুদ্ধবিমান। তাহলে লাভ হয় দোকানদারদের। এটা ওরাই বলল। তারপর ওরা নিজেরাই বারুদ নিয়ে একটা টেক্সট লিখেছে প্রত্যেকে। পরের দিন ওগুলো মিলিয়ে ওর থেকে বেছে একটা টেক্সট তৈরি করতে হবে। ওদের নিজেদের তৈরি করা টেক্সট পড়তে ওরা উৎসাহ পাবে বলেই আশা করি। সব মিলিয়ে আজ আমার পড়িয়ে খুব তৃপ্তি হয়েছে।

এই নতুন পাঠদানের পথিক হয়েছেন বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় জনা তিরিশেক শিক্ষাব্রতী। প্রতিদিন নিয়ম করে রুটিন ধরে এই শিক্ষাব্রতীরা আবাসিক পড়ুয়াদের বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস নেন। হাসপাতালের পাশেই নতুন একটি বাড়িতে পড়ুয়াদের আস্তানা, দোতলায় মেয়েরা এবং তিনতলায় ছেলেরা। মেয়েদের ঘরের বাইরে লম্বা টানা ক্লাসঘর। আলোয় হাওয়ায় পরিপূর্ণ বাড়িটি ভরে থাকে এতগুলি ছেলেমেয়ের চেঁচামেচি খেলাধুলা ছোটাছুটি গান এবং কখনও কখনও খুনসুটিতেও। বাড়ির জন্য শান্তনুর মন খারাপ হলে অমিয় এসে কাঁধে হাত রাখে। শান্তির জ্বর এলে দীপা দিদির মতো কপালে জলপটি দেয়। কিন্তু বন্ধুত্বের হাতটা এখানেই থেমে থাকে না। ছোট্ট ফকির পড়াশোনায় পিছিয়ে-পড়া বলে ওর দলের ছেলেমেয়েরা ওকে আলাদা করে পড়িয়ে ওকে নিজেদের সমান করে নিয়েছে। আর এখানেই এই পাঠশালা সার্থক হয়ে উঠেছে। ছেলেমেয়েরা একে অপরের দুর্বলতায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, যা একদিন তাদের গড়ে তুলবে সমাজের এক একজন সহমর্মী মানুষ হিসেবে, এটাই এই শ্রমজীবী পাঠশালার আসল উদ্দেশ্য। একজন শিক্ষাব্রতী হিসাবে আশা করব সেই উদ্দেশ্য যেন সফল হয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পাঠশালা, শ্রমজীবী

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in