দেবব্রত মণ্ডল, পূর্ব যাদবপুর, ৫ সেপ্টেম্বর#
ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ১২৫ তম জন্মশতবার্ষিকী পালন হলো তার নিজস্ব উজ্জ্বলতা নিয়েই। বিভিন্ন স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ও নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অজয়নগরের এরকমই এক অনামী কোচিং সেন্টার লার্নিং কোচিং সেন্টার প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পালন করল শিক্ষক দিবস। পালন করল কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রীরা এবং পুরোধায় শিক্ষক শিক্ষিকারা। অনুষ্ঠানে মূলত কবিতা, গান, ছড়া, আর মূল আকর্ষণ হিসেবে দুটি বিতর্ক আলোচনা আয়োজিত হয়েছিল। ছোটো ছাত্র আবৃত্তি করেছিল, ‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে’। শিক্ষক আবৃত্তি করেছিলেন সুবোধ সরকারের ‘শাড়ি’ কবিতাটি। তাই ছড়া, কবিতায় কোনও খামতি ছিল না। এতে আরও মাত্রা দিয়েছিল বিতর্কিত আলোচনাগুলি।
ক্ষুদ্র ছাত্রছাত্রীদের বিতর্কের বিষয় ছিল ‘দূরদর্শন আমাদের নানাভাবে শিক্ষা দেয়’। এই বিষয়ে দুটি পক্ষে অর্থাৎ পক্ষে এবং বিপক্ষে জনা পনেরো করে ছাত্রছাত্রী ছিল। তারা তাদের সুকৌশলে যুক্তির মাধ্যমে বিতর্কের এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে। পক্ষে, একজনের যুক্তি ছিল, যে শিক্ষামূলক সমস্ত তথ্যই আমরা টিভি থেকে পেতে পারি।, ডিসকভারি চ্যানেল, নিক নামক চ্যানেলে, যেখানে হাতে কলমে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে। অপরদিকে বিপক্ষের যুক্তি ছিল, অনুষ্ঠানের মাঝেই প্রচারিত হওয়া অসংলগ্ন বিজ্ঞাপন নিয়ে। এছাড়াও অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে চোখের ও মানসিক চাপের কথাও বিতর্কের মাধ্যমে উঠে এসেছিল। শেষপর্যন্ত এক শিক্ষকের মন্তব্য, ‘সারসের মতো দুধটা খেয়ে চিনিটা রেখে দিতে হবে’।
অপর একটি বিতর্কের বিষয় ছিল, ‘ক্ষুদ্র রাজ্য জনকল্যান সাধন করে না’, যা কিনা এই সময় যথেষ্ট তাৎপর্যময় ও প্রাসঙ্গিক। সেইমতোই বিতর্কে উঠে আসে তেলেঙ্গানা, গোর্খাল্যান্ড, ছত্তিশগড় রাজ্য সমূহের কথা। পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে অখণ্ড ভারতবর্ষের কথা বলা হয়। রাজ্য চাইলেই রাজ্য হওয়া যায় না, তার জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, স্থিতিশীলতা। আবার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিপক্ষে অংশগ্রহণকারী এক ছাত্র বলে বড়ো রাজ্যে এই সমস্যাগুলি হচ্ছে বলেই ছোটো রাজ্যের দাবি আজ হচ্ছে যার উত্তর আর পক্ষে থাকা ছাত্রটির পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপর পক্ষে একটি ছাত্র বলে, ‘একসাথে জন্তুর মতো থাকার চেয়ে আলাদা মানুষের মতো থাকা ভালো’। যদিও এই মন্তব্যে পক্ষে থাকা প্রায় প্রত্যেকেই বলে আমরা ভারতবাসী, এক জাতি, এক দেশ, যদিও তারা আদিবাসীদের প্রতি বঞ্চনা অস্বীকার করতে পারেনি। আরও তর্ক বিতর্কের মধ্যেও দিয়ে উঠে আসল রাজ্যের আয়তনের ওপর তার সমৃদ্ধি নির্ভর করে না, কারণ ছোটো রাজ্য হিসেবে যেমন সিকিম সফল, তেমনি বড়ো রাজ্য হিসেবে তামিলনাড়ু সফল।
শেষপর্যন্ত শিক্ষকদের বক্তব্য ছিল, যে ভারতবর্ষ নিয়ে আমরা গর্ব করছি, তা ব্রিটিশদের বন্দুকের জোরে অধিকৃত ভারতবর্ষ। ভারতবর্ষ একটি যুক্তরাষ্ট্র। তাই সেক্ষেত্রে আমরা যদি বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসের ও বিভিন্ন জনজাতির উন্নয়নের কথা ভেবে ছোটো রাজ্য করি তাতে ক্ষতি কি? আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে মানুষ সুস্থভাবে বসবাস করবে। নাকি এমন রাষ্ট্র চাই, যেটা একটা ম্যাপ, যেখানে শুধু দ্রাঘিমা আর অক্ষাংশের ডিগ্রি থাকবে, কিন্তু মানুষ সুখে থাকবে না। আগে মানুষের উন্নয়নকে প্রাধান্য দিতে হবে। মানুষের উন্নয়ন হলেই রাজ্য, দেশ, পৃথিবীর উন্নয়ন হবে। শেষে শিক্ষক ও ছাত্রদের পারস্পরিক উপহারের মাধ্যমে এই সুন্দর অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
Leave a Reply