দৈনিক সমকাল পত্রিকাকে ব্লগার ইমরান এইচ সরকারের সাক্ষাৎকার
প্রশ্নঃ একাত্তরের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আপনারা প্রথম যখন এই শাহবাগে এসে দাঁড়ালেন_ কেমন ছিল সেই দিনটি? কীভাবে শুরু হলো? শুরুতে কি ভেবেছিলেন যে, কিছু মানুষের প্রতিবাদী অবস্থান আজকের দেশব্যাপী এমন আন্দোলনে রূপ নেবে?
ষষ সত্যিই আমাদের ধারণায় ছিল না। আমরা ধারণা করতে পারিনি এত মানুষ দেশকে ভালোবাসে।
শুরুটা কিন্তু দুই বছর আগে। আমাদের এই প্রতিবাদ কাদের মোল্লার রায়ের অনেক আগে থেকেই চলছিল। ‘ইউথ ফর পিস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামে আমাদের একটা যুব সংগঠন আছে। গত দুই বছর ধরে এই সংগঠনের মাধ্যমে আমরা সমাজ-রাজনীতির নানা জায়গায় সারাদেশে কাজ করতাম।
আমরা দেখি যে, আমাদের তরুণরা বেশিরভাগ সময়েই রাজনীতিবিমুখ থাকে। তারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নয়। এই সংগঠনটির উদ্দেশ্যই ছিল একটি রাজনীতিসচেতন, দেশাত্মবোধ সম্পন্ন তরুণ সমাজ গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতাম, নানা রকম কর্মশালার আয়োজন করতাম, দেশের বিভিন্ন সংকটে এগিয়ে আসার চেষ্টা করতাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল_ যে যে দলই করুক_ দেশ, সমাজ, রাজনীতি এসব বুঝে তারপর করুক। যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে আমরা তখন থেকেই সোচ্চার ছিলাম। আমরা চেষ্টা করতাম এর সঙ্গে কীভাবে আরও বেশিসংখ্যক তরুণদের সম্পৃক্ত করা যায়। ফেসবুকে এ সংগঠনের নামে পেজ খোলা হয়। ধীরে ধীরে তাতে অনেক সদস্য হতে থাকে। এর আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বা আছে এমন তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হতো। এর ঠিক এক বছর পর আমরা প্রজন্ম ‘৭১ নামে একটা ব্লগ চালু করি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা নানা জায়গায় লেখালেখি বা ব্লগিং করেন, তাদের এই ব্লগের মাধ্যমে সংযুক্ত করে একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে থাকি। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা, চর্চা চলতে থাকে। এখানে যুক্ত ব্লগারদের একটা নিয়মিত কাজই ছিল যে, দৈনিক কিছু না কিছু লিখতে হবে, না পারলে অন্তত পড়বে। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিল আমাদের নিয়মিত এই আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে ‘প্রজন্ম’ ব্লগটি আরও আরও পুরনো ব্লগগুলোর তুলনায় চার গুণ বেশি ভোট পেয়ে প্রথম হয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন ব্লগের ব্লগারদের এক জায়গায় এনে দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যে নতুন আরেকটি প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করি_ যার নাম ‘ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক’।
যার মাধ্যমে সব ব্লগের ব্লগাররা একসঙ্গে এসে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। তিন মাস ধরে কাজ করার পর ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে ব্লগ দিবসে আত্মপ্রকাশ করে এই ‘ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক’। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আমাদের নানা সংগঠনের এই ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ফেসবুকে একটা ইভেন্ট পোস্ট করে ডাক দেওয়া হয় শাহবাগে আসার। একে একে বন্ধুরা চলে আসে শাহবাগে। শাহবাগ হয়ে ওঠে প্রজন্ম চত্বর।
Leave a Reply