কামরুজ্জামান খান, মেচেদা, ৩০ এপ্রিল#
আমি মেদিনীপুরের মেচেদা, তমলুক ও পাঁশকুড়ার বিভিন্ন ধরনের ৬০-৭০ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, বেশিরভাগই মুসলিম। দেখেছি, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ শাহবাগ নিয়ে কিছু জানেই না। আর কুড়ি শতাংশ মানুষ শাহবাগ আন্দোলনটা জানে। তার মধ্যে দশ শতাংশ মানুষ মনে করে, ওটা বাংলাদেশের ব্যাপার। দু-তিন শতাংশ মানুষ আন্দোলন নিয়ে কিছু বলতে চায়নি। এক শতাংশ মানুষ মনে করে, ওটা বাঙালদের আন্দোলন। তিন শতাংশ মানুষ বলে যে, এটা একটা আন্দোলন যা একটা জাতি, একটা দেশ এবং বিশ্বকে প্রভাবিত করে আর অনেককিছুর পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। আর চার শতাংশ মুসলিম মনে করে, শাহবাগের পক্ষে যে বাঙালিয়ানার সুড়সুড়ি দিয়ে মিটিং মিছিল হচ্ছে, তা মুসলিম বিরোধী এবং বাঙালি বিরোধীও বটে।
এই অংশের এরকম মনে করার বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। সেটাকে এক জায়গায় করলে যা দাঁড়ায় : পৃথিবীতে আমেরিকার বুশ প্রশাসন থেকে শুরু করে ওবামা পর্যন্ত কত গণতন্ত্র এবং মানবতাবিরোধী কাজ করে চলেছে। কত নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, বিনা দোষে। তারা গোটা পৃথিবীকে লুঠ করে নিচ্ছে তাদের স্বার্থের জন্য। যুদ্ধের দামামা বাজছে প্রতিনিয়ত। তাদের জন্য তো কেউ আন্দোলন করেনি। বুশ ও ওবামার তো আগে বিচার হওয়া উচিত। এদের ফাঁসি চেয়ে তো আগে আন্দোলন করা উচিত। এরা প্রাচীন সভ্যতার উৎস ইরাককে ধ্বংস করেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে খুন করেছে। আজকের পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দ্রোন হামলা করে, প্রতিনিয়ত কত সাধারণ মানুষকে হত্যা করে চলেছে তারা। তার প্রতিবাদ কই? বাঙালি জাতিসত্ত্বা, ভাষাগত আনুগত্য, আমরা গর্বিত বাঙালি, এসব মেকি কথা। কিছুদিন আগে ভারতের আসাম রাজ্যের বোড়োল্যান্ডে বোড়োদের দ্বারা যে বাঙালি খেদাও অভিযান হল, কত বাঙালি মানুষের প্রাণ গেল। কত বাঙালি মানুষ গৃহহারা হল। তার আগে ও পরে মায়ানমারে একের পর এক বাঙালিদের ওপর অত্যাচার শুরু করে সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষ। কত বাঙালির প্রাণ নিল। লক্ষ লক্ষ টাকার ধনসম্পদ লুঠ করে লক্ষ লক্ষ বাঙালিদের দেশছাড়া করল। তাদের জন্য কই বাংলার রাজপথে কোনো আন্দোলন হয়নি তো! তার বেলায়? তারা শুধু গরিব ও নিরীহ বাঙালি মুসলমান বলে? যারা শাহবাগ নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছে কলকাতায়, তারা গোটা বাঙালির নয়, তারা কোনো এক শ্রেণীর হয়ে মিটিং মিছিল করছে। তাদের পুরো বাঙালি জাতির অভিভাবক হওয়ার মতো নিরপেক্ষতার সাহস নেই …।
Leave a Reply