২২ মার্চ, সংবাদমন্থন প্রতিবেদন#
গতকাল কলকাতায় অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে দুপুর আড়াইটেয় জমায়েত হয়েছিল শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে ছিল ‘হেতুবাদী’, ‘রবিশস্য’, ‘অনীক’, ‘তবু বাংলার মুখ’, ‘রূপান্তর’, ‘মন্থন’, ‘দামামা’ সহ বেশ কিছু লিট্ল ম্যাগাজিন, মানবাধিকার সংগঠন, নাট্যসংস্থা, ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান গণমঞ্চ ও মহিলা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে এখান থেকে মিছিল যাবে সৈয়দ আমির আলি এভিনিউতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের দপ্তরে। সেখানে শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থনে স্মারকলিপি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করা হবে। সেই মর্মে ২০ মার্চ হেস্টিংস থানায় চিঠি দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। জমায়েত-স্থলে পৌঁছেই দেখা যায় বেশ আগে থেকেই সেখানে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা ঢাল এবং লাঠি নিয়ে যেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আর দেখা যায় মিডিয়া-কর্মীদের, তারাও ক্যামেরা ও সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত। মিছিলের প্রস্তুতি শুরু হল। সকলকে ‘শাহবাগ নতুন প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের পাশে আমরা ভারতবর্ষ’ লেখা ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হল। লিফলেট বিতরণ চলতে থাকল। প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে সকলে উপস্থিত। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হল, মিছিল করতে দেওয়া হবে না। কেন? কোনো কারণ নেই, ‘অর্ডার আছে’।
জমায়েতে সামান্য কিছু প্রারম্ভিক বক্তব্য রেখে সকলের মত নেওয়া হল। সকলেই একবাক্যে সায় দিলেন যে আমরা মিছিল করব। দুপুর তিনটে নাগাদ সকলে সারিবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে এল। কিন্তু মিছিলের পথরোধ করে দাঁড়াল পুলিশ বাহিনী। সেখানেই শুরু হল শ্লোগান এবং সমবেত গান ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা …’। চওড়া প্রশস্ত রাজপথে যানবাহন আটকে গেল। এবার পুলিশ ঢাল দিয়ে সকলকে চেপে ফুটপাতে উঠতে বাধ্য করল। তাতে কিছুটা ধ্বস্তাধ্বস্তি হল। যারা রুখে দাঁড়াল, তাদের আটক করে পুলিশভ্যানে তোলা হল। কিন্তু বিক্ষোভ চলতে থাকল। যেহেতু আন্দোলনের প্রস্তুতি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং কোনোভাবেই আশা করা যায়নি যে সরকারি প্রশাসন মিছিল করতে দেবে না। ফলে সকলে হতবাক হয়ে গেল। প্রশাসনের এই ভূমিকা ছিল অপ্রত্যাশিত এবং লজ্জাজনক। অথচ জামাত-ই-ইসলামের সমর্থনে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৬টি সংগঠনকে কলকাতার বুকে ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল করতে দেওয়া হয়েছে।
গণতন্ত্রের কী অপূর্ব মহিমা! এই সরকারের মন্ত্রীরা আবার একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে, ভাষাশহিদদের সম্মান জানায় — সবটাই এদের নাটক! রাজনীতির এই নাটুকে ভণ্ডামির অবসান দরকার। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এই ভণ্ডামির মুখোশ খুলতে পথে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গকেও সেই পথ নিতে হবে।
Leave a Reply