রবিন পাল#
নিত্যনতুন প্রসঙ্গে নিয়োজন আমাকে বিস্মিত করে চলে। আইনজীবী শান্তিরঞ্জন বসু লিখে ফেলেছেন একটা নয় দুটো বই ডুয়েল নিয়ে — তাতে বিস্ময়ের ইয়ত্তা নেই। ডুয়েল এক প্রাচীন পাশ্চাত্য ঐতিহ্য, প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় অপমান এর উৎস, যুদ্ধাস্ত্র তলোয়ার থেকে আধুনিক কালে পিস্তল। এখন অবশ্য ডুয়েল কঠোরভাবে বেআইনি। শান্তিরঞ্জনের মতো আমরাও দেখে অবাক হই যে বহু রাজা, লেখক, শিল্পী, কবি, সমালোচক, ডাক্তার, উকিল ডুয়েল লড়েছেন। আসলে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা যেমন সত্য, অপমান তেমন অনিবার্য, তাই ডুয়েল ঘটেছে বারে বারে। ডুয়েলের নানা নিয়ম ছিল। যেমন, যাকে চ্যালেঞ্জ করা হত তারই ছিল স্থান, সময়, যুদ্ধাস্ত্র নির্ধারণের অধিকার। একটি বইতে তিনি হাজির করেছেন মাদাম কুরীকে নিয়ে ডুয়েল, দুরান্তী ও মানের ডুয়েল, মার্ক্সের ডুয়েল, মার্টিনভ ও শেরমনতভের ডুয়েল, ভলতেয়ারের ডুয়েল, টুপি নিয়ে ডুয়েল প্রভৃতি। বর্ণিত একুশটি ডুয়েলের প্রতিন্দ্বন্দ্বীরা সবাই অবশ্য আজকের পাঠকের পরিচিত নন, তবে তারা সমকালে ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে যথেষ্ট খ্যাত। আর একটা কথা, এইসব ডুয়েলে নারী অনেক ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হলেও অনেক ক্ষেত্রে নয়। তুচ্ছ অহং বোধে ধাক্কাও অনেক ক্ষেত্রে এই প্রাণঘাতী দ্বন্দ্বযুদ্ধের কারণ হয়েছে। শান্তিরঞ্জনবাবুর কৃতিত্ব নানাবিধ। ক) তিনি যথাসম্ভব নাটকীয় কাহিনী নির্মাণ করে প্রতিটি অধ্যায়কে রচনা করতে সচেষ্ট হয়েছেন। খ) সংলাপে, বর্ণনায়, উপস্থাপনায় আছে সহজতা — যাতে সাধারণজন লেখাগুলি হাতে তুলে নিতে পারে। গ) প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে আছে বর্ণিত ডুয়েল তথ্যের উৎস। এই একুশটি ডুয়েল কাহিনী রচনার জন্য তাঁকে যে কত বই ঘাঁটতে হয়েছে তা ভেবে অবাক হই।
দ্বিতীয় বইটি হল — ‘ডিরোজিও-র ক্লাস’। আপাতদৃষ্টিতে বইটি ডুয়েল প্রসঙ্গে কেন তা নিয়ে ধন্ধ তৈরি হতে পারে। আসলে ১৮২৯ সালে ৫ ও ৬ জুন ডিরোজিও হিন্দু কলেজে ক্লাস নিয়েছিলেন। দুদিনই ক্লাসের বিষয় ছিল ‘ডুয়েলের সার্থকতা’। এক ফরাসি গবেষক লেখক ভিক্টর জাকমঁ তাঁর রোজনামচায় লেখেন যে তিনি এই ডুয়েল বিষয়ক বক্তৃতায় হাজির ছিলেন। ডিরোজিও তাঁর বক্তৃতায় ৫২টি ডুয়েলের উল্লেখ করেছিলেন, যে তালিকাটি বইয়ের ১০০-১০১ পৃষ্ঠায় দেওয়া আছে। আমার দুটো বিষয়ে কৌতূহল — ডিরোজিও হঠাৎ এমন একটি বিষয় নিয়ে দুদিন বক্তৃতা দিলেন কেন? সে কি কারো অনুরোধে? এই বক্তৃতার বিবরণ বা লিখিত প্রবন্ধ কোথায় পাওয়া যাবে? বইটির শেষে অবশ্য দুটি বাংলা সমেত ২৬টি বইয়ের উল্লেখ আছে। যদিও রমাপ্রসাদ দে সম্পাদিত ডিরোজিও বষয়ক প্রবন্ধ সঙ্কলনটি এবং শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় সঙ্কলিত বইদুটির উল্লেখ নেই। এ বইয়েরও প্রশংসনীয় গুণ — অতীব আকর্ষণীয় উপস্থাপন এবং তথ্যের প্রতি মনোযোগ। প্রবীণ এই লেখক গবেষকের বইদুটি কৌতূহলমনস্ক পাঠককে আকৃষ্ট করুক এই কামনা করি।
ডুয়েল, একটি নিষিদ্ধ পাশ্চাত্য ঐতিহ্য, শান্তিরঞ্জন বসু, নন্দিতা, ১০০ টাকা।
ডিরোজিওর ক্লাস, শান্তিরঞ্জন বসু, বাঙলার মুখ, ১৪০ টাকা।
Leave a Reply