শমিত আচার্য, শান্তিপুর লোকালের নিত্যযাত্রী, ১২ ফেব্রুয়ারি#
ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষোভ আছড়ে পড়ল ট্রেনের ড্রাইভারের ওপর। ৫ই ফেব্রুয়ারি ডাউন শান্তিপুর লোকালের একদল যাত্রী ভীষণ বিরক্ত হয়ে ড্রাইভারের কেবিনে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে এবং অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকে। ঘটনার সূত্রপাত হয় বেলঘরিয়া ও দমদম স্টেশনের মধ্যবর্তী (আউটার) জায়গায়। প্রায় চল্লিশ মিনিট বিলম্বে চলা ‘শান্তিপুর লোকাল’টি সিগন্যাল না পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনের এই দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীদের একাংশ বেশ কিছুদিন ধরেই বিরক্তই ছিলেন। অসহিষ্ণু নিত্যযাত্রীরা ট্রেনের মধ্য থেকে ড্রাইভারকে হর্ন দিতে অনুরোধ করতে থাকেন, কিন্তু ড্রাইভার যাত্রীদের এই কথায় কর্ণপাত করেন না। প্রায় আধঘন্টা ট্রেনটি একই জায়গায় নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ কিছু যাত্রী তিতিবিরক্ত হয়ে লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করেন।
অন্য দিক থেকে পিছনে ডাউন ট্রেন দু-নম্বর লাইনে এসে পড়লে যাত্রীদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায় এবং ক্ষিপ্ত যাত্রীরা অকথ্য গালিগালাজ সহ ড্রাইভারের কেবিনে পাথর ছুঁড়তে শুরু করলে কেবিনের মধ্য থাকা ড্রাইভার সহ প্রায় ছ-জন ইউনিফর্মধারী রেলকর্মী ট্রেনের ট্র্যাকে নেমে একজন সক্রিয় প্রতিবাদী রেলযাত্রীকে কেবিনে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং মারতে উদ্যত হন। অন্য প্রতিবাদী রেলযাত্রীদের প্রতিরোধে তা সম্ভব না হলেও ড্রাইভার সহ রেলের কর্মীরা জিআরপিএফ-এর ভয় দেখাতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী এই প্রতিবেদকের মনে হয়েছে প্রতিদিনের রেল-বিলম্বের দুর্ভোগে এই আচরণ রেলযাত্রীদের স্বাভাবিক। অন্যদিকে সেদিনের ঘটনায় রেলযাত্রীরা যেমন ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং পাথর ছুঁড়তে শুরু করেছিলেন তাতে রেলকর্মীদের বড়ো রকমের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ছিল। একজোট হয়ে ছ-সাতজন রেলকর্মী কর্মরত অবস্থায় যেভাবে আউটার ট্রেন-ট্র্যাকের ওপর নেমে এসে ক্ষিপ্ত রেলযাত্রীদের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়েছিলেন তা কতটা শোভন? তাঁরা তো কেবিনের মধ্যে সুরক্ষিত থাকতে পারতেন। তা না করে যাত্রীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া এবং তা কর্মরত অবস্থায়, তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং অবশ্যই এ ব্যাপারে ঊদ্ধর্তন কতৃপক্ষকে ভাবতে হবে? শিয়ালদহের নর্থ শাখার রেলের কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে যে কোনোদিন বড়ো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এবং রেল কর্তৃপক্ষ তার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।
বর্তমান শিয়ালদহ নর্থ শাখার যাত্রী পরিষেবা যথেষ্ট খারাপ। বিধাননগর স্টেশন থেকে শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছাড়ার পর ট্রেনটি শিয়ালদহ প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে প্রায় প্রতিদিনই আধ ঘন্টা সময় লাগছে। এর ফলে নিত্যযাত্রীদের প্রতিদিন কাজের জায়গায় হয়রান হতে হচ্ছে। এর মধ্যে রেলকর্মীদের এহেন আচরণ সাধারণ নিত্যযাত্রীদের কাছে ভুল বার্তা দেবে। অতি সম্প্রতি রেলের ভাড়া বৃদ্ধি পরও রেল পরিষেবার কোনো উন্নতি হয়নি। তাই এখন থেকে প্রতিদিন রেলকর্তৃপক্ষকে নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
Leave a Reply