- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

শান্তিপুর পৌরসভার নাট্যোৎসব ‘ইস্কুল থেকে মঞ্চে’ চার বছরে পড়ল

প্রদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়, শান্তিপুর, ৫ অক্টোবর#

নাট্যোৎসবের ছবি উজান চট্টোপাধ্যায়ের তোলা।
নাট্যোৎসবের ছবি উজান চট্টোপাধ্যায়ের তোলা।

শান্তিপুর পৌরসভা আয়োজিত চতুর্থ ‘আন্তঃ বিদ্যালয় নাট্য উৎসব’ হল বাণীবিনোদ নির্মলেন্দু লাহিড়ী মঞ্চে (পাবলিক লাইব্ররি হল)।
আজ থেকে ৫০০ বছর আগে শ্রী চৈতন্যদেবের হাত ধরে শান্তিপুরে শুরু হয়েছিল নাট্যাভিনয়। এরপর কত কত গুণী শিল্পী তাঁদের অভিনয় সৃজনে গৌরব দান করেছেন শান্তিপুরকে। নাট্য উৎসব ২০১৩-এর সূচনা হয়েছিল ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল আটটায় এক পদযাত্রার মাধ্যমে। যেখানে অংশগ্রহণ করে শান্তিপুর পৌর এলাকার মধ্যেকার সমস্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকা, পৌরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা, শান্তিপুরের নাট্যদল ‘শান্তিপুর সাংস্কৃতিক’, ‘শান্তিপুর রঙ্গপীঠ’ ও ‘শান্তিপুর সাজঘর’। এছাড়া শামিল হয় শান্তিপুরের পৌরপ্রধান তথা বিধায়ক অজয় দে সহ পৌরসভার নাট্য অনুরাগী কর্মীবৃন্দ।
তিনদিনব্যাপী উৎসবের প্রথমদিন ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার প্রদীপ জ্বালিয়ে এই নাট্যোৎসব ‘ইস্কুল থেকে মঞ্চে’ উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, শান্তিপুরের এত মানুষ নাট্যচর্চা করে, কিন্তু এখানে একটা আধুনিক মঞ্চ নেই। শান্তিপুরে তাঁর দেখা ১৫ বছর আগের এই নাট্যমঞ্চ এখনও অপরিবর্তিত। একটি ভালো নাট্যমঞ্চ তৈরির প্রয়াস নিতে বলেন তিনি।
দুপুর বারোটায় ‘ম্যাকবেথ’ পরিবেশন করে তুষ্টলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। দুপুর ১টায় সূত্রাগড় এম.এন. উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্ররা উপস্থাপিত করে ‘জাবাল সত্যকাম’। দুপুর ২টোয় মঞ্চস্থ হয় সূত্রাগড় মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনীত নাটক ‘যদিও সন্ধ্যা’। সন্ধ্যে ৭টায় ‘শান্তিপুর রঙ্গপীঠ’ নাট্যদল ‘হে মানুষ’ নাটকটি পরিবেশন করে।
নাট্য উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শান্তিপুর তন্তুবায় সংঘ উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নাটক ‘লঙ্কা দহন পালা’, রাধারাণী নারী শিক্ষামন্দির উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃক উৎসবের একমাত্র ইংরাজী নাটক ‘রাইস বাউল উইসেস’ উপস্থাপিত হয়। শরৎকুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা উপস্থাপিত করে শেক্সপীয়ারের গল্প অবলম্বনে নাটক ‘ঝড় তুফান’, দুর্গামান শ্রী পাঠশালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা শেক্সপীয়রের নাটক অবলম্বনে ‘ভুলের মজা’ মঞ্চস্থ করে। রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠ উচ্চ-বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা শুভাশিস গাঙ্গুলির লেখা নাটক ‘যখন ডাকঘর আছে অমল নেই’ মঞ্চস্থ করে। ‘শান্তিপুর সাংস্কৃতিক’ ছোটোদের নাটক ‘আকাশে মাটিতে’ প্রদর্শিত করে।
তৃতীয় তথা শেষ দিনে শান্তিপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা পরিবেশন করে ‘দিগন্তের ওপারে’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুইবিঘা জমি অনুকরণে)। এছাড়া শান্তিপুর হিন্দু উচ্চ বিদ্যালয়ের তরফে অভিনীত হয় ‘উল্টোপথে’ এবং শান্তিপুর ওরিয়েন্টাল অ্যাকাডেমীর ছাত্রদের দ্বারা অভিনীত হয় নাটক ‘দাশুর কীর্তি’। সূত্রাগড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বারা পরিবেশিত নাটক ‘ভেনিসের সওদাগর’ শেক্সপীয়রের কাহিনী অবলম্বনে। সন্ধ্যায় নারীর মঞ্চ অভিনীত ‘অনাম্নী অঙ্গনা’ নাটকটি পৌরসভা কর্তৃক পরিবেশিত হয়।
উৎসবে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বিদ্যালয়কে ৫০০০ টাকা অনুদান দেওয়া হয় নাটকগুলি মঞ্চস্থ করতে সাহায্য করার জন্য। এছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাতে স্মারক ‘স্কুল থেকে মঞ্চ’ তুলে দেওয়া হয় পুরসভার তরফে। শান্তিপুরের তিনটি নাট্যদল ‘শান্তিপুর সাংস্কৃতিক’, ‘শান্তিপুর রঙ্গপীঠ’ ও ‘শান্তিপুর সাজঘর’ এই নাট্য উৎসবকে সাফল্যমণ্ডিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে গত একমাস ধরে।
নাট্য উৎসবে আমন্ত্রণপত্র দ্বারা শান্তিপুর পৌরসভা ৩৮০টি দর্শকাসন বিশিষ্ট নাট্যমঞ্চে উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে বহু ছাত্র-ছাত্রী প্রবেশের অনুমতি না পেয়ে হতাশ হয়। বিদ্যালয়ের তরফে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ গ্রহণ সত্ত্বেও শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপস্থিতির হার ছিল নগন্য। ফলে অনেক সময় নাটক দেখতে না শেখা ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে নাটক পরিবেশনে বাধার সৃষ্টি হয়েছে যা আয়োজকদের চিন্তিত করেছে।