২৬ জুলাই, শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজিরতন, মেটিয়াবুরুজ#
বিষ্ণুপুর থানার অন্তর্গত এনায়েতনগর মাগুরা এলাকায় ভোটকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমি এক দারুণ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হলাম। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংঘর্ষ, ভীতিপ্রদর্শন, বুথদখল, খুন-জখম প্রভৃতি ঘটনায় পূর্বের মতোই কলঙ্কিত, কালিমালিপ্ত। সেখানে তিন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের গ্রামপঞ্চায়েতের প্রার্থী একসঙ্গে বসে চা খাচ্ছেন, গল্প করছেন, ‘কোনো ঝামেলা হতে দেব না’ বলে শপথ করছেন, চলতি অস্থিরতার বাজারে কি ভাবা যায়? তাই-ই করে দেখালেন মাগুরা এনায়েতনগরের প্রার্থী, সমর্থক ও বাসিন্দারা। এ এক অনন্য নজির। আশ্চর্যের কথা, ওই গ্রামে আমি কোনো মাতব্বরও দেখলাম না। যদিও আমি ভোটের আগের দিন এবং ভোটের দিন বেলা তিনটের পর পুরো পাড়াটা চষে বেড়িয়েছি। মানুষজনের একটাই কথা, যাকে সকলে মিলে বেছে নেবে, সেই জয়ী হবে। অবশ্যই সে পাড়ার জন্য কিছু কাজ করবে — এই তাদের আশা।
আমার ভোটকেন্দ্রটির নাম ছিল দারুস সালাম ফ্রি প্রাইমারি স্কুল। ভোটকেন্দ্রটি দুটি বুথে ভাগ করা হয়েছিল ৬৪/১ এবং ৬৪/২, মোট ভোটারের সংখ্যা ১৩০০। মোট ১১৫০ ভোট পোল হয়েছে। যাদের ভোট দেওয়া হয়নি, তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন যুবক জীবন ও জীবিকার তাগিদে দেশের বাইরে আরবদেশে রয়েছে। সম্পূর্ণ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। কোনো ঝামেলা নেই, নেই রেষারেষি। নামকরা খবরের কাগজের পাতায় প্রতিদিন জ্বলজ্বল করে — মুসলিমপ্রধান এলাকায় খুন-জখম-রাজনৈতিক হানাহানির খবর। সরু সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তা, দুপাশে গড়ে ওঠা ছোটো-বড়ো বাড়িঘর, পুকুর, মাঠ, চাষজমিতে মোড়া গ্রামটির প্রাকৃতিক দৃশ্য বড়োই মনোরম। তার চেয়েও মনোরম গ্রামবাসীদের ব্যবহার। ভোটের আবহ থেকে সম্পূর্ণ টেনশনমুক্ত এলাকা। অথচ বুথের লাইট, পাখা, বাথরুম তিনদলের কর্মী-সমর্থকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্যবস্থা করে দিলেন। আমাদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করলেন এক ছোট্ট চা-দোকানের মালিক জাকিরদা। পরদিন দুপুরেও খাওয়া হল তাঁর কাছে। একেবারে আত্মীয়ের মতো ব্যবহার তাঁর।
ভোটের দিন সকাল থেকেই লম্বা লাইন। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। এর একটা কারণও আছে। রমজান চলছে, প্রত্যেকেই রোজা রেখেছে। মহিলাদের অনেক কাজ। সংসার সামলানো, সন্ধ্যায় ইফতারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এত ব্যস্ততার মাঝেই আমার বুথে ৩০৮ জন মহিলা ভোটারের মধ্যে ৩০০ জন ভোট দিল। খবর নিয়ে জানলাম নবতিপর কয়েকজন মহিলা অসুস্থতার জন্য ভোট দিতে পারেনি। ওখানকার মহিলারা যেন পুরুষদের যোগ্য সঙ্গিনী। বোরখা পরার প্রচলন নেই। ওখানে মুসলিম হলেও ওদের কোনো আড়ষ্টতা, দ্বিধা নেই। অল্পবয়সি যুবতীরা পড়াশুনায় রত। দারুণভাবে মিশল ওরা, রসিকতার পাল্টা রসবোধ পাওয়া গেল ওদের কাছ থেকে। শহরের ভালো গুণগুলি গ্রহণ করলেও শহরের কৃত্রিমতার ছোঁয়া এখনও ওদের স্পর্শ করেনি। সহজ, সরল, গ্রাম্য সজীবতায় ওরা বেশ চনমনে।
Leave a Reply