রিটিশ শাসিত ভারতে ১৯৩৬-১৯৫৬ পর্বে একটা সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আমরা বাঙালিরা তাকে ‘প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘ’ নামে জানি। এই আন্দোলনকে প্রায়ই সরলভাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একটা শাখা সংগঠনের আন্দোলন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই সাহিত্য-আন্দোলনের পরিচয় এত সরল ছিল না। সেই সাহিত্য-আন্দোলনের ঘূর্ণাবর্তে যে লেখক-সাহিত্যিকরা এসে পড়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন সাদাত হাসান মান্টো। ভারত বিভাজনের আগে প্রগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কখনোই ‘পার্টির লোক’ বলে শনাক্ত করা যাবে না।
উর্দু সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ছোটোগল্প লেখক সাদাত হাসান মান্টো ১৯১২ সালের ১১ মে জন্মেছিলেন পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার সামরালায়, মধ্যবিত্ত এক কাশ্মীরি পরিবারে। তখন সময়টা ছিল খুবই অস্থির। জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যার সময় তাঁর বয়স ছিল সাত। ওই পটভূমিতে তখনই তিনি লেখেন তাঁর প্রথম গল্প ‘তামাশা’, অবশ্য পুলিশের ভয়ে ছদ্মনামে।
তাঁর ইস্কুল-কলেজের শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে মান্টো নিজেই লিখেছেন : ‘সেই অস্থিরচিত্ত মানুষটি, যার নাম সাদাত হাসান, এর পর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য প্রায় খেপে উঠল, ব্যাচিলর ডিগ্রির জন্য এন্ট্রান্স পরীক্ষায় (এফ এ পরীক্ষায়) ফেল করল দু-বার এবং থার্ড ডিভিসনে পাস করল।
শুনে আপনারা আশ্চর্য হবেন যে, সে তার উর্দু পেপারে সব সময়ে ফেল করেছে। এখন যখন মানুষজন বলাবলি করে যে, সে একজন মহৎ উর্দু লেখক, আমি শুধু হাসি, কারণ, এমনকী এখনও সে উর্দু ভাষাটা জানে না।’
তাঁর যখন ২১ বছর বয়স, তখন অমৃতসরের আবদুল বারি আলিগ-এর উৎসাহে মান্টো অনুবাদ-সাহিত্যের কাজে হাত দেন। ১৯৩৬ সালে বোম্বাইয়ে থাকাকালীন তিনি হিন্দি ফিল্মের চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন। ১৯৪১ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে চাকরি নিয়ে দিল্লিতে আসেন এবং উর্দু চ্যানেলের জন্য লেখার কাজ করেন। ভারত ভাগের পর ১৯৪৮ সাল থেকে তিনি লাহোরবাসী। সেখানে মাত্র সাত বছর বেঁচেছিলেন তিনি। এই সামান্য সময়ে তিনি তাঁর লেখক-জীবনের সর্বোত্তম ফসল ফলিয়েছেন : ‘ঠান্ডা গোস্ত’, ‘খোল দো’, ‘টোবা টেক সিং’ এবং আরও অনেক নানা ধরনের লেখা। লিভারের সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি এক প্রচণ্ড শীতের দিনে তাঁর মৃত্যু হয়। এই স্বল্প জীবৎকালে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারত-পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ছোটোগল্প লেখক।
সূত্র : সাদাত হাসান মান্টো : কী এবং কেন, ভূমেন্দ্র গুহ, নন্দন, জানুয়ারি ২০১২ সংখ্যা
SAJAHAN SEIKH says
I like sadad hossain mano . your writing is so cute and meaningful. salam salam ………………