শুভপ্রতিম রায়চৌধুরী, মাসুম, ৯ নভেম্বর#
সকাল দশটার সময় লোবা গ্রামের সন্নিকটে তেমাথা মোড়ে (যেখানে আর্থমুভার রাখা আছে) আমরা উপস্থিত হই। প্রথমেই কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, যারা ৬ নভেম্বর কথিত সংঘর্ষের প্রত্যক্ষদর্শী। এমনই একজন কালীচরণ মণ্ডল, যার পায়ে তখনও পুলিশের লাঠিচার্জের আঘাতচিহ্ন বর্তমান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথামতো সেদিন সুর্য ওঠার আগেই তিরিশ পঁয়ত্রিশটি গাড়ি নিয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়। আশপাশের সমস্ত গ্রাম থেকেই গ্রামবাসীরা দিনে ও রাত্রে সেই আর্থমুভারটি পাহারা দিয়ে থাকে রুটিন অনুযায়ী। কালীচরণবাবুর সেদিন পাহারা দেওয়ার ডিউটি ছিল। প্রথমেই পুলিশ এসে আর্থমুভারটি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যে বলে। উপস্থিত গ্রামরক্ষীরা তাতে আপত্তি করলে এবং কৃষিজমি রক্ষার জন্যে স্লোগান দিতে থাকলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশ শাসাতে থাকে, তাদের কথামতো কাজ না হলে তারা শক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকবে। এই চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের গ্রামের শ-খানেক মানুষ জড়ো হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তা আরও বাড়তে বাড়তে হাজার খানেকে পৌঁছায়।
পুলিশ প্রথমে লাঠি চালিয়ে গাড়িটির কাছে পৌঁছবার চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ বাড়াতে থাকে। শুরু হয় হাতাহাতি। পুলিশ আকাশে ফায়ারিং করে। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন দিক থেকে ঢিল ছোঁড়া শুরু হয়। অল্প অন্ধকারে সে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। পুলিশও রাস্তায় জমে থাকা ঢিলগুলো ছুঁড়তে থাকে গ্রামবাসীদের দিকে। এরকমভাবে প্রায় এক ঘণ্টার কাছাকাছি লড়াই চলার পর পুলিশ গুলি চালায়। বেশিরভাগ গুলিই পা লক্ষ্য করে চালানো হয়।
সেদিনের এই পুলিশি অভিযানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপারের সাথে পার্থ ঘোষ, ডিএসপি, হেডকোয়ার্টার বীরভূম। দুবরাজপুর থানায় তাঁকে গুলিচালনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত গ্রামবাসীদের সাথে বহিরাগত শক্তির উপস্থিতির কথাও তিনি অস্বীকার করেন। পুলিশ আটজন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধানোর বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনেছে (ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ধারা ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৩৮, ১৮৬, ৩৫৩, ৩২৬, ৩০৭, ৪২৭। আর্মস অ্যাক্টে ধারা ২৫, ২৭, ৩৫)।
গুলিতে আহত পূর্ণিমা ডোম, বয়স ৩০ (ডান পায়ের পাতায় গুলি লেগে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে যায়) সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, পরে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওইদিন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাঁর ছেলে ওখানে চলে গিয়েছিল। তিনি তখন দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করে আনতে গিয়ে গুলি খান। ভূমিহীন বাড়ি। পূর্ণিমা বামুন কায়স্তদের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন বলে জানালেন।
Leave a Reply