সোমনাথ চৌধুরি, কোচবিহার, ১৫ নভেম্বর#
গতকাল ১৪ নভেম্বর রাতে ৯ টা নাগাদ আমার এক বন্ধু ফোন করে লবনের দাম জানতে চাইল, তা আমি আমার জানা দামটা জানাতে সে হেসে বলল যে এখন আর ওই দাম নেই। কেজি ২০০–২৫০ টাকা চলছে। আমি ভাবলাম রসিকতা। পরে ফেসবুক-এ দেখি কোচবিহারের কিছু পেজ বা ব্যাক্তিগতভাবেও লবনের দাম নিয়ে আপডেট বা আলোচনা চলছে। মনে হয়েছিল কোথাও কোন একটা গণ্ডগোল চলছে।
সকালে কাজের মাসি আসার পর তার কাছে জানলাম, লবন নিয়ে মারামারি পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে কোচবিহারের টাকাগাছ অঞ্চলে। সেখানে এক দোকানে একটা বাচ্চা ছেলেকে তার বাড়ি থেকে জিনিসপত্র আনার জন্যে পাঠিয়েছিলেন তার বাড়ির লোক। তা সেই জিনিসপত্রের মধ্যে লবনও ছিল। সেখানে দোকানদার এক কেজি লবন ৩০০ টাকার কমে দিতে অস্বীকার করলে ছেলেটি চলে যায়। একটু পরেই তার বাড়ির লোক এসে হামলা চালায় দোকানে। সাথে আরো কিছু লোকও ছিল। সেখানকার বাকি দোকানদার ও কিছু স্থানীয় লোকের মধ্যে প্রথমে বচসা ও পরে মারামারি লাগে। তবে কিছু প্রভাবশালী মানুষের মধ্যস্ততায় তা আর বেশি দূর গড়ায়নি।
এরপর আমি বাজারের দিকে যাই, দেখি জায়গায় জায়গায় লোকের ভিড়। তখনও আমার মাথায় লবন-গুজব সংক্রান্ত ব্যাপারটা সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। কিছুদিন হল সরকারি দামে আলু পেঁয়াজ বিক্রিতে এরকম লাইন দেখেছিলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম লবন বিক্রি হচ্ছে। একটু আধটু না, বস্তায় বস্তায় লবন বিক্রি হচ্ছে, তখন পর্যন্ত দাম ১৫০ টাকার আশেপাশে। একটু খেয়াল করে দেখলাম প্রায় সবার হাতে অন্তত এক প্যাকেট করে লবন আছেই। কিন্তু লবন কেন পাওয়া যাবে না, সেই কারনটা কেউই জানে না, শুধু জানে, আগামীকাল থেকে লবন পাওয়া যাবে না। দেশে এমন কোনো ভৌগলিক পরিবর্তন হয়নি, লবন কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যায়নি, বা লবন কেনার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ভারতবর্ষের অন্য কোনও রাজ্যে, এমনকি দক্ষিণবঙ্গেও এই জাতীয় কোনও ঘটনা ঘটেনি। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে লবন শেষ হয়ে যাবে? ১৯৯৬ সালে গণেশের দুধ খাওয়ার গুজবের প্রভাব সারা দেশে ছড়িয়েছিল। মানুষের কাছে তখন যোগাযোগ ব্যাবস্থার সুযোগ খুবই সীমিত ছিল আর খবরের চ্যানেল তো ছিলো না বললেই চলে। কিন্তু আজকের দিনেও যদি একই ঘটনা ঘটে যেতে থাকে তাহলে আর উন্নততর হয়ে চলার কোন ফলাফল নেই।
বাজার থেকে বাড়ি ফিরে আবার ফেসবুকে দেখলাম শিলিগুড়ি, ইসলামপুর, নক্সালবাড়ি থেকে মালদা পর্যন্ত এই গুজব ছড়িয়েছে। এবারে রাস্তা দিয়ে এই গুজব না ছড়ানো ও গুজনে কান না দেওয়ার আবেদন শোনা গেল মাইকে, সরকারের পক্ষ থেকে, তখন ১১টার কাছাকাছি ঘড়িতে। আবার বাজারে গেলাম, দেখলাম লবন বিক্রি বন্ধ হয়নি। তবে ন্যায্য দামে পুলিশ প্রহরায় লবন বিক্রি হচ্ছে সেই সব দোকাণগুলো থেকেই। শুধু একটা ব্যাপারই অপরিবর্তনীয়, তা হল লবন কেনার পরিমাণ।
আজকে বাজারে মাংসের (পোল্ট্রি মূর্গী) দামকেও (১৫০ টাকা/কেজি) টেক্কা দিল লবনের দাম। ঝোলা হাতে বাজার থেকে ফেরার সময়ে একজন জিজ্ঞাসা করলেন- কত কেজি? আমি মুচকি হেসে চলে গেলাম। মনে পড়ছিল সেই গোপাল ভাঁড়ের ইলিশ মাছ কেনার গল্পটার কথা।
Leave a Reply