মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন, কলকাতা, ৩০ জানুয়ারি, রোহিঙ্গা কিশোরীর ছবি ইন্টারনেট থেকে#
মায়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধদের অত্যাচার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল রোহিঙ্গা মুসলিমরা। খুঁজছিল আশ্রয়। কাঁটাতার পেরিয়েই হল হাজতবাস। সঙ্গে পুলিশি জুলুম। হিলি সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে তারা। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে তারা বালুরঘাট ডিস্ট্রিক জেলে বন্দি।
এদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলাকে রাখা হয়েছে বালুরঘাট ডিস্ট্রিক জেলে। এদের মধ্যে ছিল দুজন শিশু। দলছুট হয়ে একজন শিশু হারিয়ে গিয়েছে। আর একজন শিশুকে জুভেনাইল জেলে পাঠানো হয়েছে। আশ্রয়ের খোঁজে এসে ঘরছাড়া রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হল হাজতে।
রোহিঙ্গাদের মুক্তির জন্য বালুরঘাট কোর্টের আইনজীবী মাজিদূর রহমানের জুনিয়াররা কোর্টে আপিল করে। এদের পাঠানো হয় বৈদেশিক আইনের ১৪নং ধারায়। আদালত তাদের মুক্তি দেয়নি।
আইনি সহায়তা চেয়ে পিপলস ফোরাম ফর জাস্টিস দফতরে ফোন আসে, সেই ফোনের সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হয় বালুরঘাট কোর্টের আইনজীবী মাজিদূর রহমান সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন শুধু বালুরঘাটেই নয়, বিভিন্ন জেলায় রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি,
কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ২২ জন মায়ানমার রোহিঙ্গাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ৬ই জানুয়ারি উল্টোডাঙ্গা মেন রোড থেকে কলকাতা পুলিশ ১০ জনকে আটক করে। ১০ জানুয়ারি একইভাবে রাত ১০টা নাগাদ বারাসাত স্টেশনে ১২ জনকে গ্রেফতার করে। জেরায় তারা জানায় জাতিবিদ্বেষের কারণে প্রাণ ভয়ে তারা এদেশে পালিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, শরণার্থী রোহিঙ্গারা ভারতে আসছে একটু আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু ঠাঁই মিলছে অন্ধকার কারাগারে।
রোহিঙ্গারা এখন এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মায়ানমারে যাদের থাকার কোনো ঠাঁই নেই। তাই তারা বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশগুলিতে চলে আসছে। এরা ভারতে আশ্রয় পেতে পারে। ভারতে থাকার ব্যাপারে এদের ১৯৫১ সালের রাষ্টসংঘ উদ্বাস্তু চুক্তির মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু আইনে রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয় পেতে পারে। যেমন, ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, ১৯৬৫ সালের আন্তর্জাতিক জাতি বিদ্বেষ আইন, ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার, ১৯৮৪ সালের শান্তি আইন।
ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাঞ্জাবের হিন্দুদের উদ্বাস্তুর মর্যাদা দিয়েছে। একইভাবে ভারত ৫ লক্ষ তিব্বতী, সিংহলী, তামিল, ইরাকি ও চট্টগ্রামের চাকমাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে পুলিশ ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্ট প্রয়োগ করছে। পুলিশ এদের এভাবে গ্রেফতার করতে পারে না। কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এরা শরণার্থী। মানবাধিকারের নিয়মেই এদের আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে। পুলিশের ব্যবহার রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে এদের যখন কোর্টে তোলা হচ্ছে, তখন আইনি সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না। উল্লেখ্য অন্ধ্র, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অনেকটা ব্যতিক্রম। এ রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জেলে পুরে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখা উচিত। এরা সাধ্যমতো এখানে বসবাস করে নিজেদের অন্নসংস্থান যাতে করতে পারে সেটাই এখানকার সরকারের দেখা উচিত।
Leave a Reply