শমিত, শান্তিপুর, ২৫ অক্টোবর#
“ |
আমি রিপু করি লন্ড্রিতে। সোদপুর, বেলঘরিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কাজ। বাড়ি আমার শান্তিপুর, বয়স তেষট্টি। আমার বিপিএল কার্ড আছে। শান্তিপুর-শিয়ালদা এখন দৈনিক ভাড়া হয়েছে চল্লিশ টাকা। আমি ইজ্জত মান্থলি-তে যাতায়াত করতাম। কিন্তু এখন ইজ্জত মান্থলির নিয়মকানুন বদলানোর পর আজ দশ বারোদিন হয়ে গেল, এখনও মান্থলি কাটতে পারিনি। প্রথমে কাউন্সিলারের কাছে গেছি। তারপর বিডিও। এখন কল্যাণীতে সাংসদের কাছে যাচ্ছি। ঘুরেই যাচ্ছি, কিন্তু কিছুতেই জোগাড় হচ্ছে না। |
শেখ নাসিরুদ্দিন আলি |
বিগত তিন-চার বছর ইজ্জত কার্ডের সুবাদে যাদের মাসিক উপার্জন ১৫০০ টাকার মধ্যে তাদের ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেল যাত্রার সুবিধে হচ্ছিল। দেশের অসংখ্য গরিব মানুষ এর দ্বারা খানিকটা আর্থিক সুবিধে পাচ্ছিল। সম্প্রতি রেল দপ্তর ইজ্জত মান্থলি প্রকল্পে নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করায় স্বল্প উপার্জনের রেল যাত্রীরা বেশ অসুবিধায় পড়েছে।
সাধারণত ছোটোখাটো নির্মাণ শ্রমিক, ঠিকে কাজের লোক, রিপুর কারিগর সহ অসংগঠিত অসংখ্য কাজের লোক খুবই অসুবিধায় পড়তে চলেছে। নতুন নিয়মাবলীতে রেলদপ্তর জানিয়েছে, অনেক কিছু লাগবে ইজ্জত মান্থলি পেতে গেলে। প্রথমত ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, এসডিও, বিডিও-র সার্টিফিকেট, সাংসদ সার্টিফিকেট, যিনি মান্থলি ব্যবহার করছে তাঁর সম্পূর্ণ পেশার বিবরণ ও কর্মস্থলের সম্পূর্ণ ঠিকানা এবং বিপিএল তালিকাভূক্ত হলে তার ফটোকপি। এতগুলো তথ্য, নথি সব ঠিকঠাক থাকলে তবেই একজন ইজ্জত মান্থলি কার্ডের সুবিধা পাবে। এতদিন শুধুমাত্র পৌরপ্রধান বা পঞ্চায়েত প্রধানের ইনকাম সার্টিফিকেট এবং সাংসদ বা বিধায়কের শংসাপত্রের ভিত্তিতে একজন যাত্রী ণ্ণমান্থলি’ ২৫ টাকার বিনিময়ে কাটতে পারত। নতুন নিয়মাবলীর জটিলতায় অক্টোবর থেকে আর সেই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। রেলমন্ত্রকের নতুন সিদ্ধান্তে অনেক অসংগঠিত পেশায় যুক্ত মানুষ বিপাকে পড়েছে। দৈনিক ১০০-১৫০টাকা উপার্জনকারী খেটে খাওয়া মানুষ ওই সমস্ত সার্টিফিকেট জোগাড় করতে নাজেহাল হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
শান্তিপুর অঞ্চলে জামা কাপড়ের দোকানে প্রতিদিন কাজে যেত অনেক কারিগর, ওই ইজ্জত মান্থলির কল্যাণে। কিন্তু নতুন এই বিধি ব্যবস্থায় তাদের কাজে যাওয়া বন্ধ হতে বসেছে। বিডিও অফিস এসডিও অফিস ঘুরে ঘুরে অথবা ডিএম-এর অফিসে ধরনা দিয়েও এই সার্টিফিকেট সহজে মিলবে না বলেই মনে করছে ইজ্জত মান্থলি ব্যবহারকারীরা। কাজকর্ম শিকেয় তুলে রোজ রোজ ওই সমস্ত অফিসে যাওয়াও তাই সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন অফিসে যাওয়ার খরচই বা পাওয়া যাবে কোথা থেকে! ইজ্জত ব্যবহারকারীরা হতাশ, প্রকৃত একটা জনমুখী প্রকল্প বন্ধ করার মতলবই এঁটেছে রেলমন্ত্রক। পাশাপাশি তারা এটাও স্বীকার করেছে প্রকৃত ণ্ণইজ্জত মান্থলি’ ব্যবহারকারীরা ছাড়াও বেশি উপার্জনের অনেক মানুষও এর সুবিধা ভোগ করেছে। ভারতবর্ষে কবে আর সরকারি প্রকল্পে সব কিছুর ঠিকঠাক ব্যবহার হয়েছে!
সহজে ২৫ টাকার মান্থলির দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর শান্তিপুর-শিয়ালদহ লাইনে বিচ্ছিন্নভাবে রেল অবরোধ করে এই মান্থলির গ্রাহকরা।
Leave a Reply