সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, সেপ্টেম্বর#
১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০-৫ মিনিটে কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ লোকাল নির্দ্ধারিত ১০-১৮ মিনিটের কিছু পরে হবিবপুর স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি যেহেতু কৃষ্ণনগর থেকে আসে, সেহেতু প্রথম থেকেই ট্রেনের কামড়ার প্রথমদিকে ভিড় ছিল যথেষ্ট বেশি। সংশ্লিষ্ট গাড়িটির চালক হাবিবপুর স্টেশনে গাড়িটি থামিয়েই প্রায় তৎক্ষণাৎ (আধ মিনিটের মধ্যে) গাড়ি যথেষ্ট বেগে চালানো শুরু করেন। ফলে হবিবপুর স্টেশনে নামার যাত্রীরা সকলে নামতে পারেনি এবং যারা ট্রেনটিতে ওঠবার চেষ্টায় ছিল তারাও সকলে উঠতে পারেনি। এমতবস্থায় দু-তিন জন মহিলা যাত্রীর শরীরের অর্ধাংশ বাইরে থাকে, অর্ধাংশ ট্রেনের ভেতর বিপদজ্জনক ভাবে ঝুলতে দেখে অন্যান্য যাত্রীরা তাদের প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন।
ট্রেনটিতে বেশ কিছু স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীও নিত্যদিন এই সময়ে যাতায়াত করে, সঙ্গে তাদের অভিভাবকগণও থাকেন এবং এদের অধিকাংশই হবিবপুর থেকেই ওঠে। এই ঘটনায় যাত্রীদের অনেকেই হতচকিত ও ভয় পেয়ে গিয়ে চিৎকার করতে শুরু করলে ট্রেনের দুটো বগি প্লাটর্ফম থেকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। যাত্রীদের অনেকেই নিজেদের নির্দিষ্ট কামরার পরিবর্তে অন্য কামরাতে উঠতে বাধ্য হয় এবং অনেকেই ভিড়ের মধ্যে চাপাচাপিতে অসুস্থ বোধ করে, বিশেষত ট্রেনের সামনের দিকের বগিগুলিতে ওঠা যাত্রীদের মধ্যে। চ্যাঁচামেচি হৈ হট্টগোলের মধ্যেই জানা যায় একজন ১৭-১৮ বছরের ছাত্রীর অল্পের জন্য প্রাণ রক্ষা পায়। তার নাম নিলীমা মণ্ডল, বাবার নাম নিরাপদ মণ্ডল। বাড়ি হবিবপুরের দুর্গাপুর গ্রাম।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই যাত্রীগণ ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়লে তারা চালকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে। সেদিনের ঘটনায় যাত্রীদের তরফের সক্রিয়তা সাহসিকতার কারণই বেশ করেকজন যাত্রী প্রাণে রক্ষা পায়। ট্রেন পরবর্তী স্টেশন কালীনারায়ণপুর জংশনে দাঁড়ালে বেশ কিছু ক্ষুব্ধ যাত্রী ট্রেনের চালকের কাছে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের সঙ্গে ট্রেনের চালক অত্যেন্ত রূঢ় আচরণ করেন অশালীন ভাষায় হুমকি দেন। পরবর্তীতে রানাঘাট জংশন এ গাড়িটি দাঁড়ালে ওই ট্রেন চালক পুলিশ ও জি আর পি পরিবেষ্টিত হয়ে বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের সাথে বাদানুবাদ শুরু করেন। মিনিট কয়েক এ-ঘটনা চলার পর জি আর পি-এর নির্দেশমতো ট্রেন চালক ট্রেনটিকে শিয়ালদহের দিকে রওনা করেন। শ’খানেক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের মধ্যে থেকে মাত্র চারজন যাত্রীকে রানাঘাট জি আর পি তাদের তাদের ব্যাগ-পত্র সমেত নামিয়ে অফিসে নিয়ে যায়। অফিসের সংশ্লিষ্ট অফিসার ওই যাত্রীদের মুখ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শোনেন এবং পুনরায় সংশ্লিষ্ট ট্রেন চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই চারজন নিত্যযাত্রীকে দাঁড় করিয়ে রেখে একপাক্ষিকভাবে সংশ্লিষ্ট অফিসার ট্রেন চালকের বক্তব্যের প্রক্ষিতে যাত্রীদের দোষারোপ করতে থাকেন।
পরে ওই অফিসার হবিবপুর স্টেশন অধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করেন এবং জানতে পারেন যে, ট্রেনটি হবিবপুর স্টেশনে রেল-নির্দ্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ছেড়েছে। এরপরও জি আর পি অফিসার ওই চারজন যাত্রীকে দোষ দিতে থাকেন ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নাম, ঠিকানা নথিবদ্ধ করান এবং একজনের মোবাইল ফোন নাম্বার লিপিবদ্ধ করেন। তারপর ওই চারজন যাত্রী মুক্ত হন। ট্রেন ফেল করার জন্য ওই চার যাত্রীর সময় ও কাজের ক্ষতি হয়।
এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করুন এবং ওই চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে নিত্যযাত্রীরা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, শিয়ালদহ ডিভিশনের রিজিওনাল ম্যানেজারকে।
Leave a Reply