অদূর অতীতেও ‘না চাইতে পাওয়া’ পরিষেবা ‘অনিচ্ছুক’ আমার ওপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিষেবা না নেওয়া সত্ত্বেও আমার প্রিপেড অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে এবং সেই টাকা ফেরত পাইনি। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাটি পাঠককে আগে জানাচ্ছি।
গত ২৩ এপ্রিল ২০১২ আমার নম্বরে চালু থাকা একটি বিশেষ পরিষেবা আমারই অনুরোধে কোম্পানি থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হল এবং কোম্পানি আমার ফোনে এসএমএস মারফত তা জানিয়েও দিল।
কোম্পানির পাঠানো এসএমএসটির ছবি নিচে দেওয়া হল। নম্বর ৫২৮১১ :
অথচ তার পরদিনই, অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে সকালে ওই বিশেষ পরিষেবাটিই চালু রাখার জন্য ওই বাবদ আমার প্রিপেড অ্যাকাউন্ট থেকে কোম্পানি টাকা কেটে নিল। এসএমএস মারফত তা জানিয়েও দিল। কোম্পানির পাঠানো এসএমএস-এর বয়ান হুবহু দিলাম
আশ্চর্য তো! কোম্পানি নিজেই ‘নিষ্ক্রিয় করেছি’ বলে জানিয়ে দিয়েও আবার সেই অ্যাকাউন্টেই টাকা কাটছে।
কোম্পানির গ্রাহক সেবা দফতরে ফোন করলাম। সেখানে অভিযোগ গ্রহণ করা হল। সেটাও এসএমএস মারফত আমায় জানানো হল। কোম্পানির পাঠানো এসএমএস নিচের ছবিতে :
এর পরে কোম্পানি নিজে থেকে আমায় কিছু জানায়নি। বারংবার ফোন করে দুই-তিনদিন পরে জানতে পারলাম, কোম্পানির মতে ন্যায্য কারণেই টাকা কাটা হয়েছে।
জোরালো প্রতিবাদ করলাম। কোম্পানির ওই প্রতিনিধি আমায় কেবল বলতেই থাকলেন —- যেহেতু কোম্পানির উচ্চতর স্তর থেকে এটা করা হয়, তাই শুধুমাত্র কোম্পানির এই সিদ্ধান্তটা উনি আমায় জানিয়ে দিতে পারেন, এছাড়া তার পক্ষে অন্য কিছু করা সম্ভব নয়।
প্রতিবাদ করতেই থাকলাম। এর পরে উনি নিজের ওপরওয়ালার সঙ্গে আমার ফোনের লাইন যুক্ত করে দিলেন। সে লাইনে কেবলমাত্র বিপ বিপ শব্দ হতে লাগল। দশ মিনিট ধৈর্য ধরে থাকলাম। ওপরওয়ালা টুঁ শব্দও করলেন না। এরপরে ফোন রাখতে বাধ্য হলাম। গ্রাহক সেবা দফতরে আবার ফোন করলাম। আবার সেই একই ব্যাপার। সেই প্রতিনিধি আবার ওপরওয়ালার সঙ্গে আমার ফোনের লাইন জুড়ে দিলেন, আবার সেই এক নাগাড়ে বিপ বিপ বিপ … আবার দশ মিনিট ফোন ধরে রাখলাম … ওপরওয়ালা নিশ্চুপ। আবার ফোন রাখতে বাধ্য হলাম।
দু-দুবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
রিলায়েন্সের গ্রাহক সেবা দফতরে আবার ফোন করলাম। কোম্পানির ছোটোখাটো প্রতিনিধি আবার ওপরওয়ালার সঙ্গে লাইন যোগাযোগ করে দেবার কথা বলতে গেলেন বটে, তৎক্ষণাৎ জানালাম — দাদা, ওপরওয়ালা আর দেখাবেন না। তারা নিশ্চুপ, বাক্যহীন। বরং আপনি কথা বলুন। ছোটোখাটো প্রতিনিধি সেই যে ফোন রাখলেন, এরপরে ফোন করলে শুধু রেকর্ডেড কন্ঠস্বর শুনতে লাগলাম। কোম্পানির ‘জ্যান্ত প্রতিনিধি’র সঙ্গে কথা বলার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হল।
কয়েকদিন ধরেই এই ব্যাপার লক্ষ্য করার পরে একদিন ওই সাতাশ টাকার জন্য ছ-টাকা যোগ ছ-টাকা, মোট বারো টাকা বাস ভাড়া খরচা করে এবং একবেলার উপার্জনের কাজকর্ম শিকেয় তুলে রেখে চৌরঙ্গী রোড পার্ক স্ট্রীট মোড়ের কাছে রিলায়েন্সের অফিসে হাজির হলাম। প্রসেনজিৎ নামে একজন কর্মী অত্যন্ত ভদ্র ও বিনীত ব্যবহার দেখিয়ে আমার অভিযোগ কম্পিউটারে তুললেন। তারপর বললেন, — আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এর ফলাফল জানতে পারব।
এরপরও একই ধরনের এসএমএস এল। আমাকে ধন্যবাদ জানানো হল কোম্পানির অফিসে যাওয়ার জন্য এবং জানতে চাওয়া হল, আমি খুশি হয়েছি কি না।
কোম্পানি কী সিদ্ধান্ত নিল, তা জানিয়ে এসএমএস এলও। ফলাফল একই। জানানো হল —- ‘সঠিক কারণেই টাকা কাটা হয়েছে।’ এইবার এসএমএস-টি এল কোনও নম্বর থেকে নয়, RM-reliance থেকে
—-, —- টাকা গায়েব!!
যতক্ষণ কোম্পানি অভিযুক্ত, কোম্পানিই উকিল, কোম্পানিই বিচারক … অসুবিধের কী আছে।
কোম্পানি আমার কাছে যে এসএমএসগুলো পাঠিয়েছে, সেগুলি আমি সযত্নে মোবাইলে ধরে রেখেছি। যথোপযুক্ত স্থানে দেখাতে পারব।
আগেকার আরেকটি ঘটনার কথা জানাই — আমার প্রিপেড অ্যাকাউন্ট থেকে হঠাৎ তিরিশ টাকা কাটা গেল। কী ব্যাপারে তা জানতে ফোন করলাম। জানানো হল — কী এক ‘হনুমান-বন্দনা’ জাতীয় একটা কিছু আমায় ওই টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, আমার অজ্ঞাতসারে।
জানালাম — আমি তো তা চাইনি।
প্রতিনিধি বললেন — নিশ্চয়ই চেয়েছেন।
কী আশ্চর্য!!!
একেই তো জোর করে চাপিয়ে দেওয়া, তার ওপর আমায় মিথ্যেবাদী বানানোর অপচেষ্টা! সুতীব্র প্রতিবাদ করলাম।
— ওটা আপনাদের হনুমান, আপনারা পুষুন। তার খরচ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কেন? আমার টাকায় আপনার কোম্পানি হনুমানের প্রোপাগান্ডা চালাবে! আপনার কোম্পানি প্রায়ই আমায় অমুক টোন তমুক টিউন অফার করে। কোনোদিন নিইনি, নেব-ও না। বিনে পয়সায় হলেও না। আর আমি কিনা হনুমান চাইতে যাব? ফোন আমার আছে, ফোন করা, এসএমএস করা আর ফোন ও এসএমএস পাওয়ার জন্য। আমার ঘাড়ে হনুমান এসে চেপে বসুক, সেজন্য নয়।
অনেক বাদানুবাদের পরে কোম্পানি সেই হনুমান ফেরত নিলেন, অবশ্যই টাকা ফেরত না দিয়ে। জোর করে গছানো মাল ফেরত নেওয়ার নিয়ম কোম্পানির আছে, টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম নেই … অন্তত সেই ছোটোখাটো প্রতিনিধি তো পারবেনই না …
তিরিশ টাকার জন্য সেবারে ছুটোছুটি করতে পারিনি। সেই সুযোগে পয়সা হজম। হয় হনুমানে, নয় কোম্পানিতে তা গিলে ফেলল।
এই পরিস্থিতিতে আমার উচিত কনজিউমার ফোরামে অভিযোগ করা। কিন্তু তার আগে আরও যারা আমার মতো ভুক্তভোগী আছে, তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চাই।
অনেকেই আছে, যারা সাতাশ টাকা বা তিরিশ টাকার জন্যে গাড়িভাড়া খরচ এবং নিজের কাজকর্ম চৌপাট করতে ইচ্ছুক নয়। সেই সুযোগ নিয়ে সে অসৎ কোম্পানিগুলো তাদের হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি খদ্দের আছে, তাদের কাছ থেকে অল্প করেও টাকা নানা অজুহাতে ডাকাতি করে নিতে থাকে, তাহলেও তাদের বিপুল লাভ।
সরকার এবং প্রশাসন এদের প্রতি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটাও জানার ইচ্ছে থাকল।
অলোক দত্ত, এন্টালি, কলকাতা, ১৩ জুন
Leave a Reply