দীপঙ্কর সরকার, হালতু, কলকাতা, ২ সেপ্টেম্ব#
কলকাতা থেকে ২৮৫ কিমি দূরত্বে ভাগীরথির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত মুর্শিদাবাদ জেলার আজিমগঞ্জ। আজিমগঞ্জ জংশন থেকে ২ কিমি উত্তরে বড়নগর। অষ্টাদশ শহকের মুর্শিদাবাদের বারানসী। প্রাতঃস্মরণীয়া রানী ভবানীর পুণ্য স্মৃতি বিজরিত বড়নগর। হাগীরথির পূর্বপাড়ে জিয়াগঞ্জ পশ্চিমপাড়ে আজিমগঞ্জ। পাঁচ মিনিট অন্তর ফেরি সার্ভিস এপার ওপার করা যায়। সুতরাং আজিমগঞ্জ যেতে গেলে শিয়ালদহ লালগোলা অথবা হাওয়া আজিমগঞ্জ গণদেবতা (৬:০৫) এক্সপ্রেসে যাওয়া যায়। শিয়ালদহ জিয়াগঞ্জ (২০৩ কিমি) হয়ে ফেরি মাধ্যমে ভাগীরথি পার হয়ে ওপারে আজিমহঞ্জ সিটি সদরঘাট যাওয়া তুলনামূলক সময় কম লাগে। সদর ঘাট থেকে কিমি বড়নগর গণদেবতায় যাওয়া বিরক্তিকর, কারণ রামপুরহাটের পর বিভিন্ন স্টেশনে থামতে থামতে ১-১৫ মিনিটে আজিমগঞ্জ জংশন পৌঁছয়। সাগত্রদিঘিতে আধঘন্টা দাঁড়ায় আজিমগঞ্জ নলহাটি মেনলাইন ট্রেন পার করার জন্য।
স্বামী রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানী তার একমাত্র বিধবা কন্যা তারাসুন্দরী নিয়ে এসে বড়নগরে বসবাস শুরু করেন। বিশাল জমিদারির কাজ রানী ভবানী নিজেই দেখাশোনা করতেন। দানশীলা ছিলেন রানী ভবানী। দুঃস্থ, হতদরিদ্র মানুষকে অকাতরে দান করতেন। তার দান ও বদান্যতার জন্য এই হিন্দু রমনী বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয়া হয়ে আছেন। বড়নগরে রানী ভবানী বহুদিন বসবাস করেছেন। তার তোইরি বহু কীর্তিগাথা আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। তিনি বড়নগরে ১০৭ টি শিবমন্দির স্থাপন করেন। আর একটি হলে গয়াকাশি হয়ে যেত। এই জন্য বড়নগরকে বলা হয় মির্শিবাদাদের বারানসী। তার প্রতিষ্ঠিত অষ্টকোণাকৃতি ভবানীশ্বর মন্দিরটি সবচেয়ে বড়ো। অষ্টকোণাকৃতি এই মন্দিরের গায়ে চুনবালির অউঊর্ব শিল্পকীর্তি বর্তমান। মন্দিরের মধ্যে একটি বিশাল শিব্লিঙ্গ আছে। রানী ভবানীর দ্বিতীয় কীর্তি চারবাংলা মন্দির মন্দিরের গায়ে টেরাকোটা শিল্পকর্ম সত্যি দর্শনীয়। এটি তৈরি হয় ১৭৫৫ খ্রীষ্টাব্দে।
ইঁটের ওপর খোদাই করা দশাবতার, দশ মহাবিদ্যা, রামায়ণ, মহাভারতের যুদ্ধ ইত্যাদি। চারবাংলা মন্দির চারটি মন্দিরের সজমষ্টি। প্রত্যেকটি পরস্পরের মুখোমুখি চারকাঠা জমির ওপরে একবারে ভাগীরথির তীরে। তিনটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছেও তিনটি করে শিবলিঙ্গ আছে প্রতিটি মন্দিরের ভিতর। মোট ১২টি শিবলিঙ্গ আছে চারটি মন্দিরে। এগুলি বহুলভাবে কারুকার্যে মন্ডিত। এগুলির সম্মুখভাগ ইষ্টকের ওপর বাংলার বিশিষ্ট অলঙ্কার কার্য্যের প্রকৃষ্ঠ পরিচায়ক। পূর্বমন্দিতটিতে েখনও চুনবালির ওপর যে সূক্ষ পৌরাণিক দৃষ্যাবলি অঙিত দেখা যায়, তারা এক ক্তাহায় অসাধারণ ও দৃষ্টিনন্দন।
এই মন্দির ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দপ্তর দেয়ারা সংরক্ষিত ও সৌন্দর্যমন্টিত মন্দীরের চারপাশ সুসজ্জিত বাগান বেষ্টিত। মন্দিরের প্রবেশদ্বার আছে। সুতরাং অবাধ বিচরণক্ষেত্র নয়। কোনও জীবজন্তু বিচরণ করতে পারে না। ভাগীরথির তীরে এই মন্দির সুন্দর সুখানুভূতির সৃষ্টি করে। মন্দিরের এপার ওপার করছে যাত্রীবাহী নৌকা এক সুন্দর নান্দনিক মন্দিরের বাগানটির গাছপালা সুন্দর করে কেটে ও কেয়ারি করা নয়নাভিরাম দৃশ্য।
মন্দিরের ছবি যকন তুলছিলাম তখন এএসআই এর অস্থায়ী কর্মী বিকাস সরকার আমাকে বললেন, চলুন মন্দিরের ভিতরে শিবলিঙ্গ দেখবেন। তিনি চারটি মন্দিরের প্রত্যেকটি খুলে দেখালেন। প্রত্যেকটিতে তিনটি করে শিবলিঙ্গ আছে। আজিমগঞ্জ জংশন স্টেশন ১-১৫ পৌঁছলাম ৬-০৫ এর গনদেবতা ধরে। স্টেশনে নেমে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম বড়নগর যাবে কিনা। প্রত্যেকেই বলল, আা যাওয়া ১০০-১২০ টাকা। আমি বললাম ২ কিমি যেতে এর ভাড়া? আমি হাঁটা ধরলাম। কিছুদূত এগিয়ে একজন ভ্যান রিক্সাকে বললাম যাবে রানী ভবানীর মন্দির। সে বলল, ৩০ টাকা আসা যাওয়া সদরঘাট অবদি। আমাকে ট্রেনে অনেকে বলেছিল সদরঘাট হয়ে জিয়াগঞ্জ থেকে শিয়ালদহ ট্রেন ধরলে সময় কম লাগবে। তাই ভ্যান ওয়ালাকে বললাম চল চারবাংলা মন্দির। আমি উঠে বসলাম সাইকেল ভ্যানে। যেতে যেতে প্নচমুখী শিবমন্দির দেখলাম। ভিততে ঢুকতে পারিনি। সময়সারণী আছে বলে। চারবাংলা পৌঁছলাম উঁচুনিচু অসমান রাস্তা ধরে। যাওয়ার পথে রানী ভবানীর বহু কীর্তি স্থাপনা দেখলাম। চারবাংলা মন্দির ও অষ্টকোণা ভবাবীশ্বর মন্দির দেখে আবার সাইকেল ভ্যানে চেপে বসলাম। ভাগীরথির ধার দিয়ে আসছিলাম অপ্রশস্থ রাস্তা ধরে। সদরঘাট পৌঁছে নৌকায় পার হয়ে জিয়াগঞ্জ। সেখান থেকে আবার সাইকেল ভ্যানে চেপে দশটাকা ভাড়ায় জিয়াগঞ্জ স্টেশন পৌঁছলাম পনেরো মিনিটে বেলা তিনট নাগাদ। শুনলাম ৪-১৫ মিনিটে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস আসবে। একঘন্টার বেশি অপেক্ষা করতে হল। কিন্তু এই ট্রেনও তথৈবচ। কলকাতা স্টেশন পৌঁছলাম রাত ৯-৩০ মিনিটে, অনেক জায়গায় থামতে থামতে। স্টেশন থেকে একটু দূর গিয়ে অটো করে শ্যামবাজার, সেখান থেকে শিয়ালদহ হয়ে ১০-১০ মিনিটের লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালে আর কুড়ি মিনিটের মধ্যে বাড়ি ফেরা।
Leave a Reply