সুকুমার হোড় রায়, ২৭ জুন#
১৪ জুন আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবসে মিলিত হল রক্তদান শিবিরের আয়োজক বিভিন্ন ক্লাব, ব্যবসায়ী সমিতি, স্বেচ্ছাসেবী-সমাজসেবী সংস্থা। মতবিনিময় হল রক্তদান ও রক্তদান শিবিরের আয়োজনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। আয়োজন ‘লাইফ কেয়ার’, বীরেশ গুহ সরণি (দিলখুশা স্ট্রীট)-তে অবস্থিত ইন্ডিয়ান কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাগৃহে। আলোচনা সভা শুরু হল রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে, তারপর রক্তদান ও তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্লোগান তৈরি করে লেখার প্রতিযোগিতা, এবং একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন।
প্রারম্ভিক ভাষণে ডি আশীষ ও সভাপতির ভাষণে ডাঃ বিকাশ ভৌমিক তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়েকবছর ধরে অনেক রক্তদান শিবিরের আয়োজক ও রক্তদাতাদের মধ্যে অশুভ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। রক্তদান আন্দোলনকে পণ্যায়ন করা হচ্ছে। অনেক রক্তদান শিবিরের আয়োজকরা রক্তদান করার জন্য দামী হাতঘড়ি, প্রেশার কুকার, টেবিল ফ্যান, কোথাও কোথাও মহিলাদের কানের সোনার দুল অবধি উপহার দিচ্ছে। এর দরুন যে সব ক্লাব সংস্থার সেই রকম আর্থিক সামর্থ্য নেই, যারা সেভাবে টাকা জোগাড় করতে পারছে না, তারা রক্তদান শিবির আয়োজন করতে পারছেন না। একেই রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমে গেছে। তার ওপর এই কাণ্ড গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো। পশ্চিমবঙ্গে যত রক্তের প্রয়োজন, রক্তের যা চাহিদা, তার চেয়ে ৫২ শতাংশ রক্ত কম সংগ্রহ হচ্ছে। এরপর যদি আরও রক্তদান শিবির বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে রক্তের গভীর সঙ্কট দেখা দেবে রাজ্যে। অনেক শিবিরেই রক্তদাতাদের সংক্রামক রোগ (যেমন এইডস) আছে কি না পরীক্ষা করা হয় না। কিন্তু রক্তদান শিবিরে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।
আলোচনাসভায় রক্তদান শিবিরের আয়োজকরা বলেন, রক্তদান শিবিরে রক্ত পরীক্ষা করে তারপর রক্ত নেওয়া সম্ভব নয়। ভালো উপহার না দিলে রক্তদাতাদের রক্তদানে উৎসাহিত করা যাবে না, এমনও বলেন তারা।
ডাঃ প্রদীপ মিত্র প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, বর্তমান প্রজন্মের ডাক্তারদের মধ্যে দুঃস্থ, দরিদ্র মানুষদের সেবার জন্য চিকিৎসা করার মানসিকতার ভীষণ অভাব। খুব কম ডাক্তারই দরিদ্র, দুঃস্থ মানুষদের সেবা করার মানসিকতা ও মনোভাব নিয়ে কাজ করে। ডাক্তারদের উচিত রক্তদাতাদের সংগৃহিত রক্ত যেন কোনওরকমভাবে অপচয় ও ভুল ব্যবহার না হয়, তর জন্য সচেষ্ট ও সতর্ক থাকা। একজন রোগীর জন্য যতটুকু রক্তের প্রয়োজন সেই পরিমাণ রক্ত দেওয়ার জন্যই ব্যবস্থাপত্রে (রিকুইজিশনে) লেখা উচিত, তার বেশি নয়। একজন রক্তদাতার রক্ত তিন চার জন মানুষের কাজে লাগে ও প্রয়োজন মেটায়। রক্ত দিলে দেহের রক্ত কমে যায় না। শরীরের অস্থি মজ্জা থেকে সেই রক্ত আবার তৈরি হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে লোক সমাগম ভালোই হয়েছিল, একটু বেলার দিকে উপচে পড়ছিল ভিড়। সেই তুলনায় ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশন প্রাঙ্গণে রক্তদান শিবিরে স্বেচ্ছায় রক্তদানে তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি।
Leave a Reply