শমিত, শান্তিপুর, ১০টা ৫-এর নিত্যযাত্রী, ২০ জুন#
প্রায় বছর খানেক ধরে সকাল ১০টা ৫-এর ডাউন কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ (ভায়া শান্তিপুর) লোকাল ট্রেনটির ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় নেই। ৫-১০ মিনিট দেরিতে প্রায় রোজই ছাড়ছে, কোনকোন দিন ৪০ মিনিট ১ ঘন্টা দেরিতে ছাড়তে দেখা যাচ্ছে ট্রেনটিকে। যথারীতি যাত্রীদের অসুবিধা প্রায় দৈনিক একটা বিষয়। এজন্য যাত্রীদের উষ্মা, বিরক্তি, ক্ষোভ, সহনশীলতা সবই লক্ষ্য করা যায়।
গত ১৮ জুন যথারীতি ট্রেনটি প্রায় ৪৫ মিনিট দেরিতে ছাড়তে দেখা গেল। দৈনিক যাত্রীরা কেউ কেউ স্টেশন মাস্টারের কাছে গেলেন। তারা জানালেন, কর্মক্ষেত্রে তাদের দেরি হয়ে যাওয়ার অসুবিধার কথা। স্টেশনমাস্টার তাঁর অপরাগতার কথা যাত্রীদের জানালেন।
এখানে জানানো দরকার, ট্রেনটি দেরিতে ছাড়ার অন্যতম যুক্তি — আপ শিয়ালদহ-শান্তিপুর লোকাল ট্রেনটি না ঢুকলে এই ডাউন ট্রেনটি ছাড়া যাবে না, কারণ শান্তিপুরে গার্ড-বাক্স পরিবর্তন করতে হয়। ড্রাইভারও পরিবর্তন করতে হয়। সে কারণে যতক্ষণ না আপ-ট্রেনটি ঢোকে ডাউন শিয়ালদাগামী ট্রেনটি ছাড়তে পারে না। যদিও আপ ট্রেন সকাল ১০-৪০ মিনিটে ছেড়ে রানাঘাট পর্যন্ত গিয়ে যাত্রা সমাপ্ত করে। প্রায়ই দিনই এ ঘটনা ঘটায় যাত্রীরা একপ্রকার অভ্যস্ত হয়ে গেছে বলা যায়।
ঐ দিনও যখন ট্রেনছাড়ার দেরিতে যাত্রীদের ভেতর ক্ষোভ-বিক্ষোভ কথা-বার্তা চলছে। এর বিহিত কি করে করা যেতে পারে তা নিয়েই মূলত কথাবার্তা, যুক্তি এসবের মধ্যে ডাউন ট্রেনটির জনৈক ড্রাইভার তার প্রতিক্রিয়ায় জানালেন,
— ‘কত ট্রেন বেড়েছে বলুন তো? রেলের কর্মীর সংখ্যা কি বেড়েছে, সেই কবে থেকে রিক্রুটমেন্ট বন্ধ রয়েছে রেল-এ। আমাদের ৩৬৫ দিনে ৩৫০ দিন কাজ করতে হচ্ছে। রেলের ট্র্যাক কি বেড়েছ? যাত্রী পরিষেবার উন্নতি হবে কীভাবে? একটা ট্রেনকে একাধিক বার রান করাবার পরও ঠিকমতো মেনটেনেন্স করা যাচ্ছে না। এসবের ফলেই ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের।’
তাঁর এই কথার মধ্যে দিয়ে রেলদপ্তরে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কথা-ই উঠে এলো। এ সমস্ত ব্যাপারে কোনও রেলকর্মী যদি অতি সক্রিয়তা দেখাই, তাহলে তাদের ওপর শাস্তির খাড়াঁও নামতে পারে। তিনি জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। কিছুদিন আগে কোন একটি ট্রেনে ড্রাইভার হিসাবে থাকাকালীন তিনি দীর্ঘক্ষণ ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাওয়াতে তাঁকে বিভাগীয় তদন্তের জালে পড়তে হয়েছে। এ সমস্ত খোলামেলা কথাবার্তা যাত্রীদের সঙ্গে চলছিল। শেষমেষ যাত্রীরা জানতে চাইলেন, তাহলে করণীয় কি ? — তিনি নিরর্দ্বিধায় বললেন, ‘গণধোলাই’। রেলওয়ে পরিচালনকারীদের একধারসে গণধোলাই। সেটাই একমাত্র পথ।
সেদিন ট্রেনটি ছাড়ল — ১০টা ৫৭ মিনিটে।
Leave a Reply