শমীক সরকার, কলকাতা, ১৬ সেপ্টেম্বর#
২০১১ সালের ১১ মার্চ ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর দেশজোড়া আন্দোলনের জেরে প্রায় সমস্ত পরমাণু চুল্লি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু শক্তিশালী পরমাণু লবি চাপ দিয়ে চলেছে, সেগুলি চালু করার জন্য। সেই চাপের কারণেই ৬ সেপ্টেম্বর জাপানের শাসক দল ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ সিদ্ধান্ত নিয়েও ঘোষণা করতে পারেনি পরমাণু বিদ্যুতের পথ থেকে পাকাপাকিভাবে সরে আসার সিদ্ধান্ত। শাসক দলের সিদ্ধান্ত ছিল, ‘২০৩০ এর দশকের মধ্যেই পরমাণু-শূণ্য জাপান তৈরির জন্য সমস্ত ধরণের নীতি প্রণয়ন এবং সম্পদের ব্যবহার’। অবশেষে শুক্রবার জানিয়ে দিল সরকার, যত দ্রুত সম্ভব পরমাণু-শূণ্য করা হবে জাপান। তবে কয়েকটি চুল্লি তার পরেও জ্বালিয়ে রেখে যাওয়া হতে পারে, কেবল ‘পরমাণু জ্বালানি চক্র’কে সচল রাখার জন্য। প্রসঙ্গত, পরমাণু জ্বালানি চক্রকে সচল রাখার দরকার পরে পরমাণু বোমার মালমশলা এবং পরমাণু চিকিৎসার জন্য। যদিও জাপান পরমাণু বোমা বানায় না। এই দেশটা পৃথিবীর একমাত্র পরমাণু বোমা বিস্ফোরণে ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। তারপর যারা তাদের ওপর বোমা ফেলেছিল, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যেই তারা পরমাণু বিদ্যুতে বলীয়ান হয়ে ওঠে, দেশের তিরিশ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করছিল পরমাণু বিদ্যুৎ। কিন্তু গত বছরের মার্চ মাসের পরমাণু বিপর্যয় ফের দেশটাকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান পরে বলেছিলেন, একসময় তার মনে হয়েছিল, ‘হয়ত জাপানেরই আর অস্তিত্ব থাকবে না।’ এবার পরমাণু বিদ্যুতের পথ থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করার ঠিক আগে দেশের প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীগুলি এবং পরমাণু লবি ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকেও চাপ আসতে থাকে, এমনই জানিয়েছে জাপানি দৈনিক ‘মাইনচি’।
প্রসঙ্গত, জাপানের পরমাণু বিরোধী আন্দোলন এক অভিনব পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে দেশে চলছে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ অভিযান। দেশের সরকার সেই অভিযানে মদত দিচ্ছে। বানানো হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুতের পরিকাঠামো। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে সাপ্তাহিক ধর্নায় সামিল হচ্ছে হাজার হাজার জাপানবাসী। এই সপ্তাহের ধর্নায় সেখানে কুদানকুলামের মৎস্যজীবীদের প্রতি সংহতি জানানো হয়েছে। তার ছবি ডায়ানিউক ডট অর্গ-এর সূত্রে পাওয়া।
Leave a Reply