দীপঙ্কর সরকার, হালতু, ৩১ আগস্ট#
কলকাতা থেকে ৫০ কিমি দূরত্বে, শিয়ালদহ থেকে লক্ষীকান্তপুর লোকালে বহরু স্টেশনেতে নেমে বাঁদিকে (পূর্বদিকে) উত্তরপাড়া হয়ে ৩ কিমি গেলেই ময়দা গ্রাম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তারদহ ও মেদিনীপুরের গেঁওমালির একসময় পর্তুগীজদের জমিদারী ছিল। তারদহ থেকে তার এক অংশ ময়দা অঞ্চলে চলে আসে। সেই সময় এই অঞ্চল দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত ছিল। পরে তা অন্যত্র সরে যায়। ময়দায় এসে পর্তুগীজরা বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপিত করে। পর্তুগীজ মাদিয়া শব্দ থেকে ময়দা নামের উৎপত্তি। শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচরিত-এ আছে বহরুর নিকটবর্তী আদি গঙ্গার পূর্ব তীরবর্তী ময়দা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। কারণ ইহা একটি রেভেনিউ পরগনার কেন্দ্রীয় দফতর ছিল এবং পর্তুগীজদের একটি বন্দর ছিল। কবি কৃষ্ণরাম দাশের গ্রন্থাবলীর রায়মঙ্গল কাব্যের ১৮৬ পৃষ্ঠায় ময়দা গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। ময়দা গ্রামের পূর্বদিকে উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর প্রসারিত একদা একটি রাস্তা ছিল দ্বারির জাঙ্ঘাল। রাস্তাটি বর্তমানে লুপ্ত। আদি গঙ্গাতীর বরাবর কালীঘাট থেকে ছত্রভোগ পর্যন্ত এই পথ ছিল। এই ময়দা গ্রামে পর্তুগীজদের কীর্তির কোনো নিদর্শন না পাওয়া গেলেও শ্রী শ্রী দক্ষিণাকালী মাতার পাতালভেদি মন্দিরের জন্য এই গ্রাম বিখ্যাত।
এই গ্রামের অতিপ্রাচীন মন্দির হল এই পাতালভেদী শ্রী শ্রী দক্ষিণাকালীবাড়ি। ৭৩ শতক জায়গা জুড়ে এই মন্দির চত্বর। পশ্চিমে মায়ের পুকুর ১ বিঘা জমি নিয়ে। মায়ের মন্দিরের পূর্ব-দক্ষিণে শিবমন্দির। ডাইনে ভোগ ঘর। পেছনে পশ্চিমে উত্তরে সাধক ভবানী পাঠকের পঞ্চমুণ্ডির আসন। ময়দা গ্রামের এই পাতালভেদী শ্রী শ্রী দক্ষিণাকালী মায়ের সম্বন্ধে নানা কিংবদন্তী প্রচলিত।
কালীপুজোর সময় রাজা পাবর্ণ রায়চৌধুরীদের নামে সংকল্প করে একই সঙ্গে জোড়া পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। ভাদ্রমাসে তাল নবমীতে উৎসব শুরু। কালীপুজোর পর মায়ের বাৎসরিক মহা অন্নভোগ হয়। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ১২টার পর থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত নিঃসন্তান জননী ও রোগীদের মায়ের কবচ দেওয়া হয়। গঙ্গাস্নান উপলক্ষে মায়ের মন্দিরের চত্বর থেকে উত্তরে চৌধুরী পাড়া থেকে দক্ষিণে ঘোষপাড়া অবধি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বিরাট মেলা বসে।
ময়দা কালীবাড়ির উন্নয়ন সমিতি কর্তৃক নাটমন্দির ১৩৯০ সালে তৈরি হয়। এই উন্নয়ন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা শ্রী সুনীল সরকার ও সভাপতি শ্যাম প্রসাদ ব্যানার্জি (৯৪৩২৮৯৭১৬২)।
মন্দির চত্বরের আনাচে কানাচে পুরো ঘুরে দেখে কয়েকটি ছবি তুললাম। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারেরও ছবি নিতে নিতে মনে হল, তেমন কোনো বিশেষ স্থাপত্যশৈলী নেই। তবে মন্দিরটিকে নিয়ে বিশ্বাসী ভক্তজনের মধ্যে যথেষ্ট আস্থা আছে। বহু দূরদূরান্ত থেকে ভক্তজনেরা আসে তাদের নিজ নিজ মনোবাসনা নিয়ে। আমি এসেছিলাম ঘরের কাছে মন্দিরময় একটি গ্রামের ইতিবৃত্ত জানতে। আমার ভবঘুরে মনে নতুন কিছু দেখার একরাশ অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম ট্রেনে করে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল।
Soumitra Seth says
খুব সুন্দর উপস্থাপনা 🙏 অনেক অনেক ধন্যবাদ 🤝 ভালো থাকবে।🕉🙏🙏🕉
🌼 ওঁ ক্রীং কালিকায় নমঃ 🌼
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺