অদৃশ্য রশ্মির নানা বিপদ
‘অদৃশ্য রশ্মি দু-ধরনের হয়। যেহেতু এদের চোখে দেখা যায় না, রশ্মিগুলোর যে ভাগ আছে তা নিয়ে আমরা তত চিন্তিত নই। বিজ্ঞানীরা পরে বের করেছিলেন, রশ্মিগুলো অদৃশ্য হলেও তাদের নানা ধর্ম আছে, সেই ধর্মের ভিত্তিতে এদের দু-ভাগে ভাগ করা যায়। একদলকে বলা হয়, আয়ন-সক্ষম (ionising). আয়ন কী? তোমরা জানো, একটা পরমাণুর কেন্দ্রে যদি দশটা প্রোটন থাকে, তাহলে তার বাইরের কক্ষপথে দশটা ইলেকট্রন ঘুরছে। দশটা প্রোটনের দশটা ধনাত্মক চার্জ, দশটা ইলেকট্রনের দশটা ঋণাত্মক চার্জ, যোগ করলে শূন্য। এবার ধরো, কোনোভাবে বাইরে থেকে ধাক্কা খেয়ে একটা ইলেকট্রন কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল, তাহলে সেই পরমাণুর একটা ধনাত্মক চার্জ বেড়ে গেল। এই জিনিসটাকে আয়ন বলে। অদৃশ্য রশ্মি যখন কোনো বস্তুর মধ্য দিয়ে যায়, সেই বস্তুর মধ্যে যে পরমাণুগুলো আছে, তার কোনো কোনো ইলেকট্রনকে সে তার কক্ষপথ থেকে ছিটকে বের করে দেয়। তাহলে যেগুলো থেকে ইলেকট্রন ছিটকে বেরিয়ে গেল, সেগুলো আয়ন হয়ে গেল। এই রশ্মি যেহেতু আয়ন তৈরি করে, তাই একে আয়ন-সক্ষম বিকিরণ বলে। ইংরেজিতে বলে ionising radiation. আর একদল আছে, যারা বস্তুর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বস্তুর পরমাণুর ইলেকট্রনকে ছিটকে বের করে দিতে পারে না। কিন্তু সেই রশ্মি বস্তুর মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। এগুলোকে বলে আয়ন-অক্ষম বিকিরণ বা non-ionising radiation. এর মধ্যে রয়েছে অতি বেগুনি (Ultra-violet) রশ্মি।টিভির রিমোট ব্যবহার করে যে চ্যানেল পাল্টানো হয়, তাও অদৃশ্য একটা বিকিরণ, একে অবলোহিত (Infra-red) রশ্মি বলে। রোল-টোল খেতে গেলে একটা মেশিনে ঢুকিয়ে দিয়ে ঝট করে গরম করে দেয়, একে মাইক্রোওয়েভ বলে। এছাড়া, আমরা টিভি দেখছি, এফএম-এর গান শুনছি, বাড়িতে কেব্ল বা তার দিয়ে যে ইলেকট্রিক আসছে, এইসবই যে রশ্মির মাধ্যমে হয়, তা আয়ন-অক্ষম। আর আয়ন-সক্ষম হচ্ছে, যেমন এক্স-রে। তোমরা তেজস্ক্রিয়তার কথা শুনেছ, আলফা কণা, বিটা কণা, অনেক দূর থেকে আসা মহাজাগতিক রশ্মি — এগুলো এত সাঙ্ঘাতিক যে পৃথিবীর একটা মেরু দিয়ে ঢুকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে আর একটা মেরু দিয়ে বেরিয়ে যায়। এসব রশ্মি আয়ন-সক্ষম, আয়ন তৈরি করতে পারে।
এই দুটোই আমাদের অনেক কাজে লাগে। আবার দুটোরই অনেক বিপদ আছে। বিপদের সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। আর এদের সুবিধা কতটা যে বিপদের ঝুঁকি নেওয়া যায়?’
পাবলিক প্লেসে Wi Fi
‘পাবলিক প্লেসে যারা ইন্টারনেটের জন্য Wi Fi বসাচ্ছে, আমি বলব তাদের মতো সমাজবিরোধী লোক হয় না। তারা অন্য সুবিধা পেতে চাইছে। ওখানে Wi Fi এর দরকার নেই। কেন Wi Fi লাগবে ওখানে? কেব্ল ঝুলিয়ে নিয়ে যেতে কী অসুবিধা আছে? সারা ঘরে যদি পাখা চলে, পাওয়ার লাইন থাকে, তাহলে একটা কম্পিউটারের লাইন যেতে কী অসুবিধা? দিব্যি নিয়ে যাওয়া যায়। এতে একমাত্র কনট্রাক্টরদের সুবিধা হবে। Wi Fi -এর দাম বেশি। Wi Fi তো একেবারে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত। এয়ার-কন্ডিশন্ড ঘরে Wi Fi মানে হচ্ছে, গোটা জিনিসটা বারবার রিফ্লেকটেড হবে কাঁচের গা থেকে। এর ক্ষতিটা হবে, আগে হয়তো একটা রশ্মি পড়ে বেরিয়ে যেত, এখন কাঁচের গায়ে ধাক্কা খাবে, আবার ফিরে এসে অন্য দেওয়ালে ধাক্কা খাবে, এই চলবে। ২-৩ ঘণ্টা যে কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পড়বে (ওখানে Wi Fi আছে), একবছরের যে অনুমোদনযোগ্য ডোজ তার সমানুপাতিক ডোজ একদিনেই খাবে একজন পড়ুয়া। একদিন লাইব্রেরি গেলে, আবার তার একবছর পরে যাওয়া উচিত। তা যদি না হয়, তাহলে সেই পড়ুয়া ক্যানসারের পেশেন্ট হবে। এগুলো নিয়ে আমরা অনেক লেখালেখি করেছি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমাদের দেশে তো কিছু করা যায় না। যারা Wi Fi বসিয়েছে, তারা নিজেরা কেউ Wi Fi ব্যবহার করে না।
অদৃশ্য বিপজ্জনক রশ্মির উৎস
আমাদের দেশে কোন কোন জায়গা থেকে অদৃশ্য বিপজ্জনক রশ্মি বেরোয়? প্রথম হচ্ছে, তোমরা যে এফএম শোনো, সেই এফএম টাওয়ার থেকে বেরোয়। টিভির টাওয়ার থেকে বেরোয়। এফএম ছাড়া আর একধরনের রেডিও হয়, সেটা হল এএম, টিভিতে যে শব্দটা শোনো, সেটা এই এএম তরঙ্গ। এটা আর এক ধরনের ট্রান্সমিশন। ইন্টারনেটের জন্য Wi Fi . সেলফোনের টাওয়ার নানা জায়গায় তোমরা সবাই দেখেছ। কতটা করে শক্তি লাগে এগুলোতে? তোমরা সেলফোন টাওয়ারে দেখো কুড়ি ওয়াট। তাই তো? Wi Fi তে একশো কুড়ি মিলিওয়াট, মানে অনেক কম। কিন্তু Wi Fi এর বিপদটা হচ্ছে, অল্প জায়গায় দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকে। যেই তুমি কম্পিউটারের পাওয়ারটা অন করে দিলে, Wi Fi -টা চালু হল, অর্থাৎ রেডিয়েশন শুরু হল। মাইক্রোওয়েভের সুবিধা হচ্ছে, যখন রান্না করবে তখন অন করবে। যেই রান্না বন্ধ হল, আর কোনো মাইক্রোওয়েভ নেই। এফএম রেডিওতেও তাই। যতক্ষণ তুমি রেডিও অন না করছ, তোমার কোনো বিপদ নেই। কিন্তু মোবাইলটা যদি তুমি সাইলেন্ট মোডেও রাখো, তাহলেও কিন্তু রেডিয়েশন হচ্ছে।
‘অদৃশ্য রশ্মি দু-ধরনের হয়। যেহেতু এদের চোখে দেখা যায় না, রশ্মিগুলোর যে ভাগ আছে তা নিয়ে আমরা তত চিন্তিত নই। বিজ্ঞানীরা পরে বের করেছিলেন, রশ্মিগুলো অদৃশ্য হলেও তাদের নানা ধর্ম আছে, সেই ধর্মের ভিত্তিতে এদের দু-ভাগে ভাগ করা যায়। একদলকে বলা হয়, আয়ন-সক্ষম (ionising). আয়ন কী? তোমরা জানো, একটা পরমাণুর কেন্দ্রে যদি দশটা প্রোটন থাকে, তাহলে তার বাইরের কক্ষপথে দশটা ইলেকট্রন ঘুরছে। দশটা প্রোটনের দশটা ধনাত্মক চার্জ, দশটা ইলেকট্রনের দশটা ঋণাত্মক চার্জ, যোগ করলে শূন্য। এবার ধরো, কোনোভাবে বাইরে থেকে ধাক্কা খেয়ে একটা ইলেকট্রন কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল, তাহলে সেই পরমাণুর একটা ধনাত্মক চার্জ বেড়ে গেল। এই জিনিসটাকে আয়ন বলে। অদৃশ্য রশ্মি যখন কোনো বস্তুর মধ্য দিয়ে যায়, সেই বস্তুর মধ্যে যে পরমাণুগুলো আছে, তার কোনো কোনো ইলেকট্রনকে সে তার কক্ষপথ থেকে ছিটকে বের করে দেয়। তাহলে যেগুলো থেকে ইলেকট্রন ছিটকে বেরিয়ে গেল, সেগুলো আয়ন হয়ে গেল। এই রশ্মি যেহেতু আয়ন তৈরি করে, তাই একে আয়ন-সক্ষম বিকিরণ বলে। ইংরেজিতে বলে ionising radiation. আর একদল আছে, যারা বস্তুর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বস্তুর পরমাণুর ইলেকট্রনকে ছিটকে বের করে দিতে পারে না। কিন্তু সেই রশ্মি বস্তুর মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। এগুলোকে বলে আয়ন-অক্ষম বিকিরণ বা non-ionising radiation. এর মধ্যে রয়েছে অতি বেগুনি (Ultra-violet) রশ্মি।টিভির রিমোট ব্যবহার করে যে চ্যানেল পাল্টানো হয়, তাও অদৃশ্য একটা বিকিরণ, একে অবলোহিত (Infra-red) রশ্মি বলে। রোল-টোল খেতে গেলে একটা মেশিনে ঢুকিয়ে দিয়ে ঝট করে গরম করে দেয়, একে মাইক্রোওয়েভ বলে। এছাড়া, আমরা টিভি দেখছি, এফএম-এর গান শুনছি, বাড়িতে কেব্ল বা তার দিয়ে যে ইলেকট্রিক আসছে, এইসবই যে রশ্মির মাধ্যমে হয়, তা আয়ন-অক্ষম। আর আয়ন-সক্ষম হচ্ছে, যেমন এক্স-রে। তোমরা তেজস্ক্রিয়তার কথা শুনেছ, আলফা কণা, বিটা কণা, অনেক দূর থেকে আসা মহাজাগতিক রশ্মি — এগুলো এত সাঙ্ঘাতিক যে পৃথিবীর একটা মেরু দিয়ে ঢুকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে আর একটা মেরু দিয়ে বেরিয়ে যায়। এসব রশ্মি আয়ন-সক্ষম, আয়ন তৈরি করতে পারে।
এই দুটোই আমাদের অনেক কাজে লাগে। আবার দুটোরই অনেক বিপদ আছে। বিপদের সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। আর এদের সুবিধা কতটা যে বিপদের ঝুঁকি নেওয়া যায়?’
পাবলিক প্লেসে Wi Fi
‘পাবলিক প্লেসে যারা ইন্টারনেটের জন্য Wi Fi বসাচ্ছে, আমি বলব তাদের মতো সমাজবিরোধী লোক হয় না। তারা অন্য সুবিধা পেতে চাইছে। ওখানে Wi Fi এর দরকার নেই। কেন Wi Fi লাগবে ওখানে? কেব্ল ঝুলিয়ে নিয়ে যেতে কী অসুবিধা আছে? সারা ঘরে যদি পাখা চলে, পাওয়ার লাইন থাকে, তাহলে একটা কম্পিউটারের লাইন যেতে কী অসুবিধা? দিব্যি নিয়ে যাওয়া যায়। এতে একমাত্র কনট্রাক্টরদের সুবিধা হবে। Wi Fi -এর দাম বেশি। Wi Fi তো একেবারে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত। এয়ার-কন্ডিশন্ড ঘরে Wi Fi মানে হচ্ছে, গোটা জিনিসটা বারবার রিফ্লেকটেড হবে কাঁচের গা থেকে। এর ক্ষতিটা হবে, আগে হয়তো একটা রশ্মি পড়ে বেরিয়ে যেত, এখন কাঁচের গায়ে ধাক্কা খাবে, আবার ফিরে এসে অন্য দেওয়ালে ধাক্কা খাবে, এই চলবে। ২-৩ ঘণ্টা যে কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পড়বে (ওখানে Wi Fi আছে), একবছরের যে অনুমোদনযোগ্য ডোজ তার সমানুপাতিক ডোজ একদিনেই খাবে একজন পড়ুয়া। একদিন লাইব্রেরি গেলে, আবার তার একবছর পরে যাওয়া উচিত। তা যদি না হয়, তাহলে সেই পড়ুয়া ক্যানসারের পেশেন্ট হবে। এগুলো নিয়ে আমরা অনেক লেখালেখি করেছি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমাদের দেশে তো কিছু করা যায় না। যারা Wi Fi বসিয়েছে, তারা নিজেরা কেউ Wi Fi ব্যবহার করে না।
অদৃশ্য বিপজ্জনক রশ্মির উৎস
আমাদের দেশে কোন কোন জায়গা থেকে অদৃশ্য বিপজ্জনক রশ্মি বেরোয়? প্রথম হচ্ছে, তোমরা যে এফএম শোনো, সেই এফএম টাওয়ার থেকে বেরোয়। টিভির টাওয়ার থেকে বেরোয়। এফএম ছাড়া আর একধরনের রেডিও হয়, সেটা হল এএম, টিভিতে যে শব্দটা শোনো, সেটা এই এএম তরঙ্গ। এটা আর এক ধরনের ট্রান্সমিশন। ইন্টারনেটের জন্য Wi Fi . সেলফোনের টাওয়ার নানা জায়গায় তোমরা সবাই দেখেছ। কতটা করে শক্তি লাগে এগুলোতে? তোমরা সেলফোন টাওয়ারে দেখো কুড়ি ওয়াট। তাই তো? Wi Fi তে একশো কুড়ি মিলিওয়াট, মানে অনেক কম। কিন্তু Wi Fi এর বিপদটা হচ্ছে, অল্প জায়গায় দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকে। যেই তুমি কম্পিউটারের পাওয়ারটা অন করে দিলে, Wi Fi -টা চালু হল, অর্থাৎ রেডিয়েশন শুরু হল। মাইক্রোওয়েভের সুবিধা হচ্ছে, যখন রান্না করবে তখন অন করবে। যেই রান্না বন্ধ হল, আর কোনো মাইক্রোওয়েভ নেই। এফএম রেডিওতেও তাই। যতক্ষণ তুমি রেডিও অন না করছ, তোমার কোনো বিপদ নেই। কিন্তু মোবাইলটা যদি তুমি সাইলেন্ট মোডেও রাখো, তাহলেও কিন্তু রেডিয়েশন হচ্ছে।
স্যার আপনি মোবাইল কোথায় রাখেন?
শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘তোমাদের কার কার মোবাইল আছে? প্রায় সবারই আছে। কোথায় রেখেছ মোবাইলটা? বুক পকেটে কে কে রাখো? প্যান্টের পকেটে? বাঙ্গালোরে গিয়ে দেখলাম, এক ধরনের প্যান্ট বেরিয়েছে, হিপ পকেটের পাশে একটা মোবাইলের পকেট, দরকার মতো চেন দিয়ে ছোটোবড়ো করা যায়। যাদের প্যান্টের সামনের পকেটে থাকে, তাদের থাইয়ে টাচ করে থাকে মোবাইল। আমাদের দেহে তিনটে লোসিকা গ্রন্থি আছে। তার মধ্যে একটা থাকে কুঁচকির কাছে। ওইটা খুব বিপজ্জনক গ্রন্থি। ওইটার গোলমাল হলে আমাদের অনেক কিছু থেমে যায়, আমাদের মাথায় অনেক গোলমাল হয়। আর মাইক্রোওয়েভ যেটা বেরোয়, লোসিকা গ্রন্থির ওপরে যে চর্বির স্তরটা থাকে, তাকে মাইক্রোওয়েভ শুষে নেয়। তার ফলে ওই গ্রন্থি থেকে যে রসটা বেরোনোর কথা, যাতে আমাদের দেহের সব ঠিকঠাক চলে, কোনো কোনো রস একশো গুণ বাড়ে, কোনো কোনো রস পঞ্চাশ গুণ কমে যায়। তার মধ্যে একটা কমে যাওয়ার জন্য আমরা ক্লান্তবোধ করি। তুমি কিচ্ছু না করে বেশ কিছুক্ষণ মোবাইলে কথা বললে তোমার মনোযোগ গোলমাল হয়ে যাবে। এই যে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে অ্যাকসিডেন্ট হয়, মোবাইলে যদি তুমি দু-মিনিটের বেশি কথা বলো — আমাদের হাইপোথ্যালামাসের পাশে ওই গ্রন্থি থেকে একটা রস বেরিয়ে আমাদের সবসময় জাগিয়ে রাখে — ওই রসটা বেরোনো পঞ্চাশ ভাগ কমে যায়। ফলে আমাদের চটপটে ভাবটা কমে যায়। ট্রেন হয়তো হর্ন দিয়েছে, কিন্তু তুমি শুনতে পাওনি। ট্রেনটা তুমি দেখতে পাচ্ছ, অথচ মনোযোগের অভাবে তুমি বুঝতে পারছ না ওটা চলন্ত।’
‘… মোবাইল ফোনের অদৃশ্য রশ্মি মাইক্রোওয়েভ থেকে দু-রকম ক্ষতি হয়। একটা হল মাইক্রোওয়েভ গরম করে দেয়; আর এছাড়াও অন্য কিছু কাজ করে। এই ক্ষতি নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। যেমন, মোবাইল ফোন কানে ধরে রাখলে, কানের কাছেই মস্তিষ্ক থাকে, সেখানে গিয়ে মাইক্রোওয়েভ কিছু ক্ষতি করে। কলা-কোষগুলোকে গরম করে না বটে, কিন্তু আমাদের যে উৎসেচক বা হরমোনগুলো বেরোত সেগুলো কমিয়ে বা বাড়িয়ে দেয়। তাতে আমাদের ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতিটাকে কিন্তু আমাদের দেশের মোবাইল সংক্রান্ত আইনকানুনে রাখা হয়নি। আর মোবাইল ফোন থেকে যে ক্ষতি হয়, তার কুড়িভাগ হয় গরম হওয়ার জন্য, আর আশিভাগ হয় অন্য কারণে। অর্থাৎ বেশি ক্ষতি যেখান থেকে হয়, তার কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কারও যদি পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হয়, সে কোনো আইনি ক্ষতিপূরণ পাবে না।
ছেলেদের জামায় বুক পকেটগুলো সাধারণত বাঁদিকে হয়। আর বেশিরভাগ লোকের হৃদযন্ত্র বাঁদিকে। ফলে বুক পকেটে মোবাইল ফোন রাখা বিপজ্জনক। মেয়েদের ক্ষতি হয় গলায় সেলফোন ঝুলিয়ে রাখার জন্য। সেটা আরও খারাপ। মেয়েদের জননাঙ্গের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
আমরা কানে যেভাবে সেলফোনটা ধরি, ভিতরে ৪৫-৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রয়েছে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড। এটা আমাদের কারোরই খেয়াল থাকে না। দেখো যত মডার্ন যন্ত্র ব্যবহার করছ, টু-জি বা থ্রি-জি, তত কম্পাঙ্ক বাড়ছে, তত বেশি তোমার দেহে অদৃশ্য রশ্মি যাচ্ছে। সাধারণ পুরোনো জমানার ফোন কম ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে অদৃশ্য রশ্মির যে শক্তি সেটা আমাদের দেহের চর্বিতে শোষিত হয়ে যায়। ফলে আমাদের তেমন ক্ষতি হয় না। চর্বি পেরিয়ে যখন মাংসপেশিতে যাচ্ছে ওই রশ্মি, তা আমাদের কোষ আর কলাগুলোকে নষ্ট করে।’
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে ছাত্ররা কিছু প্রশ্ন করে। একজন ছাত্র অকপটে জিজ্ঞেস করে, ‘স্যার আপনি কোথায় মোবাইল রাখেন?’
— আমি মোবাইল ফোন প্যান্টের পকেটে রাখি। তবে আমার মোবাইল ফোন বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। আমার দরকার পড়লে অন করি।
— আপনার ফোন আসে না?
— আমার সবাইকে বলা আছে, দরকার হলে ল্যান্ড ফোনে যোগাযোগ করবে। তোমরা বলবে, আর্জেন্সি বা জরুরি প্রয়োজনের কথা। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে যখন মোবাইল ফোন ছিল না, তখন কি আর্জেন্সি ছিল না? …
শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘তোমাদের কার কার মোবাইল আছে? প্রায় সবারই আছে। কোথায় রেখেছ মোবাইলটা? বুক পকেটে কে কে রাখো? প্যান্টের পকেটে? বাঙ্গালোরে গিয়ে দেখলাম, এক ধরনের প্যান্ট বেরিয়েছে, হিপ পকেটের পাশে একটা মোবাইলের পকেট, দরকার মতো চেন দিয়ে ছোটোবড়ো করা যায়। যাদের প্যান্টের সামনের পকেটে থাকে, তাদের থাইয়ে টাচ করে থাকে মোবাইল। আমাদের দেহে তিনটে লোসিকা গ্রন্থি আছে। তার মধ্যে একটা থাকে কুঁচকির কাছে। ওইটা খুব বিপজ্জনক গ্রন্থি। ওইটার গোলমাল হলে আমাদের অনেক কিছু থেমে যায়, আমাদের মাথায় অনেক গোলমাল হয়। আর মাইক্রোওয়েভ যেটা বেরোয়, লোসিকা গ্রন্থির ওপরে যে চর্বির স্তরটা থাকে, তাকে মাইক্রোওয়েভ শুষে নেয়। তার ফলে ওই গ্রন্থি থেকে যে রসটা বেরোনোর কথা, যাতে আমাদের দেহের সব ঠিকঠাক চলে, কোনো কোনো রস একশো গুণ বাড়ে, কোনো কোনো রস পঞ্চাশ গুণ কমে যায়। তার মধ্যে একটা কমে যাওয়ার জন্য আমরা ক্লান্তবোধ করি। তুমি কিচ্ছু না করে বেশ কিছুক্ষণ মোবাইলে কথা বললে তোমার মনোযোগ গোলমাল হয়ে যাবে। এই যে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে অ্যাকসিডেন্ট হয়, মোবাইলে যদি তুমি দু-মিনিটের বেশি কথা বলো — আমাদের হাইপোথ্যালামাসের পাশে ওই গ্রন্থি থেকে একটা রস বেরিয়ে আমাদের সবসময় জাগিয়ে রাখে — ওই রসটা বেরোনো পঞ্চাশ ভাগ কমে যায়। ফলে আমাদের চটপটে ভাবটা কমে যায়। ট্রেন হয়তো হর্ন দিয়েছে, কিন্তু তুমি শুনতে পাওনি। ট্রেনটা তুমি দেখতে পাচ্ছ, অথচ মনোযোগের অভাবে তুমি বুঝতে পারছ না ওটা চলন্ত।’
‘… মোবাইল ফোনের অদৃশ্য রশ্মি মাইক্রোওয়েভ থেকে দু-রকম ক্ষতি হয়। একটা হল মাইক্রোওয়েভ গরম করে দেয়; আর এছাড়াও অন্য কিছু কাজ করে। এই ক্ষতি নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। যেমন, মোবাইল ফোন কানে ধরে রাখলে, কানের কাছেই মস্তিষ্ক থাকে, সেখানে গিয়ে মাইক্রোওয়েভ কিছু ক্ষতি করে। কলা-কোষগুলোকে গরম করে না বটে, কিন্তু আমাদের যে উৎসেচক বা হরমোনগুলো বেরোত সেগুলো কমিয়ে বা বাড়িয়ে দেয়। তাতে আমাদের ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতিটাকে কিন্তু আমাদের দেশের মোবাইল সংক্রান্ত আইনকানুনে রাখা হয়নি। আর মোবাইল ফোন থেকে যে ক্ষতি হয়, তার কুড়িভাগ হয় গরম হওয়ার জন্য, আর আশিভাগ হয় অন্য কারণে। অর্থাৎ বেশি ক্ষতি যেখান থেকে হয়, তার কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কারও যদি পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হয়, সে কোনো আইনি ক্ষতিপূরণ পাবে না।
ছেলেদের জামায় বুক পকেটগুলো সাধারণত বাঁদিকে হয়। আর বেশিরভাগ লোকের হৃদযন্ত্র বাঁদিকে। ফলে বুক পকেটে মোবাইল ফোন রাখা বিপজ্জনক। মেয়েদের ক্ষতি হয় গলায় সেলফোন ঝুলিয়ে রাখার জন্য। সেটা আরও খারাপ। মেয়েদের জননাঙ্গের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
আমরা কানে যেভাবে সেলফোনটা ধরি, ভিতরে ৪৫-৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রয়েছে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড। এটা আমাদের কারোরই খেয়াল থাকে না। দেখো যত মডার্ন যন্ত্র ব্যবহার করছ, টু-জি বা থ্রি-জি, তত কম্পাঙ্ক বাড়ছে, তত বেশি তোমার দেহে অদৃশ্য রশ্মি যাচ্ছে। সাধারণ পুরোনো জমানার ফোন কম ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে অদৃশ্য রশ্মির যে শক্তি সেটা আমাদের দেহের চর্বিতে শোষিত হয়ে যায়। ফলে আমাদের তেমন ক্ষতি হয় না। চর্বি পেরিয়ে যখন মাংসপেশিতে যাচ্ছে ওই রশ্মি, তা আমাদের কোষ আর কলাগুলোকে নষ্ট করে।’
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে ছাত্ররা কিছু প্রশ্ন করে। একজন ছাত্র অকপটে জিজ্ঞেস করে, ‘স্যার আপনি কোথায় মোবাইল রাখেন?’
— আমি মোবাইল ফোন প্যান্টের পকেটে রাখি। তবে আমার মোবাইল ফোন বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। আমার দরকার পড়লে অন করি।
— আপনার ফোন আসে না?
— আমার সবাইকে বলা আছে, দরকার হলে ল্যান্ড ফোনে যোগাযোগ করবে। তোমরা বলবে, আর্জেন্সি বা জরুরি প্রয়োজনের কথা। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে যখন মোবাইল ফোন ছিল না, তখন কি আর্জেন্সি ছিল না? …
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে যখন তীব্র তাপদাহ চলছে, গরমের ছুটির মধ্যেও মেটিয়াব্রুজ বড়তলা হাই স্কুলের প্রায় চল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী তাদের স্কুলে এক আলোচনাসভায় অংশ নেয়। এছাড়া তাদের সঙ্গে ছিল স্থানীয় কিছু মানুষ। এই স্কুলের শিক্ষক শাকিল মহিনউদ্দিন এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য বিশেষ ভূমিকা নেন। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের বিজ্ঞানী শুভাশিস মুখোপাধ্যায় তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। আমরা এখানে তাঁর মূল বক্তব্যের কিছু কিছু অংশ উল্লেখ করছি
Leave a Reply