শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজিরতন, মেটিয়াবুরুজ#
‘জ্বালানির জন্য হয়রানি’ — বড়তলা অঞ্চলে মুখে মুখে ফিরছে এই কথাটা। রান্নার জ্বালানি নয়, মোটরবাইকে জ্বালানি ভরার সমস্যা থেকেই উদ্ভুত হয়েছে এই নতুন বিরক্তিকর পরিস্থিতি। মেটিয়াবুরুজ বড়তলা অঞ্চলে বহু মানুষের বাস, এলাকাটি মূলত ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ব্যবসার স্বার্থে ও ছেলের বায়না মেটাতে অভিভাবকদের দাক্ষিণ্যে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দু-চাকার মোটরবাইকের সংখ্যা। বাইকের দৌরাত্ম্যে রাস্তা পার হওয়া কিংবা রাস্তার ধার দিয়ে নিরাপদে হাঁটা দিনের পর দিন মুশকিল হয়ে পড়ছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাইক চালানো এখানকার নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এই বাইকগুলো সারাদিন নানা কাজে এবং অকাজেও ছুটে বেড়ায়। তাই দরকার হয় প্রচুর জ্বালানির। দারুণ ভিড় হয় এলাকার একমাত্র পেট্রোলপাম্পে। বাইকের সংখ্যাবৃদ্ধির হারের সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন পেট্রোলপাম্প দরকার। প্রায় প্রতিদিনই বড়তলা পেট্রোলপাম্পে ভিড় থিক থিক করে। সারি সারি বাইক যেভাবে জ্বালানি ভরতে অপেক্ষা করে, তাতে বড়ো রাস্তা প্রায়ই অচল হয়ে পড়ে। এর ওপর হাওড়া ও ধর্মতলাগামী বাস এবং লরি, ট্যাক্সি, ম্যাটাডোর জ্বালানির লাইনে এসে পড়লে এক বিশ্রি অবস্থার সৃষ্টি হয়।
গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে পাম্প সংলগ্ন ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। তারা অপেক্ষা করে হাওড়া, বড়োবাজার কিংবা ধর্মতলার প্যাসেঞ্জার তোলার জন্য। ফলে সৃষ্টি হয় প্রবল যানজট। নাকাল হয় পথচলতি মানুষ। এ দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনের। থমকে দাঁড়ায় রাস্তা, থমকে দাঁড়ায় স্বাভাবিক জনজীবন। তখন পায়ে হাঁটার উপায়ও থাকে না। জট কাটিয়ে একটা সাইকেলও গলে যেতে পারে না। ঠেলাঠেলি, ওভারটেক, করে এগিয়ে যাওয়া, রাগারাগি তো আছেই। সময় নষ্ট হয় নিত্যযাত্রীদের, খেটে খাওয়া মানুষের অমূল্য সময় বরবাদ হয়। তখন ওই অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য কোনো ট্রাফিক পুলিশকেও পাওয়া যায় না। তারা নিজেদের হিসেব করতে একটু দূরে রেললাইনে অপেক্ষা করে। এই নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। ভুক্তভোগীরাই ভুলে যায়। নেই কোনো প্রতিবাদ, সমাধানের আলাপ।
বড়তলার কাছাকাছি পেট্রোলপাম্প বলতে মেটিয়াবুরুজের ২৮ নম্বরের পেট্রোলপাম্প। দূরত্ব ৫ কিমি। অপরদিকে তারাতলার দূরত্ব প্রায় ১৫-১৬ কিমি। এই দুই জায়গায় গিয়ে জ্বালানি ভরা বাইকওয়ালাদের পছন্দ নয়। অনেকে যেতে চায় না অন্য কারণেও। অধিকাংশ বাইকওয়ালার বয়স আঠারোর নিচে। তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। সুতরাং মেটিয়াবুরুজ কিংবা নেচার পার্ক পার হওয়ার বিপদ তারা জানে।
অনেকে আশা করেছিল, বড়তলা কলকাতা পুলিশের এলাকাধীন হওয়ায় হয়তো কিছুটা সুরাহা হবে। কিন্তু কোথায় কী! বরং বেপরোয়া বাইক চালানোয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি শতগুণে বেড়েছে। এলাকার নেতানেত্রীরা চুপচাপ। ভোটের ঝুলিতে টান পড়তে পারে! জনৈক পথচারী সাবির আলি বিরক্ত হয়ে বলেই ফেলেন, ‘ভেবেছিলাম কলকাতা পুলিশ টোটাল ব্যাপারটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনবে। এখন দেখছি কোন এক যাদুবলে ওরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে।’ সকলেই মনে করেন, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। দু-একজনের মতামত, আকড়া ফটকে সরকারি ইটভাটাগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেই জমিতে পেট্রোলপাম্প বসালে কেমন হয়?
sriman chakraborty says
শালিলের খবরটা ভাল লাগল, আমাদের শহরের মধ্যে এবং বাইরে বাইকের দৌরাত্ব ভীষণ, সম্প্রতি আমার সাথে আমার এলাকায় এক বাইক চালকের বচসা হয়, আমি সংঘাতে যাইনি, তাহলে আমার দিনের কাজ লাটে উঠত। বাইক চালকরা তো মনে করে তারা বাঘের পিঠে চেপে ছুটছে।