অমিতা নন্দী, মহেশতলা রবীন্দ্রনগর, ১৭ জুন#
সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে আমার বাঁ পায়ের শেষ দুটো আঙ্গুল ভাঙল গত রবিবার। ফলে আবার ঘরে বন্দি। আজ সকালে দেখি, সাইকেল-ভ্যান নিয়ে একজন ফেরিওয়ালা সোজা আমাদের দুই বাড়ির কমন প্যাসেজ পেরিয়ে চলে এল। কৌতূহলবশত উঁকি মেরে দেখি, পাশের বাড়ির শেফালীর কাছ থেকে মাথার চুল কিনছে সেই যুবকটি।
চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে মাথার যে চুল উঠে যায় সেগুলো অনেক মেয়ে জমিয়ে রাখে যত্ন করে। এই ফেরিওয়ালারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই চুল সংগ্রহ করে, কেজি প্রতি ২৫০০ টাকা দরে। তারপর সেই চুল বিক্রি হবে কেজি প্রতি ৩০০০ টাকা দরে। আজ শেফালী একগোছা চুল বিক্রি করে পেল ২০ টাকা, ফেরিওয়ালার লাভ হবে ৫টাকারও কম। আলাপ করে জানা গেল এই যুবকের থেকে। নাম তার মহম্মদ আনিসুর রহমান।
আনিসুরের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায়। সেখানে মা, বাবা, আরও তিন ভাই, একটি অবিবাহিত ছোটো বোন এবং ওর বউ থাকে। ওদের একটি বাচ্চা হয়েছিল, ১৮ মাস বয়সে মারা গেছে। আর কোনো ভাইয়ের বিয়ে হয়নি। আনিসুর এখানে আকড়ায় একজন পরিচিত লোকের গোডাউনে থাকে। এখন ওর পেশা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভাঙাচোরা লোহা এবং মাথার চুল কেনা, তারপর সেগুলো বিক্রি করা। ওকে প্রশ্ন করি,
— সারাদিনে কি ১ কিলো চুল জোগাড় হয়?
— না না, তবে চুল আর ভাঙা লোহা বিক্রি করে দিনে গড়ে তিন-চারশো টাকা হয়ে যায়। আগে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। প্রথমে জোগাড়ে, তারপরে রাজমিস্ত্রির কাজ, কন্ট্রাক্ট নিয়ে বিল্ডিংয়ের কাজ করতাম।
— সে তো ভালোই, তাতে তো রোজগার বেশিই না কি?
— হ্যাঁ, কিন্তু সকাল থেকে বিকেল সারাদিন খাটনি, তারপর রিস্কও বেশি। একবার ওপর থেকে পড়ে গিয়ে হাতে এমন চোট পেয়েছি যে আর ওপরের দিকে, সিলিং-এ সিমেন্ট-গাঁথনির কাজ করতে পারি না। আর অনেকবার টাকা চোট খেয়েছি। এক বোনের বিয়েতে অনেক খরচা হয়ে গেছে। যাদের বিল্ডিংয়ের কাজ করেছি অনেকেই কিছু টাকা দিয়ে বাকিটা মেরে দিয়েছে। কলকাতা মেট্রোর কাজে গিয়েছিলাম, কন্ট্রাক্টর অনেক হাজার টাকা চোট করে দিয়েছে। উড়িষ্যায় গিয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকা, আর কেরালায় তো প্রায় দেড়-দু লাখ টাকা চোট খেয়েছি। অবশ্য আমারও দোষ ছিল। টাকার জন্য ঝগড়া করেছিলাম। ব্যস আর টাকা দিল না। বলল, যা পারো করে নাও। সব মিলিয়ে দেখলাম, আমার দ্বারা এই কাজ আর চলবে না। তাই এখন এই ফেরিওয়ালার কাজ করছি।
— আর কোনো হাতের কাজ — ইলেক্ট্রিক বা পাইপলাইনের কাজ এসব শেখেননি?
— আমি কাঠের কাজও জানি। তবে তেমন কিছু নিয়মিত করি না। কেবল রোজার পরবের সময় যে জাকাত দিতে হয়। সেটা তো হারামের টাকায় দেওয়া ঠিক না, তাই তখন মাস খানেক চাষের কাজ বা অন্য কোনো মেহনতের কাজ করে যে টাকাটা পাই সেটাই জাকাতে দিই।
— হারামের টাকা কেন?
— সত্যি কথা বলতে কি, এই যে পুরোনো লোহালক্কর কেনা-বেচা করি, সেখানে তো ওজনে একটু আধটু চুরি করতে হয়, তাহলে তো এই রোজগারটা পুরো ইমানের হল না, হারাম হয়ে গেল। তাই রোজার আগে থেকে কিছুদিন অন্য কাজ করি।
Arunima Choudhury says
Khub bhalo laage Sambad Manthan PoRte. Pashchim Banger AArtho Samajik Patobhumi, Krishijibi manusher katha, paribartaner chhobi samasto kichhu eto Swachchho bhashay lekha hoy je mone hoy ‘ Shesh hoye hoilo na shesh ‘. Ei e- patrika bandho na hoy ! Thik thak patrika’r abhav . arunima choudhury.
Manik says
Anisur Rahaman, apnar satti kotha gulo prosansgsar jogyo, jeta khub savabik kichu kotha….at Arunuma madam apnakeo dhonyobad or sathe parichay korar jonyo…