তমাল ভৌমিক, কলকাতা, ১২ জানুয়ারি#
অনেকদিন পরে মেট্রোয় উঠলাম। ভাড়া বাড়ার পরে এই প্রথম। কবি নজরুল থেকে নেতাজি ভবন অর্থাৎ গড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ভাড়া নিল ১৫ টাকা, আগে ভাড়া ছিল ৮ টাকা। খুবই গায়ে লাগছিল — কিন্তু উপায় নেই, জরুরি কাজ আছে, হাতে সময় কম।
দেখলাম গাড়ি বেশ ফাঁকা, সহজেই সিট পাওয়া গেল। এটা অফিস টাইম — নটা-একান্ন-র গাড়ি। আগে এখান থেকে এইসময়ে উঠলে মারামারি-হুড়োহুড়ি করেও সিট পাওয়া যেত না। কবি সুভাষ বা নিউ গড়িয়া স্টেশন থেকে গাড়ি ভর্তি করে দক্ষিণ ২৪-পরগনার যেসব মানুষ আসত, তারা নেই। এখান থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত সব স্টেশনেই কম কম লোক উঠছে। টালিগঞ্জে একটু বেশি লোক উঠলেও রবীন্দ্র সরোবর-কালীঘাট থেকে আগের তুলনায় অনেক কম। বেশিরভাগ অফিসের বাবু, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম।
নেতাজি ভবনে নেমে মেট্রোর একজন চেনা কর্মচারীর সাথে দেখা হল। আমি তো দেখলামই মেট্রোর যাত্রী অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। ওই কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করাতে উনিও বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। এতটা কমত না, যাদের স্মার্ট কার্ড ছিল তাদের একটু ছাড় দিতে হত। প্রচুর লোক কার্ড ফেরত দিয়ে দিয়েছে। কী করবে? কোনো লাভ নেই। আগে ৫০০ টাকার কার্ড কিনলে ৬৮৪ টাকা পাওয়া যেত, এখন ৫০০ টাকায় ৫৫০ টাকা, ওদিকে ভাড়াও তো এই বেশিবেশি হারেই কাটছে; তারপর, আগে কার্ড ছুঁইয়ে গেট না খুললে কার্ড আনলক্ করতে ১৩ টাকা লাগত, এখন ২৫ টাকা লাগে।’
উনি আমার সাথে একমত হলেন যে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা এবং শহরতলীর লোক কম উঠছে। আরও জানালেন, অনেকে এমন করছে যে এখান থেকে মহাত্মা গান্ধী রোড যেতে হলে ৫ টাকা দিয়ে সেন্ট্রালের টিকিট কেটে, সেখানে নেমে বাকিটা হেঁটে চলে যাচ্ছে। আমি বললাম, ‘সব মিলিয়ে কোনো লাভ হল ভাড়া বাড়িয়ে?’ ওই কর্মচারী বললেন, ‘না, না, আমার মনে হয় লাভ বাড়েনি, বরং কমে গেছে।’
হয়তো মেট্রো-কর্তৃপক্ষের লাভ বেড়েছে, কিন্তু যাত্রীদের যে নয় তা তো বোঝাই যাচ্ছে। একদল যাত্রী মেট্রোতে চড়তেই পারছে না। আরেকদল বেশি পয়সা দিয়ে সময় বাঁচাচ্ছে বা স্বাচ্ছন্দ্য কিনছে।
Leave a Reply