শাকিল মইনুদ্দিন, ২৮ জানুয়ারি, বড়তলা, মেটিয়াব্রুজ#
মেটিয়াব্রুজ-মহেশতলা অঞ্চল দর্জিশিল্পের পীঠস্থান। একদা এখানকার পোশাক শিল্পের কদর ছিল সারা ভারতবর্ষে। কিন্তু বর্তমানে সেই সুনামে ভাঁটা পড়েছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে উন্নত যন্ত্রনির্মিত আধুনিক পোশাক আজ স্বাগত, শুধু দেশে নয়, বিদেশেও। প্রায় কোণঠাসা এখানকার শিল্প সেই মান্ধাতার আমলের ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পের তকমায় সন্তুষ্ট। দর্জির ব্যক্তিগত নৈপুন্য আজ বিরল, নেই কোনো প্রযুক্তিগত দক্ষতা। কাজ শেখার অনাগ্রহ ও গয়ংগচ্ছ মনোভাব দর্জিশিল্পকে কঠিন সমস্যার সামনে দাঁড় করিয়েছে। আজকালকার ছেলেরা দর্জি হতে চায় না, শিখতে চায় না কাজের কলাকৌশল। শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত না হয়ে ওস্তাগরি করার দিকেই তাদের ঝোঁক বেশি। তাই দর্জি অভিধার পরিবর্তে ‘ওস্তাগর’ ডাক শুনেই তারা তৃপ্ত। সে ছোটো, মাঝারি বা বড়ো যাই হোক না কেন। বর্তমান কারিগরদের বাস পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। তারা এখানে থাকা-খাওয়া-ঘরভাড়ার বোঝা টানার পরিবর্তে গ্রামে থেকেই কাজ করতে চায়। শিল্পের ছোঁয়া তো নেই, গতানুগতিক কায়দায় পোশাক তৈরিতেই তারা ব্যস্ত।
দর্জিশিল্পের এই করুণ অবস্থা দেখে অঞ্চলের প্রবীণেরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। ইদানীং বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় এই শিল্পকে বাঁচাতে কিছু প্রস্তাব উঠে আসছে। এ বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষক আখতার হোসেন সাহেবের অভিমত, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হল, মহিলা দর্জি-শিল্পী তৈরি করা। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, মেয়েদের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও শেখার আগ্রহ দর্জিদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে (ঘরানাকে) টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। অনেকেই তাঁর এই মতকে সমর্থন করেছেন। ঘটনা হল, এলাকার দরিদ্র ঘরের বেশ কিছু সংখ্যক মেয়ে প্রথাগত শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি সাংসারিক অনটন দূর করার জন্য প্যান্টের কাজ, কাজঘর-বোতামঘর সেলাই, ইন্টারলকিংয়ের কাজ, ফ্রিল টানা, হাতে চুমকি বসানোর মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এই অঞ্চলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিক্ষার হার ক্রমবর্ধমান, অনেকেই উচ্চশিক্ষারও তালিম নিচ্ছে। শিক্ষার পরশ ও যুগের ভাবনা এদের স্বাবলম্বী হতে প্রেরণা দিচ্ছে। বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বই, পাঞ্জাবে সরকারি অর্থানুকুল্যে গড়ে ওঠা গারমেন্টস ফ্যাকট্রিগুলোতে মহিলা কারিগরেরা পোশাক শিল্পকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। এখানেই বা কেন আমরা সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবো? এই প্রশ্ন অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে। তাদের দাবি, এলাকায় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার বা বৃত্তিমুখী শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। আজকের শিক্ষিত স্বনির্ভর মেয়েরা আগামী প্রজন্মের কাছে সুস্থ চেতনা ও পরিকল্পিত জীবনযাপনের একটা দিশা দেখাতে পারবে।
Leave a Reply