১৪ ফেব্রুয়ারি, শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজিরতন, মেটিয়াবুরুজ#
তিনি পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলেন অসংখ্য নবজাতককে। আজ সকল মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে তিনি পাড়ি দিলেন অন্ধকারের অসীমলোকে। গোপালের মা আজ আর নেই। রবীন্দ্রনগরের প্রান্তসীমায় তাঁর নিজের বাসভবনে আজ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় আশি বছর। আজ সন্ধ্যা সাতটায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন কোন অচিনপুরে! আমাদের এই বিশাল মেটিয়াবুরুজ এলাকার সকলের পরিচিত দাইমা।
এমন দিন ছিল যখন কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল ছিল না, ছিল না কোনো নার্সিং হোম বা প্রসূতিকেন্দ্র। তখন ছিলেন গোপালের মা। রাতদুপুরে দারুণ প্রসব যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন কোনো প্রসূতি, রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। এমতাবস্থায় সেখানে হাজির হয়ে যেতেন গোপালের মা। বাড়ির দরজায় দাঁড়াতেই প্রসূতি ভরসা পেতেন। সেই ভরসায় বুক চিতিয়ে জন্ম দিতেন নবজাতককে। নিতান্ত জলভাতের মতোই তিনি তাঁর কাজটি সম্পন্ন করতেন। অনেক সময় পাড়ার অন্য দাইমাদের বকাঝকা করতেন। তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেন ভুলত্রুটিগুলি। ফিসফিসানি শোনা যেত, দিদি এসে গেছেন — ব্যস, আর কোনো চিন্তা নেই। আনাড়ি দাইমায়েরা সরে পড়ত গুটিগুটি পায়ে। বাইরে গিয়ে তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলত। এতক্ষণ ভয়ে দুরুদুরু করছিল তাদের বুক। সেই বুকে ভরসা আর সাহস জোগাতেন গোপালের মা। অত্যাধুনিক চিকিৎসা নয়, খানিকটা প্রাচীন পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে তিনি সাহায্য করতেন প্রসূতি-মাকে। মায়ের সন্তান প্রসবে অসুবিধা হত না, নবজাতক জন্ম নিত সুস্থভাবে। তবে প্রসূতির অবস্থা দেখে ‘হসপিটালাইজড’ করার পরামর্শও দিতেন নির্দ্বিধায়।
তিনি আজ চলে গেলেন। কথাটা শুনেই আঁতকে উঠলেন বছর পঞ্চাশের জাকিরা বিবি। কথায় কথায় জানালেন — ‘বড়ো ভালো মানুষ ছিলেন দিদি’। জাকিরা বিবির চোখেমুখে স্পষ্ট হয়ে উঠল সেইসব দিনের উত্তেজনার ছাপ। হয়তো তাঁর মনে পড়ে গেল সেইসব কঠিন দিনগুলোর কথা। শুধু জাকিরা বিবিই কেন, গোপালের মায়ের খবরটা শুনে অনেকেরই মনে পড়ে যাবে পুরোনো দিনের কথা। তখনকার মা-চাচীদের বুকের ভরসা ছিলেন যে তিনি।
Leave a Reply