ধনবীর পামার সেন্টার ফর গ্লেসিয়ার স্টাডিজ-এর গবেষণাকর্মী। উনি ১৭ জুন কেদারনাথের শহরেরও অনেকটা উঁচুতে গান্ধী সরোবরের ১০০-১৫০ মিটার দূরে ক্যাম্প করে ছিলেন গবেষণার জন্য। গান্ধী সরোবর ভেঙে পড়েছিল তার সামনেই। নিচে তার সাথে তিলক সোনির কথোপকথন, ৮ জুলাই#
তিলক : ওইদিন কী হয়েছিল?
পামার : সেদিন আমি ওখানেই ছিলাম। সকাল ছ’টা চল্লিশ মিনিটে ওই সরোবরটি ফেটে যায়।
তিলক : কেউ বলছে মেঘ ভেঙেছিল। কেউ বলছে সরোবরটি ভেঙে পড়েছিল। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন ওখানে?
পামার : মেঘ ভেঙেছিল আগেরদিন সন্ধ্যেবেলা পাঁচটা নাগাদ। কিন্তু ১৭ তারিখ সকালে পৌনে সাতটার সময় লেক ভেঙে গিয়েছিল। … ওই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। আমাদের বেরিয়ে মাপজোক নেওয়ার জন্য ডিসচার্জ পয়েন্টে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য আমরা যেতে পারিনি। তাই তাঁবুতেই আমরা দু-জন শুয়ে ছিলাম। এমন সময় মাটি কাঁপতে শুরু করল। আমি বন্ধুকে বললাম, দাঁড়িয়ে পড়ো। বন্ধু যেই তাঁবুর জিপারটি খুলেছে, দেখল তাঁবুর পাশেই জল। আমরা তখন বেরিয়ে এলাম। তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সরোবরটি ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিশাল ঢেউ উঠে যায়, সুনামির মতো। তারপর আর নিচে কিছু দেখা যায়নি। অন্ধকার হয়ে যায়। ধোঁয়াশায় ভরে যায়। দশ মিনিট বাদে যখন একটু পরিষ্কার হল, তখন নিচে তাকিয়ে দেখলাম, কেদার মন্দিরের ওখানে কিছুই নেই।
তিলক : আপনারা বাঁচলেন কীভাবে?
পামার : আমরা তো এই কাজ করি, তাই আমাদের প্রশিক্ষণ আছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে নিচে নেমে আসতে থাকি সাবধানে। বাসুকিতালের রাস্তা দিয়ে।
তিলক : সরোবর ভেঙে জল কি গিয়ে মন্দাকিনী নদীতে গিয়ে মেশে?
পামার : প্রথমে গিয়ে সরস্বতীতে মেশে, তারপর মন্দাকিনী-তে।
তিলক : মন্দিরটা বাঁচল কীভাবে?
পামার : মন্দিরটা তো বাঁচার কথাই নয়। বড়ো বড়ো বিল্ডিং ভেঙে পড়ল, আর মন্দিরটা বেঁচে গেল। সব ভোলেবাবার ইচ্ছা। সে হয়ত চেয়েছিল, মন্দিরটা বাঁচুক, আর বাকি সব চুলোয় যাক। (হাসি)
তিলক : আপনি তো হিমবাহের গলনের গবেষণা করেন। মেঘ ভাঙার সঙ্গে হিমবাহের গলনের কোনো সম্পর্ক আছে?
পামার : না নেই। আসলে এত উঁচুতে মেঘ ভাঙার কথাই নয়। কারণ অত উঁচুতে এত জোরে বৃষ্টিই হয় না।
তিলক : আপনি নিচে কেদারনাথ শহরে এসে কী দেখলেন?
পামার : বাসুকিতালের রাস্তা ধরে নিচে পাওয়ার হাউসে দুপুর ২ টা নাগাদ পৌঁছনোর পরে দেখলাম, পাঁচ ছয় জন বেঁচে আছে, বাকি আর কেউ নেই। ওই পাওয়ার হাউসে আমরা জামাকাপড় বদলালাম, চা বানিয়ে খেলাম। বিকেল পাঁচটা নাগাদ আবহাওয়া কিছুটা পরিষ্কার হলে একটা হেলিকপ্টার এল। কিন্তু এখানে ল্যান্ডিং না করে আবার ফিরে এল। সন্ধ্যেবেলা আরও কিছুটা পরিষ্কার হলে বেশ কিছু মানুষ মন্দাকিনী নদী পেরিয়ে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন নদীতে প্রচুর মানুষ ভেসে যায়।
Leave a Reply