সংসদ হামলায় অভিযুক্ত মহম্মদ আফ্জলের মৃত্যুদণ্ড প্রসঙ্গে “সংবাদ মন্থন”-এর ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে আফ্জলের মৃত্যুদণ্ড প্রসঙ্গে সংসদ হামলায় আফ্জলের স্বীকারোক্তির উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ‘সংবাদ মন্থন’ তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী অনুসারে লেখাটিতে মৃত্যুদণ্ড বিরোধী বক্তব্য রেখেছে এবং আফ্জলসহ অন্যান্যদের সঠিকভাবে মৃত্যুদণ্ড মকুবের দাবি করেছে। কিন্তু বিষয়টা আরও গভীরে। আফ্জল ছিলেন একজন আত্মসমর্পনকারী কাশ্মীরী জঙ্গি। আমাদের কাছে Society for the Protection of Detainees’ and Prisoners’ Rights(SPDPR) প্রচারিত একটি পুস্তিকা এসেছে যাতে আফ্জলের তিনটি চিঠি, আফ্জলের স্ত্রীর আবেদনসহ প্রকাশিত হয়েছে। আফ্জল তাঁর উকিল সুশীলকুমারের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিটিতে জানিয়েছেন কিভাবে তাঁকে মুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে সংসদ হামলার স্বীকারোক্তি তাঁর থেকে আদায় করা হয়েছে। সমগ্র ব্যাপারটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ফল, তা চিঠিটির ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে। পুস্তিকাটির শিরোনাম HANGING AFJAL WOULD BE A STIGMA ON INDIAN DEMOCRACY। নিচে চিঠিটির পুরো বঙ্গানুবাদ ‘সংবাদ মন্থন’-এ প্রকাশের জন্য পাঠালাম। ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বরূপ জানার জন্য সকলের চিঠিটা পড়া দরকার। অরুণ পাল, বালি, হাওড়া
আপনি আমার মামলাটি গ্রহণ করেছেন এবং আমার হয়ে লড়বেন এটা জেনে আমি আপনার প্রতি ভীষনভাবে কৃতজ্ঞ। আপনাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। মামলার প্রথম থেকেই আমি অবহেলিত এবং আমাকে কখনই প্রচার মাধ্যম বা কোর্টের কাছে সত্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয় নি। তিনবার দরখাস্ত দেওয়া সত্ত্বেও কোর্ট আমাকে কোন উকিল দেয়নি। হাইকোর্টে একজন উকিল জনিয়েছেন যে আফ্জল ফাঁসীতে ঝোলার থেকে বিষ ইনজেকশনে মৃত্যুর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে যা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। আমি কখনই এই ধরণের কথা বলিনি। উকিল মহাশয় আমার বা আমার পরিবারের দ্বারা নিযুক্ত ছিলেন না। সঠিক উকিল নিয়োগে আমার অক্ষমতা ও অসহায়তার সুযোগ নিয়েছেন তিনি। কঠোর নিরাপত্তায় জেলবন্দী থাকার কারণে এবং ওই উকিল মহাশয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় আমি নতুন উকিল নিয়োগ করতে পারিনি বা হাইকোর্টকে আমার মৃত্যুইচ্ছার ব্যাপারে যা বলা হয়েছিল তার প্রতিবাদ করতে পারিনি কারণ হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত আমি পরে জানতে পেরেছিলাম।
সংসদ হামলার মামলায় আমি কাশ্মীরের SPECIAL TASK FORCE(STF)-এর ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলাম। এখানে দিল্লিতে STF-এর সাথে যোগসাজশে তৈরি পুলিসি বয়ানের ভিত্তিতে কোর্ট আমাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। প্রচারমাধ্যমের প্রভাবও কাজ করেছিল যাদের সামনে আমাকে স্পেশাল পুলিশ এ.সি.পি. রাজবীর সিংয়ের হুমকিতে অপরাধ স্বীকার করতে হয়েছিল। আমাকে যে হুমকি দেওয়া হয়েছিল সেটা এমনকি দূরদর্শনের (শ্যামস্ তাহির আজ-তক) এক সাক্ষাৎকারে প্রমানিত, যেটা কোর্টেকে জানান হয়েছিল। শ্রীনগর বাস স্ট্যান্ড থেকে আমাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে STF সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে স্পেশাল পুলিশ আমাকে নিয়ে যায় দিল্লিতে। শ্রীনগরে প্যারিমপোরা (Parompora) থানায় আমার সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয় এবং তারপর মারধোর করে আমাকে হুমকি দেয় যদি আমি কাউকে কিছু বলি তাহলে আমার স্ত্রী ও পরিবারের ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে। এমনকি আমার ছোটভাই হিলাল আহ্মদ গুরুকে কোন শমন ছাড়াই পুলিশ হেপাজতে ২-৩ মাস আটকে রাখা হয়েছিল। এটা প্রথম আমাকে বলে এ.সি.পি. রাজবীর সিং। স্পেশাল পুলিশ আমাকে বলে, যদি আমি তাদের ইচ্ছানুসারে কথা বলি তাহলে তাঁরা আমার পরিবারের সদস্যদের কোন ক্ষতি করবে না। তারা আমাকে এই বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল যে আমার মামলাকে তারা হালকা করে দেখাবে যাতে পরে কোন একসময়ে মুক্তি পাব। আমার পরিবারের নিরাপত্তাকে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। গত সাত বছর ধরে আমি দেখে আসছি কিভাবে STF-এর লোকেরা কাশ্মীরীদের হত্যা করে আসছে, কিভাবে যুবকদের পুলিসি হেপাজতে হত্যা করে তাদের হাপিস করে দিয়েছে। পুলিসি হেপাজতে বহু অত্যাচার ও হত্যার আমি সাক্ষী এবং আমি নিজেও STF-এর সন্ত্রাস ও অত্যাচারের শিকার। JKLF-এর একজন আত্মসমর্পণকারী জঙ্গী হওয়ায় আমাকে ক্রমাগত সেনাবাহিনী, বি.এস.এফ ও STF-এর মত বিভিন্ন এজেন্সি উত্যক্ত করত, হুমকি দিত। কিন্তু যেহেতু STF ছিল অসংগঠিত, রাজ্য সরকারের মদতপুষ্ঠ বিশ্বাসঘাতকদের দল তাই তারা কাশ্মীরের সর্বত্র প্রত্যেক পরিবারে দিনে ও রাত্রে যে কোন সময়ে হামলা করত। STF যদি কাউকে তুলে নিয়ে যেত তাহলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁর মৃতদেহের জন্য অপেক্ষা করত। ৬০০০ যুবক এইভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে এবং ভীতিকর পরিবেশে আমার মত ব্যক্তিরা স্রেফ টিকে থাকার জন্য STF-এর হাতে এক নোংরা খেলার ঘুঁটি হয়ে যায়। এইরকম একটা ঘটনা হল, সংসদ আক্রমণের বহু আগে ২০০০ সালে আমি যখন সোপোরে (Sopore) ওষুধ ও শল্য চিকিৎসার জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবসা করছিলাম, তখন প্যারিমপোরা থানার আকবর নামে একজন পুলিশ ভেজাল ওষুধ বিক্রির অভিযোগে আমার থেকে ৫০০০ টাকা আদায় করে। সে কোর্টে এসে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছিল। সে আমাকে সংসদ আক্রমণের ঘটনার আগে থেকেই চিনত। কোর্টঘরে কাশ্মীরী ভাষায় সে আমাকে জানাল আমার পরিবার ও.কে., যেটা ছিল একটা পরোক্ষ হুমকি, বিচারকদের পক্ষে যা বোঝা অসম্ভব ছিল। নচেৎ আমি তাকে কোর্টে প্রশ্ন করতাম। কোর্ট তাঁর বিবৃতি রেকর্ড করার আগেই সে এই কাজটা করেছিল। বিচারের পুরো পর্ব জুড়ে সাক্ষী, পুলিশ, এমনকি বিচারকদের সঙ্ঘবদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে আমি ছিলাম নীরব ও অসহায় দর্শক। আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আমি এক বিভ্রান্তি ও বিহ্বলতার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি আমার পরিবারকে বাঁচাতে ও রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। যে কারণে আমি আজ মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তদের সারিতে অপেক্ষমান।
একজন আত্মসমর্পনকারী জঙ্গী হওয়ার কারণে যেহেতু সরকারী চাকরি পাওয়ার সুযোগ আমার ছিল না তাই ১৯৯৭-৯৮ সালে কমিশনের ভিত্তিতে আমি ওষুধ ও শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতির ব্যবসা শুরু করলাম। হয় আমাকে স্পেশাল পুলিশ অফিস বা স্পেশাল টাস্ক ফোর্স নতুবা পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর মদতে তৈরি বিশ্বাসঘাতকদের দলে যোগ দিতে হত। প্রত্যেকদিন জঙ্গীদের হাতে স্পেশাল পুলিশ অফিসাররা খুন হচ্ছিল। এই অবস্থায় আমি কমিশন ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করলাম, মাসে রোজগার হোত হাজার চার পাঁচেক টাকা। SPO-র পুলিশ ইনফর্মাররা সেইসব আত্মসমর্পণকারী জঙ্গীদের উত্যক্ত করত যারা STF-এর সাথে কাজ করত না। সেজন্য আমি ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় SPOকে ৩০০ টাকা, কখনও কখনও ৫০০ টাকা করে দিতাম যাতে আমি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারি, তা নাহলে ওরা আমাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে হাজির করাত। একবার SPO-র একজন আমায় বলল, তাদের ঊর্দ্ধতন কর্তাদের টাকা দিতে হয়। আমি আমার ব্যবসাতে প্রচুর পরিশ্রম করতাম। ফলে ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি ঘটছিল। একদিন সকাল দশটায় সদ্য দুমাস হল কেনা আমার নতুন স্কুটারে চেপে বসেছি, এমন সময় বুলেট প্রুফ জামা গায়ে STF-এর লোকেরা আমাকে পালহালান (Palhallan) ক্যাম্পে নিয়ে গেল। সেখানে ডি.এস.পি বিনয় গুপ্ত আমার ওপর অত্যাচার শুরু করল। বিদ্যুতের শক্, ঠাণ্ডা জলে চোবানো, পোড়া পেট্রল, লঙ্কাগুড়োর ব্যবহার ও অন্যান্য নানা পদ্ধতি। সে আমাকে বলল যে আমার কাছে অস্ত্র আছে। সন্ধ্যার সময় তার ইন্সপেক্টরদের একজন ফারুক আমায় জানাল যে আমি যদি ডিএসপি-কে দশ লাখ টাকা দেই তাহলে ছাড়া পেয়ে যাব, নতুবা আমাকে মেরে ফেলা হবে। তারপর তারা আমাকে হুমহামা (Humhama) STF ক্যাম্পে নিয়ে গেল। সেখানে ডিএসপি দ্রাবিন্দর সিং আমার ওপর আরেক দফা অত্যাচার চালাল। একজন ইন্সপেক্টর যাকে তারা শান্তি সিং নামে ডাকছিল সে আমাকে তিন ঘণ্টা ধরে ইলেকট্রিক শক্ দেয় এবং সেই সময় আমাকে জোর করে জল খাওয়ায়।। শেষপর্যন্ত আমি দশ লক্ষ টাকা দিতে প্রতিশ্রত হই। টাকাটা দেওয়ার জন্য আমার বৌয়ের গয়না বিক্রি করতে হয়েছিল, তাতেও ৮০ হাজার টাকার বেশি উঠল না। তখন তারা ২৪ হাজার টাকায় কেনা আমার নতুন স্কুটারটা নিয়ে গেল এইভাবে লাখখানেক টাকা দেওয়ার পর আমি রেহাই পেলাম। কিন্তু আমি তখন সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত।
ওই হুমহামা (Humhama) STF ক্যাম্পে তারিক নামে আর একজন বন্দী ছিল যে আমাকে বলেছিল সবসময় আমি যেন STF-এর সাথে সহযোগিতা করি, তা নাহলে তারা সবসময় উত্ত্যক্ত করবে এবং কখনই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেবে না। ওই সময়টা ছিল আমার জীবনের একটা বাঁক। তারিকের কথামত চলার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি। ১৯৯০ থেকে ৯৬ পর্যন্ত আমি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, আমি নিজেও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ও বাড়ি গিয়েও পড়াতাম। এই সূত্রে আলতাফ হোসেন নামে একজনের সাথে আমার পরিচয় হয়। ও ছিল বুদগাঁওয়ের (Budgam) এস এস পি আশাক হোসেনের শ্যালক। সে আমার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। আলতাফ আমাকে তাঁর দুই সন্তানকে পড়াতে অনুরোধ করল। জঙ্গীদের ভয়ে তারা বাইরে বেরোতে পারত না। একদিন আলতাফ আমাকে ডি এস পি দ্রাবিন্দার সিংয়ের কাছে নিয়ে গেল। সে আমাকে বলল যে তাঁর জন্য আমাকে একটা ছোট কাজ করে দিতে হবে। একজন ব্যক্তিকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে একটা ঘর ভাড়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে যেহেতু দিল্লি আমার ভালভাবে চেনা। আমি লোকটাকে চিনতাম না কিন্তু আমার সন্দেহ হল লোকটা কাশ্মীরী নয়, কারণ সে ভালভাবে কাশ্মীরী ভাষা বলতে পারছিল না। কিন্তু দ্রাবিন্দারের কথা না শুনে আমার কোন উপায় ছিল না। আমি লোকটিকে দিল্লি নিয়ে গেলাম। একদিন সে আমায় বলল, সে একটা গাড়ি কিনবে। আমি তার সাথে কারোল বাগে গেলাম। সে একটা গাড়ি কিনল। তখন সে দিল্লিতে নানান লোকের সাথে দেখা করত। আমরা দুজনই – মহম্মদ ও আমি – দ্রাবিন্দর সিংয়ের থেকে নানা ফোন কল পেতাম। একদিন মহম্মদ আমাকে বলল যদি সে কাশ্মীরে ফিরে যেতে চায় তাহলে সে সেটা পারে। সে আমায় ৩৫ হাজার টাকাও দিল। আমায় বলল এটা আমাকে তাঁর উপহার। দিন আট-ছয়েক আগে ইন্দ্র বিহারে আমার পরিবারের জন্য একটা ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম। আমি দিল্লিতে আমার পরিবারের সাথে থাকতে চাই, আমার এই জীবনে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। আমি বাড়িওয়ালির কাছে ভাড়া বাড়ির চাবি রেখে গিয়েছিলাম এবং তাকে বলেছিলাম ১৪ ডিসে. ঈদ উৎসবের পরে ফিরব।
সংসদ আক্রমণের পর আমি খুব টেনশনে ছিলাম। শ্রীনগরে তারিকের সাথে যোগাযোগ করি। সন্ধ্যাবেলায় সে আমায় জিজ্ঞেস করে দিল্লি থেকে কখন আমি ফিরেছি। আমি বললাম, ঠিক এক ঘণ্টা আগে। পরের দিন সকালে যখন আমি বাস স্ট্যাণ্ডে সপোরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি শ্রীনগর পুলিশ এসে আমায় ধরে প্যারোমপোর থানায় নিয়ে গেল। তারিক সেখানে STF-এর লোকেদের সাথে ছিল। তাঁরা আমার পকেট থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে নিল। সেখানে আমায় প্রচণ্ড মারল এবং STF-এর সদর দপ্তরে নিয়ে গেল। সেখান থেকে সোজা আমায় নিয়ে আসা হল দিল্লি। আমার চোখ ছিল বাঁধা। চোখ খোলার পর আমি নিজকে স্পেশাল পুলিশের টর্চার সেলে আবিষ্কার করলাম। স্পেশাল সেল কাস্টডিতে মহম্মদের ব্যাপারে সমস্ত কিছু তাদের খুলে বললাম। কিন্তু তাঁরা আমায় জানাল যে আমি, সৌকত ও তাঁর স্ত্রী নভজোৎ (আফশন), গীলানি সংসদ হামলার পেছনে রয়েছি। তাঁরা আমকে আমার পরিবারের ব্যাপারেও হুমকি দিল। ইনস্পেকটরদের একজন আমায় বলল, আমার ভাই হিলাল আহ্মদ গুরু STF-এর হেপাজতে। আমি তাদের সহযোগিতা না করলে পরিবারের অন্যান্যদেরও ধরে নিয়ে আসবে। শৌকত, তাঁর বৌ এবং গীলানিকে ব্যাপারটায় জড়িয়ে ফেলার জন্য তাঁরা আমকে চাপ দিয়ে রাজী করানোর চেষ্টা করল। আমি রাজি হই নি। আমি তাদের বললাম এটা অসম্ভব। তখন তাঁরা আমায় বলল গীলানি যে নির্দোষ এই ব্যাপারে আমি যেন একটাও কথা না বলি। কয়েকদিন পর হাতকড়া লাগানো অবস্থায় আমাকে প্রচারমাধ্যমের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করানো হল। সেখানে ছিল NDTV, Zee NEWS, Sahara TV, আজতক্ ইত্যাদি। এ.সি.পি রাজবীর সিং সেখানে ছিল। শ্যামস্ তারিক নামে একজন যখন আমাকে জিজ্ঞেস করল সংসদ আক্রমণে গীলানির কী ভূমিকা ছিল, আমি শুধুমাত্র বললাম, সে নির্দোষ। রাজবীর সিং সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেঁড়ে উঠে এসে চীৎকার করে সকলের সামনে আমায় বলল যে গীলানি সম্পর্কে কিছু বলতে সে আমায় বারন করেছিল কি না। রাজবীর সিংয়ের আচরণ আমার অসহায়তাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। প্রচার মাধ্যমের লোকজনরা অন্তঃত এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে আফজল যা বলছে সেটা একটা হুমকি ও বিধিনিষেধের চাপের মধ্যে। তারপর রাজবীর সিং TV-র লোকেদের অনুরোধ করল গীলানি সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরটা যেন প্রকাশ করা না হয়। সেইদিন সন্ধ্যায় রাজবীর সিং আমায় জিজ্ঞেস করল আমি আমার পরিবারের সাথে দেখা করতে চাই কিনা। আমি হ্যাঁ বলার পর আমার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ পেলাম। কথা শেষ হওয়ার পর রাজবীর সিং আমায় হুমকি দিয়ে বলল যদি আমার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্যদের জীবিত দেখতে চাই তাহলে প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে তাদের সাথে সহযোগিতা করতে হবে। তাঁরা আমায় দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে দেখাল, যেসব জায়গা থেকে মহম্মদ নানান জিনিস কিনেছিল। তাঁরা আমাকে নিয়ে গেল কাশ্মীরে যেখান থেকে আমরা কিছু না করেই ফিরে এলাম। তাঁরা আমাকে দিয়ে অন্তঃত ২০০-৩০০ সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল। আমি কোর্টে প্রকৃত ঘটনা বলার কোন সুযোগ কখনও পাইনি। বিচারক আমায় জানিয়েছিলেন মামলার শেষের দিকে আমাকে বলার পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু মামলার শেষে আমার সমস্ত বিবৃতি রেকর্ডও করা হল না, এমনকি কোর্ট যা রেকর্ড করেছে তাও আমাকে দেওয়া হল না। যদি ফোন নম্বরগুলি খুঁটিয়ে দেখা হত তাহলে কোর্ট জানতে পারত যে নম্বরগুলি সব STF-এর।
আমি আশা রাখি, সুপ্রীম কোর্ট আমার অসহায়তা এবং যে বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে আমি গেছি তা বিবেচনা করে দেখবে। STF আমাকে বলির পাঁঠা বানিয়েছিল যার নকশা তৈরি ও পরিকল্পনা করেছিল STF ও অন্যান্যরা যাদের আমি চিনি না। স্পেশাল পুলিশ নিশ্চিতভাবেই এই খেলার একটা অংশ কারণ প্রতিবার তাঁরা আমাকে চুপ থাকতে বাধ্য করেছিল। আমি আশা করি আমার বলতে না দেওয়া কথা শোনা হবে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি আবার আপনাকে আমার মামলাটি গ্রহণ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। সত্য উন্মোচিত হোক।
স্বাক্ষরঃ- মহম্মদ আফ্জল পিতা – হাবিবুল্লা গুরু ওয়ার্ড নম্বর – ৬; জেল নং – ১,তিহার; নয়াদিল্লী – ১১০০৬৪
Leave a Reply